নবীন-প্রবীণদের একসঙ্গে শৈশবে নিয়ে গেলো ‘কাদাখোঁচা’
শুক্রবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল আটটা থেকে নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদের তীরে একে একে জড়ো হতে থাকেন নানা বয়সী মানুষ। সবার গায়ে একই পোশাক। করছেন ভাববিনিময়, তুলছেন ছবি। আর তীরে নোঙর করা আছে ছোট-বড় দুটি সুসজ্জিত ইঞ্জিনচালিত ট্রলার। একে একে সবাই উঠলেন ট্রলারে।
ঘড়ির কাঁটায় ঠিক ১০টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে ছেড়ে যায় ট্রলার দুটি। আর বিকেল তিনটায় খুলনার বটিয়াঘাটায় রূপসা নদীর চরে গিয়ে থামে। ট্রলার থামার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয়ে যায় ছোটাছুটি। নবীন-প্রবীণ সব মিলেমিশে করছেন কাদা মাখামাখি। সবাই যেন ফিরে গেছেন শিশুকালে। খেলছেন কাবাডিও। শৈশবের এমন স্মৃতিতে ফিরতে সারাবছর এই দিনটির দিকে চেয়ে থাকেন কাদাখোঁচার সদস্যরা।
কাদাখোঁচা যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া পৌরসভার সব শ্রেণির লোকজনদের নিয়ে একটি ভ্রমণপ্রেমী সংগঠন। শৈশবের স্মৃতিতে ফিরে যেতে ২০১২ সালে কাদাখোঁচা নামে এই ব্যতিক্রমী ভ্রমণবিষয়ক সংগঠনের উদ্যোগ নেয় অভয়নগরের কয়েকজন যুবক। ১৬ সদস্য নিয়ে এর পথচলা শুরু হয়। সেসময় অনেকে এটিকে পাগলামি ভাবলেও এখন ইতিবাচকভাবেই দেখছেন সবাই। প্রতিবছরই বাড়ছে কাদাখোঁচার সদস্য সংখ্যা। একযুগে সেই সংখ্যা প্রায় তিনশ জনে এসে ঠেকেছে। যান্ত্রিক জীবন থেকে বেরিয়ে উন্মুক্ত চিন্তা ও মাটির স্পর্শ পেতে এই আয়োজন বলে জানালেন আয়োজকরা। এবার যুগপূর্তি উপলক্ষে ভ্রমণের আগে বেলুন ওড়ানো, কেক কাটা, বর্ণাঢ্য র্যালিসহ নানা আয়োজন করেন কাদাখোঁচার সদস্যরা।
ষাটোর্ধ্ব আলতাফ হোসেন পেশায় ব্যবসায়ী। সেই কবে জীবন থেকে শৈশব ছুটি নিয়েছে। কাজ ও নাগরিক ব্যস্ততায় ভুলতে বসেছিলেন নিজের মনের ভেতরে পুষে রাখা সবুজ শৈশব। তাইতো সুযোগ পেয়েই এদিন ভুলে যান তার বয়স। তার মতো অনেকেই নবীন-প্রবীণের বয়সের সংখ্যা ভুলে মাতেন কাঁদা ছোড়াছুড়িতে। তিনি বলেন, এই আয়োজনে যখনই মাতি তখন আমি শৈশবে ফিরে যাই। মনে হয় পুনর্জীবন লাভ করলাম।
সংগঠনের সদস্য আবদুল্লাহ আল মারুফ বলেন, আমাদের অনেক বয়স হয়ে গেছে। প্রতিবছর আমরা এই দিনটার জন্য বসে থাকি। কখন আমরা শৈশবে ফিরে যাব।
সম্রাট হোসেন নামে আরেক সদস্য বলেন, এ এক অন্যরকম উৎসব। নবীন-প্রবীণ একসঙ্গে ছুটছে শৈশবের টানে। নেচে-গেয়ে ট্রলারে ভেসে চলেছি নদীর বুক চিরে। সবাই যেন হারিয়ে যেতে চান প্রকৃতির মাঝে। একদিনের জন্য ফিরে যেতে চান শৈশবের সেই মধুর স্মৃতিতে।
সংগঠনের সভাপতি আসাদুজ্জামান জনি জানান, কাজের সুবাদে একেকজন একেক জায়গায় থাকেন। সেই কবে জীবন থেকে শৈশব ছুটি নিয়েছে। কাজ ও নাগরিক ব্যস্ততা আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছেন সবাই। সময়-সুযোগ হয় না সবার একসঙ্গে হওয়ার। সবাইকে একসঙ্গে করতে কাদাখোঁচা নামে এই সংগঠনটি। মূলত যান্ত্রিক জীবন থেকে বেরিয়ে উন্মুক্ত চিন্তা ও মাটির স্পর্শ পেতে এই আয়োজন। যার ফলে একদিনের জন্য হলেও তারা সবাই চলে যান মাটির টানে। মেতে ওঠেন শৈশবের খেলাধুলায়।
আর একযুগ ধরে চলা এই সংগঠন যুবসমাজের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে বলে মনে করছে সচেতন মহল। নওয়াপাড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি নজরুল ইসলাম মল্লিক বলেন, প্রথমে এই সংগঠনটির কার্যক্রমকে সবাই পাগলামি বলতো। এখন এটি নওয়াপাড়ার ঐতিহ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে তারা যুবসমাজকে মাদকমুক্ত করতে সংগঠিত করতে পেরেছে। অস্থির সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে যুবসমাজ যখন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তখনই এই সংগঠন যে ভূমিকা রাখছে তা সত্যিই প্রশংসিত।
মিলন রহমান/এমআরআর/এমএস