‘লোকমুখে শুনি নতুন সেতু পাস হয়েছে, বাস্তবে দেখি না’

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফরিদপুর
প্রকাশিত: ০৫:১৭ পিএম, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
জোড়াতালি দিয়ে চলছে ৩২ বছরের সেতু

ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা সদরে কুমার নদের ওপর ৩২ বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে স্টিলের তৈরি সেতু। তবে জোড়াতালি দিতে দিতে পুরোনো এ সেতুর অবস্থা জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। বিকল্প না থাকয় ঝুঁকি জেনেও প্রতিদিন কয়েকশ যানবাহন আর হাজারো মানুষ সেতু পারাপারে বাধ্য হচ্ছেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নতুন সেতুর কথা জানালেও জোড়াতালি দিয়ে পুরোনো সেতুটি সচল রাখছে সড়ক বিভাগ। মৃত্যুঝুঁকি মাথায় নিয়ে সেতু পারাপার হলেও নতুন সেতু আর আলোর মুখ দেখছে না স্থানীয়রা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে উপজেলার সদরের জুঙ্গুরদী এলাকায় কুমার নদের ওপর বেইলি সেতুটি নির্মাণ করা হয়। যার দৈর্ঘ্য ৯৭ মিটার ও প্রস্ত ৬ মিটার। নগরকান্দা চাঁদহাট এলাকায় ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সঙ্গে সংযোগকারী তালমা-চাঁদহাট সড়কে এর অবস্থান। পদ্মা সেতু চালুর পর এ সড়ক ও সেতুটি কয়েকটি জেলার মানুষের কাছে জনগুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

২০১৮ সালের দিকে সেতুটিতে শুরু হয় জোড়াতালি। এরপর ২০২১ সালে বালুভর্তি একটি ট্রাকসহ সেতুটি ভেঙে পড়ে। তখন কিছুদিনের জন্য যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। জোড়াতালি দিয়ে মেরামতের পর আবারও সেতু সচল করা হয়। এরপরও বেশ কয়েকবার বিভিন্ন জায়গায় মেরামত করা হয়।

‘লোকমুখে শুনি নতুন সেতু পাস হয়েছে, বাস্তবে দেখি না’

নগরকান্দা পৌরসভার বাসিন্দা নিজাম উদ্দিন খান বলেন, ‘২০২০ সালে সেতুটি ভেঙে পড়ে। বিভিন্ন জায়গায় দেড় শতাধিক জোড়াতালি দিয়ে মেরামত করা হয়। প্রতিদিন কয়েকশ ভারী যানবাহনসহ হাজারো মানুষ ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা সেতু পারাপার হচ্ছেন। নতুন সেতু নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করে আসছেন স্থানীয়রা।’

উপজেলা সদরের জুঙ্গুরদীয়া এলাকার রুস্তুম কাজী বলেন, ‘ঝুঁকি জেনেও যানবাহন ও মানুষ চলাচল করছে। জোড়াতালি দিতে দিতে আর জায়গা নাই। কখন যেন ভেঙে পড়ে কে জানে।’

স্থানীয় ভ্যানচালক নুর ইসলাম বলেন, ‘সেই ছোটকাল থেকে স্টিলের ব্রিজ দিয়ে চলাচল করছি। এ যুগে স্টিলের সেতু চলে না। ঝুঁকি থাকার পরও নতুন সেতু নির্মাণের কোনো খবর নাই। শুধু লোকমুখে শুনি নতুন সেতু পাস হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে কোনো আলামত দেখি না।’

‘লোকমুখে শুনি নতুন সেতু পাস হয়েছে, বাস্তবে দেখি না’

কলেজ ছাত্র মিজানুর রহমান বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমরা শুধু লোক মুখে গল্প শুনে আসছি। কিন্তু নতুন সেতু নির্মাণের কোন আয়োজন, কাজের কাজ কিছুই দেখি না। সড়ক বিভাগ ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতু দিয়ে সাত টনের বেশি যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এরপরও প্রতিদিন ১০-১২ টন মালামাল নিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।’

নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকার জাগো নিউজকে বলেন, শুনেছি শিগগির এখানে একটা আরসিসি সেতু নির্মাণ হবে। বিষটি সড়ক বিভাগ ভালো বলতে পারবেন।

এ বিষয়ে ফরিদপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইমরান ফারহান জাগো নিউজকে বলেন, নগরকান্দা কুমার নদের ওপর স্টিলের তৈরি বেইলি সেতুর জায়গায় একটি আরসিসি সেতু নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে ১৮ কোটি টাকার একটি নতুন সেতু বরাদ্দ হয়েছে। শিগগির কাজ শুরুর প্রস্তুতি চলছে। পুরনো সেতুটি পথচারী পারাপারের জন্য রাখা হবে। নতুনটি যানবাহন চলাচলের কাজে ব্যবহৃত হবে।

এন কে বি নয়ন/এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।