ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকে স্বপনের মাসে আয় ৫০ হাজার টাকা

নাসিম উদ্দিন নাসিম উদ্দিন , জেলা প্রতিনিধি, জামালপুর
প্রকাশিত: ০২:০৮ পিএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
কারখানায় কাজ করছেন বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ ইনসেটে উদ্যোক্তা মো. হামিদুল ইসলাম স্বপন

জামালপুরে ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক থেকে মাসে অর্ধ লক্ষাধিক টাকা আয় করছেন হামিদুল ইসলাম স্বপন (৫০) নামে এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। ১০ বছর প্রবাস জীবন শেষে পাঁচ বছর আগে এ ব্যবসা শুরু করেন তিনি।

বর্তমানে তার কারখানায় কাজ করছেন নানা বয়সের ২০-২৫ নারী-পুরুষ। তাকে দেখে কয়েকজন যুবক নিজ এলাকাসহ আশপাশের এলাকায় গড়ে তুলেছেন এমন কারখানা। যেখানে নিজেকে স্বাবলম্বী করার পাশাপাশি কর্মসংস্থানেরও সুযোগ তৈরি হয়েছে।

হামিদুল ইসলাম স্বপন সরিষাবাড়ী পৌরসভার বাউসী বাজার এলাকার মৃত সৈয়দ আব্দুল হালিমের ছেলে। ২০১৮ সালে তিনি এ ব্যবসা শুরু করেন। প্রথমে দেড় লাখ টাকা দিয়ে চায়নার তৈরি প্লাস্টিকের বোতল স্ক্র্যাপ করা মেশিন কিনেন। এরপর ফেলে দেওয়া বিভিন্ন প্লাস্টিকের আসবাবপত্রের টুকরো, কোমল পানীয় ও তেলের বোতল বাজারের বিভিন্ন ভাঙারি দোকান থেকে কেজি দরে কিনে এনে রং অনুযায়ী আলাদা করেন। পরে স্ক্র্যাপ করা মেশিন দিয়ে টুকরো করে সেগুলোকে পুনরায় রং করেন। দু-তিন দিন প্লাস্টিকের টুকরোগুলো প্রখর রোদে শুকিয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন।

ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকে স্বপনের মাসে আয় ৫০ হাজার টাকা

বর্তমানে কারখানায় প্রতিমাসে ৮ থেকে ১০ টন স্ক্র্যাপ করা প্লাস্টিকের টুকরো তৈরি হচ্ছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। সব খরচ বাদে তার মাসিক আয় অর্ধ লক্ষাধিক টাকা।

এ প্রতিষ্ঠানে দেড় বছর ধরে কাজ করছেন লুৎফর রহমান (৪৫)। এক মেয়েসহ তিনজনের সংসার তার। কাজের ফাঁকে তিনি বলেন, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এখানে কাজ করি। মাস গেলে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা মজুরি পাই। এটার ওপরই আমার সংসার চলে। তবে জিনিসপত্রের যে দাম তাতে আরেকটু মজুরি বাড়িয়ে দিলে ভালো হতো।

ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকে স্বপনের মাসে আয় ৫০ হাজার টাকা

কাছে দাঁড়িয়ে কথা শুনছিলেন জয়নব (৬০) নামের এক বৃদ্ধা। সংসারে তার কেউ নেই। পেট চালাতেই চার বছর ধরে এখানে কাজ করছেন তিনি। বৃদ্ধা বলেন, প্রথমদিকে মজুরি ছিল ১২০ টাকা। এখন ১৪০ টাকা। এ টাকা দিয়েই কোনরকম সংসার চলে।

কথা হয় খালেদা (৫০), রুবেল, মর্জিনা নামে আরও কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে। তারা জানান, এলাকায় এমন একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পেরে তারা অনেক খুশি। মাস গেলে কিছু টাকা হাতে পান তারা। যা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি সন্তানদের লালন পালন করছেন তারা।

হামিদুল জানান, তিনি প্রায় দশ বছর কুয়েত ছিলেন। দেশে এসে অন্যের কাছ থেকে দেখে এ কাজে উদ্বুদ্ধ হন। তাই চিন্তা করলেন প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। প্লাস্টিক দীর্ঘদিন মাটিতে থাকলেও পচে না। এ চিন্তা থেকেই পাঁচ বছর আগে ব্যবসা শুরু করেন। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। কারখানায় এখন ২০-২৫ নারী-পুরুষ কাজ করছেন। এদের বেতন সাড়ে তিন হাজার থেকে শুরু করে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত।

হামিদুল বলেন, বর্তমানে এ পণ্যের বাজার খুব ভালো। এজন্য স্থানীয়ভাবে একটি মোকামও গড়ে উঠেছে। তারা নগদ টাকায় এসব পণ্য কিনে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে। স্ক্র্যাপ করা এক কেজি প্লাস্টিকের টুকরো ২৫-৭০ টাকায় বিক্রি করি। এর মধ্যে কালো রঙয়ের বোতল ২৫ টাকা, সবুজ রঙয়ের ৩৫ টাকা এবং সাদা রঙয়ের বোতল ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।

ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকে স্বপনের মাসে আয় ৫০ হাজার টাকা

তিনি আরও বলেন, এসব প্লাস্টিক দিয়ে নতুনভাবে প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরি করা হয়। এমনকি বিদেশেও রপ্তানি করা যায়। বোতল থেকে সুতা এবং সুতা থেকে কাপড় তৈরি করা হয়।

সরিষাবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উপমা ফারিসা জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। কি ধরনের সাহায্য চান তারা জানতে হবে। এরপর সহায়তা করা হবে।

এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।