স্থায়ী বাজার নেই, অনলাইনে ঝুঁকছেন নার্সারি মালিকরা

আহসানুর রহমান রাজিব
আহসানুর রহমান রাজিব আহসানুর রহমান রাজিব , সাতক্ষীরা সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ১০:০০ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

উপযুক্ত মাটি ও আবহাওয়ার কারণে সাতক্ষীরায় সাত শতাধিক হাইব্রিড চারা তৈরির নার্সারি গড়ে উঠেছে। এসব নার্সারিতে বছরে শত কোটি টাকার চারা কেনাবেচা হলেও নেই কোনো নির্দিষ্ট বাজার। তবে অনলাইনে চারা বিক্রি করে অনেকে ভালো সাড়া পাচ্ছেন।

শহরতলির পুরাতন সাতক্ষীরা ও কুখরালি এলাকায়ই রয়েছে শতাধিক নার্সারি। এখানে ফুল ও নানা জাতের দেশি-বিদেশি জাতের ফলের চারা উৎপাদন হচ্ছে। এসব নার্সারি থেকে চারা কিনে ভ্যানে ফেরি করে বিক্রি করেন অনেকে। ভ্যান থেকে গাছের চারা সর্বনিম্ন ১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।

ষাটের দশকে সাতক্ষীরায় নার্সারি ব্যবসার যাত্রা শুরু হয়। দেশভাগের পর ভারত থেকে আসা চারা তৈরির কারিগররা এখানে বসতি স্থাপন করেন। বাড়ির আঙিনায় গড়ে তোলেন ছোট ছোট নার্সারি। তখন নদী পথে নৌকায় সহজে পরিবহনের সুযোগ থাকায় বিভিন্ন গ্রামীণ মেলা ও হাটবাজারে এসব চারা বিক্রি করতেন তারা। তবে চাহিদা বাড়ায় স্বাধীনতার পর সাতক্ষীরায় বাণিজ্যিকভাবে নার্সারি ব্যবসা শুরু হয়।

আরও পড়ুন: ৭ হাজার টাকায় নার্সারি করে কোটিপতি ইকবাল

বর্তমানে সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া ও তালা উপজেলার বেশকিছু এলাকায় গড়ে উঠেছে সাত শতাধিক বাণিজ্যিক নার্সারি। এখানে আম, কমলা, মাল্টা, কুলসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি প্রজাতির ফুল, ফল ও হাইব্রিড জাতের কলম চারার উৎপাদন ও বিপণন করা হয়। এ খাতে কর্মসংস্থানও হয়েছে কয়েক হাজার মানুষের। তবে উৎপাদিত চারা বিক্রির জন্য জেলার কোথাও নির্দিষ্ট কোনো বাজার নেই। ফলে চারার ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন নার্সারি মালিকরা।

এখানকার নার্সারির মালিক ও বিক্রয়কর্মীরা জানান, সাতক্ষীরার কলম করা আমগাছের চারা সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়। দেশি-বিদেশি প্রজাতির লেবু, কামরাঙা, মাল্টা, কতবেল, পেয়ারা, আমলকী, চেরি, আমড়া, বরইসহ বিভিন্ন ফলের চারার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ফুলের মধ্যে গোলাপ বেলি, জুঁই, জবা, চামেলি, কাঠগোলাপ, হাসনাহেনা, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা, কসমস, পিটুনিয়া বেশি জনপ্রিয়। এছাড়া পুদিনা, তুলসী অ্যালোবেরাসহ বিভিন্ন ঔষধি গাছেরও চাহিদা বাড়ছে। আকারভেদে এসব গাছের দাম ১০ টাকা থেকে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। এছাড়া ইনডোর বা ঘরসজ্জার জন্য ক্যাকটাস, অর্কিড, সাকুল্যান্ট, বিভিন্ন বনসাই, পাইকাস, মনস্টেরা, মানিপ্ল্যান্ট, বিভিন্ন প্রজাতির ফার্ন, এরিকা পাম, অগ্নিশ্বর, অ্যাগলোনিমা ইত্যাদির চাহিদা আছে।

jagonews24

কুখরালি এলাকার নার্সারি মালিক আব্দুল্লাহ গাজী জাগো নিউজকে বলেন, সাতক্ষীরায় শত শত নার্সারি থাকলেও চারা বিক্রির জন্য কোনো বাজার নেই। আগে শহরের পলাশ পোল এলাকায় কয়েকটি নার্সারি ছিল। তবে এখন শহরে বড় বড় মার্কেট ও ভবন হওয়ায় একটি নার্সারির চারার রাখার জন্য যে পরিমাণ জায়গার দরকার সেই পরিমাণ জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না।

