স্বপ্নপুরীতে জবি শিক্ষার্থী-স্থানীয়দের সংঘর্ষ: গ্রেফতার ৮

উপজেলা প্রতিনিধি উপজেলা প্রতিনিধি হিলি (দিনাজপুর)
প্রকাশিত: ০৭:১৩ পিএম, ১৩ মার্চ ২০২৩

দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ উপজেলার বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরীতে পিকনিক করতে গিয়ে হেনস্তার স্বীকার হয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনার প্রতিবাদ করায় স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষে এক শিক্ষকসহ ১১ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। বর্তমানে তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

তবে স্বপ্নপূরী কর্তৃপক্ষের দাবি, এটা ভুল বোঝাবুঝি। শিক্ষার্থীরাই কর্মচারীদের ওপর হামলা চালান।

রোববার (১২ মার্চ) সন্ধ্যার কিছু আগে স্বপ্নপূরীতে এ ঘটনা ঘটে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মারধরের ঘটনায় রোববার রাত দেড়টার দিকে জবি শিক্ষার্থী অনামিকা আক্তার বাদী হয়ে ৮ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে নবাবগঞ্জ থানায় মামলা করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ৮ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়।

গ্রেফতাররা হলেন, নবাবগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের মোস্তাফিজুর রহমানের ছেলে সবুজ মিয়া (২৯), কুশদহ গ্রামের আব্দুল গফুরের ছেলে রেজওয়ান আহমেদ (১৮), শিবপুর গ্রামের মশিউর রহমানের ছেলে আশরাফুল ইসলাম (১৭), খালিপপুর গ্রামের সূর্য মন্ডল কিসকুর ছেলে প্রভাষ কিসকু (৩৬), কুশদহ গ্রামের তৌহিদুল ইসলামের ছেলে আজিজুল হক (১৭), রহিমাপুরের রফিক উদ্দিনের ছেলে জাবেদুল ইসলাম (৪৫), খোশলামপুর গ্রামের সাইরুদ্দিনের ছেলে মানিকুল ইসলাম (৩২) ও উত্তর গোপালপুর গ্রামের সুলতান মিয়ার মেয়ে সালমা আক্তার (২১)।

আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে জবির ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জাহিদুল আলম, প্রান্ত, সাকিব, বিজন বসাক, তালহা, আরাফাত, আল মামুন, ওমর ফারুক, তাওহিদুল, মবিনুর, জিন্নাহ, আশরাফুজ্জামান, মকছেদুল ও বিনয় চন্দ্রের নাম জানা গেছে। এদের মধ্যে ১০ জনকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক (ভূগল) মহিউদ্দিন মাহী বলেন, জাবির ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ৭৩ জন শিক্ষার্থী চারদিনের শিক্ষাসফরে শনিবার উত্তরাঞ্চলে আসেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টরসহ ১০ জন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী। প্রথম দিনের জন্য তারা জয়পুরহাট জেলা শহরের একটি আবাসিক হোটেলে ওঠেন।

মামলার বাদী অনামিকা আক্তার বলেন, রোববার সফরের দ্বিতীয় দিনে দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় সমীক্ষার কাজ শেষে বিকেলে তারা বিনোদন কেন্দ্র স্বপ্নপুরীতে আসেন। সেখানে ভ্রমণ শেষে সন্ধ্যায় তারা বের হয়ে জয়পুরহাটে ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। বিনোদন কেন্দ্রে ভ্রমণ করার সময় একটি হর্স রাইডে এক ছাত্রী তার ব্যাগ ফেলে আসেন। পরে আরেক ছাত্রীকে নিয়ে তিনি ব্যাগ আনতে যান। এ সময় ওই রাইডের দায়িত্বে থাকা কর্মচারী সবুজ মিয়া তাদের উত্ত্যক্ত করেন। ওই দুই ছাত্রী বিষয়টি সহপাঠীদের জানালে তারা প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে বিনোদন কেন্দ্রের কর্মচারীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালান।

অনামিকা জানান, স্থানীয়দের হামলা ঠেকাতে গিয়ে তিনিও হামলার শিকার হন। অহতদের ওখান থেকে বের করে চিকিৎসা করাতে চাইলেও কর্মচারীরা বের হতে দেয়নি। বিষয়টি স্থানীয় আবতাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িতে জানালে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। আহত শিক্ষার্থীদের প্রথমে ফুলবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাদের দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আফতাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল হক বলেন, সেখান থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের দ্রুত উদ্ধার করা হয়। পরে আহতদের স্থানীয় ফুলবাড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

অপরদিকে বিনোদন কেন্দ্রের ব্যবস্থাপক মুক্তার হোসেন বলেন, আমাদের কাছে পুরো ঘটনার ভিডিও ফুটেজ আছে। তারা চাইলেই দেখতে পারে। আসলে তারাই (শিক্ষার্থীরাই) আগে এখানকার কর্মচারীদের গায়ে হাত তুলেছে। এরপর মূল গেটে গিয়ে আবারও তারা হামলা করলে স্থানীয় ব্যক্তিরা তাদের ওপর চড়াও হয়।

৮ আসামিকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে উল্লেখ করে নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস ওয়াহিদ বলেন, এ ঘটনায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অনামিকা বাদী হয়ে কয়েকজনের নাম উল্লেখ এবং বেশ কয়েকজনকে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় মামলা করেন। গ্রেফতারদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেফতারে চেষ্টা চলছে।

মাহাবুর রহমান/এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।