বান্দরবানের ৪২২ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার
বান্দরবানের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই শহীদ মিনার। তাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ জাতীয় দিবসগুলোতে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারে না প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, বান্দরবান জেলায় ৪৩৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও হাতেগোনা কয়েকটিতে রয়েছে শহীদ মিনার। এ কারণে জেলা বা উপজেলা শহরের শিক্ষার্থীরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে পারলেও দুর্গম বা প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা সে সুযোগ পায় না। ফলে মাতৃভাষার জন্য লড়াইয়ের পটভূমি, শহীদ দিবসের মর্যাদা এবং বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও আত্মদানকারীদের সম্পর্কে জানার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা।
বান্দরবান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর কার্যালয়ের তথ্যমতে, জেলায় ৪৩৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ৩৮ হাজার শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। তবে এরমধ্যে মাত্র ১৩টি বিদ্যালয়ে আছে শহীদ মিনার। বাকি ৪২২টি বিদ্যালয়ে নির্মিত হয়নি শহীদ মিনার।
বান্দরবান সদর উপজেলার আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী অর্পা মুখার্জি বলে, আমরা বইয়ে শহীদ মিনার দেখেছি কিন্তু আমাদের স্কুলে শহীদ মিনার না থাকায় কখনো শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারিনি।
খামতাংপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পাহ্লা খিয়াং বললো, রোয়াংছড়িতে একটি শহীদ মিনার আছে কিন্তু এই স্কুলে কোনো শহীদ মিনার নেই। যে কারণে ২১ ফেব্রুয়ারি বা ১৬ ডিসেম্বরে শহীদ মিনারে ফুল দিতে পারি না।
বান্দরবানের আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. জাহেদুল আলম বলেন, দেশের ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় ইতিহাস সম্পর্কে জ্ঞান লাভের জন্য প্রতিটি স্কুলে শহীদ মিনার বা স্মৃতিসৌধ থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পৌর এলাকার পাশে যেসব স্কুল রয়েছে জাতীয় দিবস পালনে তাদের সমস্যা না হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলগুলোতে এ দিবস পালনে কিছুটা সমস্যা দেখা যায়।
ভাষা আন্দোলন ও দেশের মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে প্রতিটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার বা স্মৃতিসৌধ থাকাটা জরুরি বলে মনে করছেন তিনি।
বান্দরবান শহর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সোহেল জানান, তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শহীদ মিনার না থাকলেও কাছাকাছি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থাকায় জাতীয় দিবস পালনে তেমন সমস্যা হয় না। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলের স্কুলগুলোতে কিছুটা সমস্যা হয়।
এ বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সফিউল আলম বলেন, অধিকাংশ স্কুলে শহীদ মিনার না থাকলেও জাতীয় দিবসে স্কুলগুলো খোলা এবং সব স্কুলে জাতীয় দিবসের তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা হয়।
তিনি আরও বলেন, দুই বছর আগে শহীদ মিনার সংযুক্ত বিদ্যালয়ের তালিকা নিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। যেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই, সেসব বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ পেলে শিগগির বান্দরবানের বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করা হবে।
এমআরআর/এএসএম