নার্সারি ব্যবসায়ী ফজর আলী জাগো নিউজকে বলেন, আমি ভ্যানে করে চারা বিভিন্ন স্কুলের সামনে বিক্রি করি। চারার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। ভ্যান থেকেই প্রতিদিন আমার কয়েক হাজার টাকার গাছের চারা কেনা-বেচা হয়। অনেক চারা নার্সারিতে পড়ে আছে। বাজারে এসব চারা বিক্রি করতে না পারায় নার্সারি মালিকরা চারার সঠিক দাম পাচ্ছেন না।

নার্সারি মালিক আব্দুল কাদের জাগো নিউজকে বলেন, ভালো আবহাওয়া ও দক্ষ কারিগর থাকায় এখানে অনেক আগে থেকে ভালো মানের গাছের চারা উৎপাদন হয়। এক সময় বিভিন্ন মেলায় সাতক্ষীরার নার্সারির গাছের চারা বিক্রি হতো। বর্তমানে হিমসাগর, ল্যংড়া, আম্রপালি আমের চারা ও মাল্টাসহ বেশ কয়েক জাতের লেবুর চারার চাহিদা রয়েছে। দেশের বিভিন্ন এলাকার এসব চারা বিক্রি হয়। তবে বাজার না থাকায় বাইরের পাইকারি ক্রেতারা কয়েকটি নার্সারি থেকে সরাসরি এসব চারা সংগ্রহ করছে। অনেক নার্সারি মালিক অনলাইনে চারার ব্যবসা করছে।

আরও পড়ুন: নার্সারি থেকে বাবা-ছেলের মাসে আয় লাখ টাকা

অনলাইনে চারা বিক্রেতা রাহাত রাজা জাগো নিউজকে জানান, সাতক্ষীরার আম, লেবুসহ কয়েকটি জাতের ফলের চারার প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে প্রতারক চক্র ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। এ জন্য অনেকে অনলাইনে চারা কেনা-বেচা করতে আগ্রহী নয়। তারপরও অনেকে আমাদের কাছ থেকে কুরিয়ারের মাধ্যমে চারা সংগ্রহ করছেন। এটিও এখন চারা বিক্রির একটি বড় মাধ্যম।

সাতক্ষীরা জেলা নার্সারি মালিক সমিতির সভাপতি নুরুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, সাশ্রয়ী দাম ও ভালো মানের জন্য সাতক্ষীরার কলম করা আম ও কয়েকটি জাতের লেবুর চারার সুখ্যাতি রয়েছে। এছাড়া বনজ, ফলজ, ওষুধি গাছের চারার চাহিদা সবচেয়ে বেশি।

তিনি বলেন, আমরা নির্দিষ্ট একটি স্থানে চারার বাজার স্থাপনের জন্য জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগে একাধিকবার আবেদন করেছি। তবে এখনও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

আরও পড়ুন: মিজানের স্বপ্নের নার্সারি

সাতক্ষীরা হর্টিকালচার সেন্টারের ঊর্ধ্বতন উদ্যানতত্ত্ববিদ কৃষিবিদ মো. আমজাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের উপকূলীয় এলাকার পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে বনায়নের বিকল্প নেই। এ বনায়নের জন্য চারা উৎপাদনে নার্সারিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এ জন্য বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে নার্সারি স্থাপনের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।

এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. জামাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, চাহিদা থাকায় সাতক্ষীরায় অনেকে নার্সারিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এ জন্য নার্সারি করতে আগ্রহীদের কৃষি বিভাগ থেকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়। জেলার সব নার্সারির একটি ডাটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটি সম্পন্ন হলে তাদের সব ধরণের সহযোগিতা করা হবে।


আরএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।