২০ হাজার মানুষের বাস, চলাচলে নেই রাস্তা

আমিন ইসলাম জুয়েল আমিন ইসলাম জুয়েল , জেলা প্রতিনিধি ,পাবনা
প্রকাশিত: ১২:৩১ পিএম, ১৬ মার্চ ২০২৩

পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলার বেতুয়ান গ্রামে নেই কোনো রাস্তা। এ নিয়ে বছরজুড়েই ভোগান্তিতে পড়তে হয় গ্রামবাবীকে। নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করাসহ রোগীদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয় তাদের। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সংশ্লিষ্টদের সহায়তা চেয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

উপজেলার দিলপাশার ইউনিয়নের বেতুয়ান বিশাল গ্রামটি আকারে বিশাল। পূর্বপাড়া, উত্তরপাড়া, বাওনজানপাড়া, চালাপাড়া, খাঁপাড়া, নদীপাড়া, সরকারপাড়া, শুকনোপাড়া, দক্ষিণপাড়া মিলেই এই বেতুয়ান গ্রাম। গ্রামে প্রায় আট হাজার ভোটার আছেন। আর ২০ হাজার মানুষের বসতি। গ্রামজুড়ে রয়েছে ছয়টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দুটি মাদরাসা, ১২টি মসজিদ, একটি মন্দির। রয়েছে ওয়ার্ডভিত্তিক কমিউনিটি ক্লিনিক, গ্রামের মানুষের একমাত্র খেলাধুলার মাঠ ও ঈদগাহ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অন্য দশটি গ্রামে যা রয়েছে এখানে তার চেয়ে বরং বেশি কিছু রয়েছে। কিন্তু সবকিছু ম্লান হয়েছে রাস্তা নেই বলে। যুগ-যুগ ধরে এই ভোগান্তি চলে আসলেও গ্রামবাসী পায়নি একটি রাস্তা। সময়ের প্রয়োজনে গ্রামে সড়ক পথের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। কিন্তু গ্রামবাসীকে বাড়ির পাশ দিয়ে, জমির আইল দিয়ে হেঁটে যেতে হয়। ক্ষেতের ফসল ঘরে তোলা, হাটবাজারে যাওয়া আর রোগী হাসপাতালে নেওয়াতে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। কারণ গ্রামের মধ্যে কোনো যানবাহন ঢোকার মতো অবস্থা নেই।

সরেজমিনে কথা হয় বেতুয়ান গ্রামের বাসিন্দা শাকিল হোসেন, বেতুয়ান পূর্বপাড়ার ওমর আলী, বেতুয়ান শুকনোপাড়ার আলম সরকারসহ বেশ কয়েকজনের সঙ্গে। তারা কেউ কৃষক, কেউ ছাত্র, কেউ ব্যবসায়ী। এসব নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ জানান, অন্যের বাড়ির ওপর দিয়ে, আঙিনা দিয়ে যাতায়াত করতে হয় তাদের। অনেক নারী এতে বিব্রত ও ক্ষুব্ধ হন। কারও বকাঝকা, গালমন্দও শুনতে হয়।

ওমর আলী জানান, তাদের গ্রামের শেষ প্রান্তে রয়েছে বিশাল ফসলি মাঠ। এসব মাঠের ফসল ঘরে তুলতে তাদের রীতিমতো যুদ্ধ করতে হয়। এ বাড়ি, ও বাড়ির ফাঁক ফোঁকর দিয়ে ফসল ঘরে তোলা তাদের জন্য মহাকষ্টের।

গ্রামের বেশ কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি জানান, টাকা-পয়সা বা সম্পত্তি তাদের কম নেই। সামাজিক মর্যাদাও আছে। কিন্তু চলতি পথে সামাজিকভাবে ছোট হতে হচ্ছে। এর সমাধান কবে হবে তারা তা জানেন না।

সাবেক ইউপি সদস্য আক্কাস আলী বলেন, একজন মানুষ মারা গেলে তার খাটিয়া নিয়ে গোরস্থানে নেওয়ার মতো অবস্থাও নেই। অন্তঃসত্ত্বা নারী বা একজন বৃদ্ধ মানুষের দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার মতো কোনো পথ নেই। অনেক কষ্ট করে, অনেক সময় ব্যয় করে তাদের হাসপাতালে নিতে হয়। এছাড়া শিশু শিক্ষার্থীদের স্কুলে যেতে সীমাহীন কষ্ট করতে হয়।

বেতুয়ান গ্রামের কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি ফরিদুল ইসলাম বলেন, এই গ্রামে নেই কোনো রাস্তা। মাঠের মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক। রোগীকে আসতে হবে অন্যের জমির আইল দিয়ে।

তিনি বলেন, কেবল চলাচলের রাস্তা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে কাদা ও হাঁটু পানি পাড়ি দিয়ে রোগীদের আসতে হয়।

বেতুয়ান পূর্ব-দক্ষিণপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলেয়া বেগম বলেন, স্কুলটিতে শিক্ষার্থীদের আসার কোনো পথ নেই। অন্যের ফসলি জমির পাশ দিয়ে আসতে হয়। বৃষ্টি বা বর্ষা মৌসুমে শিক্ষার্থীদের ক্লাসমুখী করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি একটি ভোটকেন্দ্রও বটে। এখানে মানুষকে কষ্ট করে ভোট দিতে আসতে হয়।

তিনি বলেন, এ গ্রামে একটি রাস্তা হলে এসব সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।

স্থানীয় বাসিন্দা মানিক হোসেন বলেন, এত বিরাট একটি গ্রাম অথচ চলাচলের রাস্তা নেই। এটা কল্পনাও করা যায় না। শুধুমাত্র একটি যাতায়াতের পথ এই গ্রামের শিক্ষা, চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নসহ সার্বিক চিত্র পাল্টে দিতে পারে।

আব্দুল করিম নামে আরেক বাসিন্দা বলেন, সবকিছুই যেন আটকে আছে একটি রাস্তার অভাবে। দম বন্ধ করা একটি পরিবেশের মধ্যে আছে গ্রামবাসী।

দিলপাশার ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল হান্নান বলেন, এ গ্রামে রাস্তার জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রকল্প দাখিল করা হয়েছে। কিন্তু সেগুলো আলার মুখ দেখেনি।

এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ হাসান জানান, বেতুয়ান গ্রামবাসীর যোগাযোগের জন্য রাস্তাটি খুবই জরুরি। রাস্তা তৈরির বিষয়ে তার আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি নেই। এলাকার সংসদ সদস্যসহ স্থানীয় অন্য জনপ্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে পানি নিষ্কাশন পথ রেখে একটি প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে তিনি চেষ্টা করছেন।

এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।