জমানো টাকায় ২০ শহীদ মিনার বানালো শিশুরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি বরিশাল
প্রকাশিত: ১১:১৫ এএম, ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
জমানো টাকা শহীদ মিনার বানিয়েছে শিশুরা

শিশুদের মধ্যেও শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজনের যেন কমতি নেই। বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় প্রতি বছর এ দিনে শিশুরা নানা আয়োজনে দিনটি উদযাপন করে। এরই ধারাবাহিকতায় বরিশাল নগরে কীর্তনখোলা নদীর তীরঘেঁষা রসুলপুর কলোনিতে প্রায় ২০টি শহীদ মিনার তৈরি করেছে শিশুরা। কয়েকটি গ্ৰুপে ভাগ হয়ে জমানো টাকায় শিশুরা শহীদ মিনারগুলো তৈরি করেছে। এ নিয়ে শিশুদের অভিভাবকদের মধ্যেও দেখা গেছে বেশ উৎসাহ উদ্দীপনা।

কোনো কোনো জায়গায় শিশুদের উদ্যোগে পাঁচ টাকা দশ টাকা করে চাঁদা তুলে ও ঘরে ঘরে থেকে চাল-ঢাল উঠিয়ে আয়োজন করা হয় খিচুড়ির। আবার রান্না শেষে বিতরণ করা হয় সবার

এমন আয়োজন প্রতিবছর করা হয় বলে জানান সাকিব নামের এক শিশুর মা মনোয়ারা বেগম। তিনি বলেন, বেশ কিছু বছর ধরেই এ আয়োজন করা হচ্ছে এই কলোনিতে। একুশে ফেব্রুয়ারিকে ঘিরে এ কলোনির সবার মধ্যে অন্যরকম এক আনন্দ বিরাজ করে। আর এ আয়োজনে শিশুদের পাশাপাশি বড়রাও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পুরো আয়োজনকে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যায় সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট। তারা শহীদ মিনার নির্মাণ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে শিশুদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণের আয়োজন করে থাকে। ফলে শিশুরাও তাদের কাজে পায় ভিন্ন এক অনুভূতি।

স্থানীয়রা জানান, মূলত ১০-১২ বছর আগে শহীদ মিনার নির্মাণের এমন আয়োজনের উদ্যোগ নেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের নেত্রী ডা. মনীষা চক্রবর্তী। তার হাত ধরেই এই কলোনিতে এমন আয়োজন শুরু হয়। এরপর থেকে একুশে ফেব্রুয়ারি মানেই কীর্তনখোলা নদীর তীরে রসুলপুর কলোনিতে ভিন্ন এক আয়োজন। পুরো আয়োজনটি শিশু কেন্দ্রিক হলেও ছোট-বড় সবাই এতে সহায়তা করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা চুন্নু বলেন, শিশুরা শহীদ মিনার নির্মাণের এ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য একুশে ফেব্রুয়ারির এক সপ্তাহ আগে থেকেই টাকা জমাতে শুরু করে। সেই জমানো টাকা দিয়ে গাঁদা ফুল ও রঙিন কাগজ কিনে সাজায় শহীদ মিনার।

লাবনী নামে ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রী জানায়, মনীষা আপা আমাদের এ শহীদ মিনার দেখে পুরস্কার দেয়। শুধু পুরস্কার নয় শহীদ মিনার সম্পর্কেও ধারণা দেয়।

এ বিষয়ে সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ) বরিশাল জেলা কমিটির বর্তমান সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্তী জাগো নিউজকে বলেন, শিশুদের উৎসাহ দিতেই ১২ বছর ধরে তার এমন আয়োজন। কলোনির শিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করছি। এ আয়োজন ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, রসুলপুর কলোনি এটি দরিদ্র এলাকা। এখানকার শিশুরা প্রতিকূল পরিবেশে বেড়ে ওঠে। এখানে মাদকের, সন্ত্রাসের বিস্তার আছে এবং নানা ধরনের অন্ধকার জগতের হাতছানি এলাকাগুলোতে আছে। আমরা মনে করি, এ ধরনের আয়োজন শিশুদের মানসিক বিকাশ, বেড়ে ওঠা, দেশপ্রেম সৃষ্টির লক্ষ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

এসজে/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।