ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন
বন্ধ বিশ্রামাগার, স্টেশন মাস্টার বললেন মাদকসেবীর আতঙ্ক
হেফাজতে ইসলামের তাণ্ডবে তছনছ হয়ে যায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন। দেড় বছর আগে এর সংস্কার কাজ শেষ হয়। পুরোদমে চলছে স্টেশনের কার্যক্রম। কিন্তু এখনো খোলা হয়নি প্রথম শ্রেণীর বিশ্রামাগার। ফলে ট্রেনের অপেক্ষায় প্ল্যাটফর্মেই দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। এতে তাদের নানা দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তবে স্টেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, মাদকসেবীদের আতঙ্কে এবং আয়ার অভাবে বিশ্রামাগারটির বন্ধ আছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে বিভাগীয় শহর চট্টগ্রামের পর সবচেয়ে বেশি যাত্রী হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া স্টেশনে। নিরাপদ যাতায়াতের জন্যে ট্রেনই বেশি পছন্দ যাত্রীদের। এ স্টেশনে আপ-ডাউনে ১৪টি ট্রেন যাত্রাবিরতি করে। এরমধ্যে ছয়টি আন্তঃনগর ট্রেন আছে। এসব ট্রেনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জন্য ৯৩৯টি আসন বরাদ্দ আছে। এর ৫০ শতাংশ কাউন্টারে এবং বাকি ৫০ শতাংশ অনলাইনে কাটতে হয়। তবে অনেকে দাঁড়িয়েও ট্রেনে ভ্রমণ করেন। এর জন্যও ভাড়া গুনতে হয়। এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩ হাজার যাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করেন। এ স্টেশন থেকে প্রতিমাসে কোটি টাকা আয় করে রেলওয়ে।
২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরকে কেন্দ্র করে হেফাজতে ইসলামের ব্যানারে প্রথম হামলা করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে। এ সময় স্টেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। স্টেশনের কোনো কক্ষই বাদ যায়নি হামলা ও অগ্নিসংযোগের হাত থেকে।
এ ঘটনার পর সব ট্রেনের যাত্রাবিরতি ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনে বাতিল করা হয়। ৮ মাস বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ১৩ নভেম্বর সংস্কার কাজ শেষে যাত্রাবিরতি শুরু হয়। তবে সংস্কার কাজ শেষে পুরোদমে রেলওয়ে স্টেশনের কার্যক্রম চললেও এর প্রথম শ্রেণীর বিশ্রামাগারটি খোলা হয়নি এখনো। অথচ সংস্কারের সময় প্রথম শ্রেণীর বিশ্রামাগারে তিনটি শৌচাগার, ব্রেস্ট ফিডিং সেন্টার ও দুটি স্টিলের বেঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। এর দরজার সামনে রাখা হয় বুকিংয়ের মালামাল।
বিশ্রামাগারটি বন্ধ থাকায় ট্রেনের অপেক্ষোয় প্ল্যাটফর্মেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয় যাত্রীদের। প্ল্যাটফর্মেই শিশুদের মায়ের বুকের দুধ খাওয়াতে হয়। তবে স্টেশন মাস্টারের কক্ষেও অনেক বসেন অনেক যাত্রী। সেখানে স্বল্প জায়গা হওয়ায় স্টেশন মাস্টারের টেবিলের ওপর বসে থাকতেও দেখা গেছে অনেককে। এ নিয়ে সমালোচনাও হচ্ছে।
হাবিবুর রহমান নামের ঢাকাগামী এক যাত্রী বলেন, ‘আমি ট্রেনে সবসময় যাতায়াত করি। কিন্তু গত দুবছরেও দেখিনি বিশ্রামাগারটি খোলা থাকতে। আমাদের সমস্যা নেই। কিন্তু নারী যাত্রীদের জন্য সমস্যা হয়।’
রাকিবুল ইসলাম নামের আরেক যাত্রী বলেন, ‘ট্রেন অনেক সময় দেরি করে এলে বিশ্রামাগারে বসে সময় কাটানো যেত। বিশ্রামাগারের ভেতরে তিনটি টয়লেট আছে, কিন্তু তা বন্ধ থাকায় স্টেশনের গণশৌচাগারে টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে। যদি তালাই লাগানো থাকে তাহলে সরকারি টাকা খরচ করে কেন এই বিশ্রামাগার বানানো হলো?’
ফাহমিদা নামের এক যাত্রী বলেন, ‘ছেলেদের তো কোনো কিছু হয় না। কিন্তু আমাদের সমস্যায় পড়তে হয়। বিশেষ করে টয়লেট ব্যবহারের বিষয়টি। আমরা তো যেনতেন স্থানে যেতেও পারি না।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলস্টেশন মাস্টার রফিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, প্রথম শ্রেণীর বিশ্রামাগারটির টয়লেটে দামি ফিটিংস ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিদিন কিছু মাদকসেবী ছেলে ট্রেনে আখাউড়ায় আসা যাওয়া করে। তারা খুব বিশৃঙ্খলা করে, তাই তাদের নিয়ে আতঙ্কে থাকতে হয়। বিশ্রামাগারটি যে রক্ষণাবেক্ষণ করবে আমাদের কোনো আয়া নেই।
এসজে/এএসএম