পুলিশে চাকরির নামে প্রতারণা
প্রার্থীদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিতেন ১৩-১৬ লাখ
পুলিশে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা আদায়ের অভিযোগে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে রাজশাহী জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। তাদের কাছ থেকে সই করা ৩২টি ফাঁকা চেক, প্রায় ৫৬ কোটি টাকার অঙ্ক বসানো ১০টি চেক এবং ৫০টি ফাঁকা নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয়েছে।
প্রতারক চক্রটি সারাদেশের পুলিশে নিয়োগের জন্য আবেদনকারীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে আসছিল বলে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ।
চক্রের সদস্যরা কখনো পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা আবার কখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কাছের লোক পরিচয় দিয়ে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছিল। প্রায় তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার টার্গেট ছিল তাদের। অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা ও গাজীপুর থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানান রাজশাহী জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, চলমান ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগে একটি চক্র বিপুল অঙ্কের টাকা লেনদেনের মাধ্যমে চাকরির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে—পুলিশ সুপারের কাছে এমন অভিযোগ করেন একজন প্রার্থীর অভিভাবক। পরে পুলিশ সুপার প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়ে জেলা গোয়েন্দা শাখার ইন্সপেক্টর মুহাম্মদ রুহুল আমিনকে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন।
তথ্য অনুসন্ধানের পর ইন্সপেক্টর মুহাম্মদ রুহুল আমিনের নেতৃত্বে গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মঙ্গলবার সকালে ঢাকা শহরের সেগুনবাগিচা এলাকায় অভিযান চালিয়ে মারুফ শাহরিয়ার (৩৬) নামের একজনকে গ্রেফতার করে। তার বাবার নাম মো. সামসুল। বাড়ি নগরীর দাসপুকুর এলাকায়। শাহরিয়ারের মেস থেকে দুটি চেক, তিনটি নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প ও একটি স্মার্টফোন উদ্ধার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে মারুফ পুলিশে নিয়োগে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে প্রার্থীদের অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় অবস্থানকারী জড়িত আরেকজনের নাম বলেন। পরে ডিবি টিম যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহাদত হোসেন (৩৩) নামের আরেকজনকে গ্রেফতার করে। তার বাবার নাম শমসের আলী। বাড়ি বরিশাল জেলা শহরের মঙ্গলহাটা এলাকায়। তার হেফাজত থেকে ২০টি নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প, ২০টি চেক, একটি স্মার্টফোন এবং প্রতারণার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ উদ্ধার করা হয়।
শাহাদত হোসেনও প্রতারণার কথা স্বীকার করেন এবং গাজীপুরের কালিয়াকৈরে আরেক ব্যক্তির জড়িত থাকার কথা জানান। পরে একই টিম অভিযান চালিয়ে আব্দুল আজিজ (৪২) নামের আরেকজনকে গ্রেফতার করে। তার বাবার নাম আবুল হোসেন। বাড়ি কালিয়াকৈর থানার চাতৈনভিটি এলাকায়। আজিজের বাড়ি থেকে ২৭টি নন জুডিসিয়াল স্ট্যাম্প, ২০টি চেক ও একটি স্মার্টফোন উদ্ধার করে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গ্রেফতাররা বিভিন্ন জেলায় পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরি দিতে ভর্তিচ্ছুদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। তারা কখনো পুলিশ সদর দপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, আবার কখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার কাছের লোক পরিচয় দিয়ে টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেন। একেকজনের সঙ্গে ১৩-১৬ লাখ টাকার চুক্তি হতো।
প্রতারণার বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য কারও কাছ থেকে তারা নগদ অর্থ গ্রহণ করেননি। সবাইকে বলেছেন ফাঁকা চেক ও ফাঁকা স্ট্যাম্প দেওয়ার জন্য। বলতেন চাকরি হওয়ার পর টাকা পরিশোধ করে সই করা চেক ও স্ট্যাম্প ফেরত নিতে হবে।
চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় চক্রটি অন্তত ৩০ জনের কাছ থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা লেনদেনের কার্যক্রম শুরু করেছিল বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশ সুপার মাসুদ হোসেন জানান, প্রতারণার ঘটনায় রাজশাহীর পুঠিয়া থানায় একটি মামলা করা হয়েছে। ওই মামলায় তিনজনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের প্রক্রিয়া চলছে।
সাখাওয়াত হোসেন/এসআর/এএসএম