এক গ্রামে সাত ভাষাসৈনিক, স্মরণে নানা আয়োজন
বাগেরহাট সদর উপজেলার কাড়াপাড়া ইউনিয়নের বাদেকাড়াপাড়া গ্রাম। এই গ্রামেই জন্ম একুশে পদকপ্রাপ্ত ড. হালিমা খাতুনসহ সাত ভাষাসৈনিকের। কিন্তু একটি গ্রামে সাতজন ভাষাসৈনিকের বাড়ি থাকলেও এতদিন বিষয়টি সামনে আসেনি।
এবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সাত ভাষাসৈনিক স্মরণে বাদেকাড়াপাডা পল্লী মঙ্গল সমিতির উদ্যোগে নানা কর্মসূচি পালন করা হয়।
এ উপলক্ষে মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকালে ভাষাসৈনিকদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপরেই শহীদ মিনারে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন ভাষাসৈনিকদের পরিবারের সদস্যরা। পরে স্থানীয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও শহীদ দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনাসভা হয়। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক বুলবুল কবির। এসময় কাড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিতুর রহমান পল্টন, বাগেরহাট সদর হাসপাতালের কর্মকর্তা মোল্লা নজরুল ইসলাম, বাদেকাড়াপাডা পল্লী মঙ্গল সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান বুলু, নারী ইউপি সদস্য আবেদা সুলতানা, ইউপি সদস্য আব্দুল আলিম, ড. হালিমা খাতুনের ভাইয়ের ছেলে মো. তানজির হোসেনসহ এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন। পরে শিশুদের অংশগ্রহণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়।
আয়োজকরা বলেন, ভাষাসৈনিকদের স্মরণে করা এই অনুষ্ঠান মাতৃভাষার প্রতি নতুন প্রজন্মের ভালোবাসা সৃষ্টি করবে। আমরা নিয়মিত এই ধরনের অনুষ্ঠান করে যাব। তবে সরকারিভাবে বা রাষ্ট্রীয়ভাবে যদি সাত ভাষা সৈনিকের গ্রামে অনুষ্ঠান করা হয়, তাহলে আমরা আরও ভালোভাবে করতে পারব। এই কর্মসূচি ভবিষ্যতে রাষ্ট্রীয় কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত করার আবেদন জানান তারা।
ওই গ্রামের সাত ভাষাসৈনিক হলেন, একুশে পদকপ্রাপ্ত দেশ বরেণ্য ভাষা সৈনিক অধ্যাপক ড. হালিমা খাতুন, সাবেক ছাত্র নেতা শেখ আশরাফ হোসেন, এ জেড এম দেলোয়ার হোসেন, শেখ নজিবর রহমান, শেখ মারুফুল হক, শেখ ইজাবুল হক, শহীদ বুদ্ধিজীবী শেখ হাবিবুর রহমান। তাদের মধ্যে শেখ নজিবর রহমান মুক্তিযুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন।
কাড়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিতুর রহমান পল্টন বলেন, ভাষাসৈনিকরা জাতির সূর্য সন্তান। ভাষার জন্য জীবন বাজি রেখেছিলেন তারা। তাদের আন্দোলনের কারণেই আমরা আজ মাতৃভাষায় কথা বলি। তাদের স্মরণীয় করে রাখতেই আমাদের এই আয়োজন।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক বুলবুল কবির বলেন, বাঙালি জাতির জন্য ভাষা আন্দোলন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি অধ্যায়। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমেই স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলনের সূত্রপাত হয়েছে। এক গ্রাম থেকে সাতজন ভাষা আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেছেন, এটা অনেক গর্বের বিষয়। এর মধ্যে ড. হালিমা খাতুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। তিনি একজন জনপ্রিয় শিশু সাহিত্যিকও ছিলেন। ড. হালিমা খাতুনের পাশাপাশি অন্যরাও নানা ক্ষেত্রে সমাজ বিনির্মাণে অবদান রেখেছেন।
এই গ্রামের ভাষাসৈনিকসহ দেশের যারা ভাষা সৈনিক রয়েছেন তাদের সবাইকে তালিকাভুক্ত করে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের মতো সম্মানিত করার দাবি জানান তিনি।
এমআরআর/জেআইএম