মুজিবশতবর্ষে বরাদ্দ পাওয়া ঘর থেকে আজও বঞ্চিত ২০ পরিবার

আসিফ ইকবাল আসিফ ইকবাল মেহেরপুর
প্রকাশিত: ০৪:৪১ পিএম, ০৫ মার্চ ২০২৩

মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে গাংনীতে প্রথম পর্যায়ের ৫টি ও দ্বিতীয় পর্যায়ের ১৫টি ঘর আজও বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি বরাদ্দপ্রাপ্ত পরিবারকে। আদালতে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিদ্যুৎ সংযোগ না দেওয়ায় ভূতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে সেখানে। মাদকাসক্ত ও চোর-ডাকাতদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে এখন জায়গাটি।

অন্যদিকে যাদের ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে তাদের কবুলিয়তনামা ও নামজারির কাগজপত্র না দেওয়ায় নানা ধরনের ঝুঁকিতে বসবাস করছেন তারাও।

আরও পড়ুন- ছাগলে বদলেছে গ্রামীণ অর্থনীতি

তবে উপজেলা প্রশাসন বলছে, আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সুরাহা না হলে তাদের কিছুই করার নেই। তবে যাদের কবুলিয়তনামা ও নামজারির কাগজ দেওয়া হয়নি তাদের শিগগির দেওয়া হবে।

গাংনী উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা গেছে, মুজিবশতবর্ষ উপলক্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে মটমুড়া ইউপির মোহাম্মদপুর গ্রামের এক নম্বর খতিয়ানের ৫৯২০নং দাগে ১৭ জন এবং ষোলটাকা ইউপির কাষ্টদহ গ্রামের তিনটি পরিবারকে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ৫টি এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৫টি ঘর দেওয়া হয়।

কিন্তু কাষ্টদহ গ্রামের তিনটি ঘর নির্মাণ ৮০ শতাংশ শেষ হওয়ার পর স্থানীয় এক প্রভাবশালী আদালতে মামলা করায় সেগুলোর নির্মাণকাজ বন্ধ। এছাড়া মোহাম্মদপুরের ১৭টি ঘর নির্মাণকাজ সমাপ্তির পর বৈদ্যুতিক সংযোগ দেওয়ার সময় বাধার মুখে পড়ে প্রশাসন। গ্রামের প্রভাবশালী আবুল মেলেটারী এক নম্বর খতিয়ানের ৫৯২০ দাগের জমি তার নিজের বলে দাবি করে আদালতে একটি মামলা করেন। আদালত মামলায় স্থগিতাদেশ দিলে নির্মাণ করা ঘর গৃহহীনদের কাছে হস্তান্তর করতে পারেনি প্রশাসন। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই লাখ টাকা।

আরও পড়ুন- অবৈধ ইটভাটা: জরিমানায় সীমাবদ্ধ অভিযান

এদিকে নির্মাণ করার পর ঘরগুলোতে কেউ বাস না করায় ঘরের অনেক জিনিস চুরি হয়েছে। স্থানীয় মাদকসেবীদের আড্ডাখানা ছাড়াও চোর-ডাকাতের আবাসস্থল হিসেবে পরিণত হয়েছে জায়গাটি। গৃহহীনদের নামে বরাদ্দ হলেও তারা ঘর না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

মোহাম্মদপুর গ্রামের সুজন ও তার স্ত্রী বিউটি জানান, তাদের নামে ঘর বরাদ্দ দেওয়া হলেও তারা ঘরে উঠতে পারেননি। ঘরের কোনো কাগজপত্র দেওয়া হয়নি। ভূতুড়ে অন্ধকার জায়গা। তাছাড়া স্থানীয় প্রভাবশালী আবুল মেলেটারী সেখানে না যাওয়ার জন্য শাসিয়ে গেছেন।

অন্যদিকে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ৪২টি পরিবারকে ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হলেও তাদের নামের কাগজপত্র ও নামজারির কাগজ দেওয়া হয়নি। প্রভাবশালীদের দখলে থাকা সরকারি জমিতে বরাদ্দ দেওয়া ঘরে থাকলেও কাগজপত্র বুঝিয়ে না দেওয়ায় অনেকেই নিরাপদ মনে করছেন না। প্রভাবশালীরা নানা ধরনের হুমকি-ধমকিও দিচ্ছেন।

মামলার বাদী আবুল হোসেন মেলেটারী জানান, তিনি ওই জমি লিজ নিয়েছেন সরকারের কাছ থেকে। এ জমিতে ভূমি অফিস অবৈধভাবে ঘর নির্মাণ করায় আদালতে মামলা করা হয়। পরে আদালত স্থগিতাদেশ দেন। বরাদ্দপ্রাপ্ত কোনো পরিবারকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন- মুকুলে ভরে গেছে আমবাগান, বাম্পার ফলনের আশা

জমি সংক্রান্ত জটিলতা থাকার পরও ওই জমিতে কেন গৃহনির্মাণ করা হলো এবং বরাদ্দ ঘরের মালিকদের কাগজপত্র না দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাদির হোসেন শামীম জানান, মোহাম্মদপুর এলাকায় ৫৯২০নং দাগের জমি নিয়ে কোনো মামলা রয়েছে কি না তা কারও জানা ছিল না। গৃহনির্মাণের পর আবুল মেলেটারী নামের একজন আদালতের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে আসায় সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া যায়নি এবং ঘরগুলো বরাদ্দপ্রাপ্তদের বুঝিয়ে দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে যারা এখনও কোনো কাগজ বা নামজারির কাগজ পাননি তাদের তাড়াতাড়ি কাগজ সরবরাহ করা হবে।

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনি খাতুন জানান, মামলা জটিলতায় গৃহ হস্তান্তর প্রক্রিয়া আটকে গেছে। আদালত বিষয়টি নিষ্পত্তি না করা পর্যন্ত উপজেলা প্রশাসনের কিছুই করার নেই।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।