বিলুপ্তপ্রায় রেডিও কামালের নিত্যসঙ্গী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফরিদপুর
প্রকাশিত: ০৬:৫১ পিএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

একটা সময় ছিল প্রায় প্রতিটি বাড়িতে, চায়ের দোকান, কল-কারখানায়, হোটেলে রেডিও বাজতে শোনা যেতো। খবরাখবর শোনার পাশাপাশি বিনোদনের মাধ্যম ছিল রেডিও। তবে এখন আর সচরাচর রেডিও চোখে পড়ে না। বিভিন্ন আধুনিক ডিভাইসের বদৌলতে হারাতে বসেছে যন্ত্রটি।

তবে এখনো রেডিওর ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার পৌরসদরের ব্যবসায়ী কামাল বিশ্বাস (৩৩)। দোকানদারি করার পাশাপাশি নিয়মিত রেডিও শোনা তার নেশায় পরিণত হয়েছে।

কামাল বিশ্বাস বোয়ালমারী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আলম বিশ্বাসের ছেলে। স্ত্রী ও তিন ছেলে নিয়ে তার সংসার। ১৯ বছর ধরে মুদিদোকান করে সংসার চালাচ্ছেন।

পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের আঁধারকোঠা চৌরাস্তায় কামাল বিশ্বাসের মুদিদোকান। সরেজমিন দেখা যায়, দোকানের বেচাকেনায় ব্যস্ত কামাল বিশ্বাস। তার একটি হাত নেই। অন্য হাতটি দিয়েই সব কাজ সারছেন। দোকানের একপাশে তাকের ওপর মিডিয়াম সাউন্ডে রেডিও বাজছে। দোকানে ক্রেতাদের সামলানো পাশাপাশি মনোযোগ দিয়ে রেডিও শুনছেন কামাল। যতক্ষণ দোকান খোলা থাকে ততক্ষণ চলে রেডিও।

বিলুপ্তপ্রায় রেডিও কামালের নিত্যসঙ্গী

কামাল বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০০৩ সালে চালের মিলে এক দুর্ঘটনায় বাম হাতটি হারান কামাল। এরপর থেকে সব কাজ ডান হাত দিয়ে করেন। ওই একটি হাত দিয়েই দোকান সামলাচ্ছেন তিনি।

কামাল বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘শৈশবে রেডিও শুনতাম। সেই থেকে নেশা। ইন্টারনেট, ফেসবুক, মোবাইল, টিভি দেখি না। এখনো দিনরাত রেডিও শুনি। প্রতিদিন সকাল ৮ থেকে রাত প্রায় সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দোকানদারি করি। আর এ সময় পর্যন্ত একটানা রেডিও চলতে থাকে। দোকান খোলা থাকলে রেডিও-ও খোলা থাকে। এভাবে প্রায় ২০ বছর চলছে।’

আরও পড়ুন: বিলুপ্তপ্রায় কৃষি উপকরণের সংগ্রহশালা ‘গাঁও গেরাম ভিলেজ পার্ক’

তিনি বলেন, ‘রেডিওটির বয়সও প্রায় ১০ বছর। আগে ছোট একটি রেডিওর দাম ছিল ২০০ টাকা। এখন হাজার টাকা হলেও নতুন একটি রেডিও পাওয়া যায় না। দোকানও নেই। মেকানিকও পাওয়া যায় না। মাঝে মধ্যে রেডিওটি নষ্ট হলে চরম বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কারণ পুরো জেলায় খুঁজেও রেডিওর দোকান পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ ‘

বিলুপ্তপ্রায় রেডিও কামালের নিত্যসঙ্গী

‘কিছুদিন আগে রেডিওটির সামান্য সমস্যা দেখা দেয়। তখন পুরো জেলা তন্ন তন্ন করে খুঁজেও একটি যন্ত্র পাওয়া যায়নি। পরে এক ব্যবসায়ীকে দিয়ে অর্ডার করে আনতে হয়েছে,’ যোগ করেন কামাল বিশ্বাস।

স্থানীয় ব্যবসায়ী ভরত রাজবংশী জাগো নিউজকে বলেন, ‘পুরো উপজেলায় একমাত্র কামালের দোকানেই দিনরাত মিলে ১৪-১৫ ঘণ্টা একটানা রেডিও চালু থাকে। এভাবে প্রায় ২০ বছর ধরে দেখে আসছি। রেডিওতে প্রচারিত খবর, অনুরোধের আসর, ছায়াছবির গান, যাত্রাপালা, নাটকসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান কামালের মুখস্থ।’

আরেক বাসিন্দা নিরাপদ কর্মকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাসায় ইন্টারনেট, মোবাইল, স্মার্ট টিভি থাকলেও সময় করে রাত ১০টার সংবাদ কামালের দোকানে বসে রেডিওতে শুনে থাকি। আরও অনেকেই এখানে রেডিওতে খবর শুনতে আসেন।’

বিলুপ্তপ্রায় রেডিও কামালের নিত্যসঙ্গী

পার্শ্ববর্তী ছোলনা গ্রামের বাসিন্দা ও ফরিদপুর জজ কোর্টের আইনজীবী শেখ সেলিমুজ্জামান। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রায় দিনই রাতে অফিস থেকে ফেরার সময় দোকান থেকে সদাই নিয়ে যাওয়ার সময় রেডিও বাজতে দেখি। যা জেলায় সচরাচর চোখে পড়ে না।’

পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আ. সামাদ খান জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে রেডিও যেন বিলুপ্তির পথে। নতুন রেডিওর দোকানের পাশাপাশি শ্রোতাও হারিয়ে গেছে। তবে অদম্য কামাল বিশ্বাস একজন নিয়মিত রেডিও শ্রোতা।

এন কে বি নয়ন/এসআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।