বনরক্ষীদের অনিরাপদ জীবন

আসাদুজ্জামান মিরাজ আসাদুজ্জামান মিরাজ , উপজেলা প্রতিনিধি, কলাপাড়া (পটুয়াখালী)
প্রকাশিত: ০৭:৩২ পিএম, ০২ মার্চ ২০২৩

বনাঞ্চল রক্ষার্থে বনবিভাগের নিয়োজিত ফরেস্টাররা সার্বক্ষণিক পাহারা দিয়ে থাকেন বনসম্পদ। বিভিন্ন বনের দায়িত্বে থাকা ফরেস্টাররা অনেক সুবিধা ভোগ করলেও পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন ফাতরার বনের দায়িত্বে থাকা ফরেস্টারদের জীবন কাটে অনিরাপদে।

প্রাকৃতিক অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই বনটি কুয়াকাটা সৈকতের তিন নদীর মোহনা লাগোয়া বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলার বনাঞ্চল ঘেঁষা সৈকতজুড়ে গড়ে উঠেছে। তাই এই বন টেংরাগিরি, ফাতরার বন আবার সুন্দরবনের পূর্বাংশ নামেও পরিচিত।

হাজার হাজার পর্যটক ও জেলের নিরাপত্তা এবং বনসম্পদ রক্ষা করা ফরেস্টার আক্তারুজ্জামানের সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের।

বনরক্ষীদের অনিরাপদ জীবন

তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এই বনে আমাদের থাকার জন্য বেশ কয়েক বছর আগে নির্মাণ করা হয় একটি একতলা পাকা ঘর। যা এখন শুধু ধসে পড়ার অপেক্ষা। দেওয়ালের পলেস্তারা উঠেছে, ওপরে ওঠার কাঠের সিঁড়ি নষ্ট হয়ে গেছে, বৃষ্টির পানি আটকানোর জন্য ছাদের নিচে পলিথিন ব্যবহার করা হচ্ছে, দরজা জানালাও ভেঙে পড়েছে, রান্নাঘরটি বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে।

তিনি আরও বলেন, শুধু যে থাকার জায়গার সমস্যা, এমনটা না। এখানে হঠাৎ অসুস্থ হলে কিংবা বৈরী আবহাওয়ায় নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেওয়ার মতো কোনো নৌযানও নেই। জেলেদের নৌকার সহযোগিতায় সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ওষুধ কিনতে হয়। গভীর রাতে বিপদে পড়লেও কোনো সাহায্য মেলে না।

বনরক্ষীদের অনিরাপদ জীবন

আক্তারুজ্জামান জানান, প্রতি সপ্তাহে একবার বাজার করে পুরো সপ্তাহ চালাতে হয়। চায়লেও সবকিছু পাওয়া সম্ভব না। ঝড়-ঝাপটা হলে প্রচণ্ড ঝুঁকিতে থাকতে হয়। তারপরও পরিবারের মায়া ছেড়ে এভাবেই ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি বছরের পর বছর।

এই ফরেস্টারের দাবি, দ্রুত তাদের এই প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগুলো তৈরি করে যেন নিরবিচ্ছিন্ন সেবা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়।

বনরক্ষীদের অনিরাপদ জীবন

ওই ভ্রমণ স্পটটি ঘুরে দেখা যায়, পার্শ্ববর্তী জেলার আওতাধীন হলেও কুয়াকাটার পর্যটন কেন্দ্রের আওতাধীন ধরা হয় এই বনাঞ্চলকে। কারণ এই বনের পূর্বাংশে আন্ধারমানিক মোহনা, দক্ষিণাংশে বঙ্গোপসাগর, উত্তর ও পশ্চিমাংশে বিশাল বনাঞ্চল। আর এই প্রাকৃতিক সম্পদকে কেন্দ্র করে জেলে, পর্যটক, বনের পশু-পাখি, বনাঞ্চল সবকিছু নিয়ে কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

বনরক্ষীদের অনিরাপদ জীবন

আন্ধারমানির ট্যুরিজমের ব্যাবস্থাপনা পরিচালক কেএম বাচ্চু জাগো নিউজকে বলেন, আমরা পর্যটকদের নিয়ে প্রতিদিন এই বনে আসি। আমরা বছরের পর বছর দেখে আসছি এখানে দায়িত্বে থাকা বনবিভাগের সদস্যরা খুবই অবহেলিত। তাদের থাকার জন্য একটি নিরাপদ ঘর নেই, যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই, ঝড়-ঝাপটা মোকাবিলা করে বনরক্ষায় দায়িত্ব পালন করছেন তারা। এখানে বসবাস তাদের জন্য দিনদিন ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে।

বনরক্ষীদের অনিরাপদ জীবন

পটুয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগের সহকারী বন কর্মকর্তা তারিকুল ইসলাম বলেন, বনবিভাগের জন্য টেকসই ভবন ও কর্মকর্তাদের জন্য নিরাপত্তা সরঞ্জামাদিসহ বেশকিছু পরিকল্পনা নিয়ে এরইমধ্যে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। হয়তো চলতি বছরেই পাস হবে।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।