কাজ পুরুষের সমান, মজুরি অর্ধেক
‘পুরুষের সমান কাজ করেও অর্ধেক মজুরি পাই। একসঙ্গেই কাজে আসি। সন্ধ্যার পর পুরুষরা মজুরি পায় ৬০০ টাকা আর আমি পাই ৩০০। পুরুষের চেয়ে একটু কাজ কম করি না’। এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বরগুনার আমতলী উপজেলার আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের উত্তর সোনখালী গ্রামের রাহেলা বেগম।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আমতলীতে দুই হাজার চাষি ৫ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করছেন। চাষিরা এখন মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন। এসময় দিনমজুরের চাহিদা অনেক। কিন্তু শ্রমিক সংকট। এ তরমুজ চাষে ১৫ হাজার শ্রমিকের চাহিদা রয়েছে। শ্রমিক সংকট কাটাতে এবং স্বল্প মূল্যে শ্রমিক পেতে হতদরিদ্র নারী শ্রমিকদের বেছে নিয়েছেন কৃষকরা। তবে নারীদের পুরুষ শ্রমিকদের অর্ধেক মজুরি দিচ্ছেন তারা। নারী শ্রমিকরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোদে পুড়ে কাজ করছেন। কিন্তু পুরুষের সমান কাজ করেও নারী শ্রমিকরা মজুরি পান অর্ধেক।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার তরমুজ ক্ষেতে কাজ করা শ্রমিকের প্রায় অর্ধেক নারী। একজন পুরুষ শ্রমিক দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মজুরিতে কাজ করছেন। একই কাজ করে একজন নারী শ্রমিক মজুরি পাচ্ছেন ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা। সমান কাজ করেও অর্ধেক মজুরি পাওয়ায় নারী শ্রমিকরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এ বৈষম্য লাঘবের দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
নারী শ্রমিক কুলসুম আক্তার বলেন, স্বামীর আয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। তাই স্বাবলম্বী হতে আমিও তরমুজ খেতে কাজ করছি। কিন্তু পুরুষের সমান কাজ করেও দিন শেষে অর্ধেক মজুরি পাচ্ছি। এটা অত্যন্ত কষ্টের। এ মজুরি বৈষম্য নিরসনের দাবি জানাচ্ছি।
উত্তর সোনাখালী গ্রামের নারী শ্রমিক সালেহা বেগম বলেন, একই সময়ে একই কাজ করে অর্ধেক মজুরি পাই। যখন মজুরি নিই তখন অনেক খারাপ লাগে।
চাষি রাজ্জাক মৃধা বলেন, ৫০ হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ করেছি। প্রতিদিন ১৫ জন শ্রমিক কাজ করছে। পুরুষ শ্রমিকের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরাও কাজ করছে।
তিনি আরও বলেন, পুরুষ শ্রমিকদের দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা এবং নারী শ্রমিকদের ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা মজুরি দিই।
তরমুজ ব্যবসায়ী সোহেল রানা বলেন, নারীরা পুরুষের সমান কাজ করেও মজুরি পায় অর্ধেক। এটা নারীর প্রতি অন্যায় করা হচ্ছে। দ্রুত এ বৈষম্য নিরসন করতে প্রশাসনের এগিয়ে আসার দাবি জানাই।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এনএসএসের নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দিন পান্না বলেন, পুরুষের পাশাপাশি নারীও অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাদের পেছনে রেখে উন্নয়ন অগ্রযাত্রার কথা ভাবা যায় না।
তিনি আরও বলেন, নারী-পুরুষদের মজুরি বৈষম্য থাকলে নারীরা কাজে অনুৎসাহী হবেন এবং দেশ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে যাবে। তাই মজুরি বৈষম্য নিরসনে প্রশাসনকে উদ্যোগ নিতে হবে।
আমতলী উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুপকুমার পাল বলেন, নারীদের মজুরি বৈষম্য নিরসনে উদ্যোগ নেওয়া হবে।
আমতলী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সি এম রেজাউল করিম বলেন, পুরুষ শ্রমিকদের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা মাঠে কাজ করছেন এটা ভালো লক্ষণ। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে হলে নারী-পুরুষ সমানতালে এগোতে হবে। তবে কোনোভাবেই মজুরি বৈষম্য করা যাবে না। এতে নারী শ্রমিকরা কাজের উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আশরাফুল আলম বলেন, নারীদের মজুরি বৈষম্য নিরসনে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে।
এমআরআর/এএসএম