নিমগাছি মৎস্যচাষ প্রকল্প

১০ হাজার পরিবারের ভাগ্য বদল

এম এ মালেক
এম এ মালেক এম এ মালেক , জেলা প্রতিনিধি, সিরাজগঞ্জ
প্রকাশিত: ০৯:৫৭ এএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

সিরাজগঞ্জে নিমগাছি সমাজভিত্তিক মৎস্য চাষ প্রকল্পের ৭৮৯টি পুকুরে মাছচাষ করে সচ্ছলতা ফিরেছে ১০ হাজার ১৩৭টি পরিবারে। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ, তাড়াশ এবং পাবনার ভাঙ্গুরা ও চাটমোহর উপজেলার দরিদ্র জনগোষ্ঠীরা ৬৬৮ হেক্টর পুকুর সম্মিলিতভাবে ইজারা নিয়ে মাছচাষ করছেন।

প্রতিবছর হেক্টরপ্রতি গড়ে সাড়ে পাঁচ মেট্রিক টনেরও বেশি মাছ উৎপাদিত হচ্ছে। যার বাজারমূল্য প্রায় শত কোটি টাকা।

সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার ৭০ ভাগ মাছের চাহিদা পূরণ করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও যাচ্ছে নিমগাছি সমাজভিত্তিক প্রকল্পের মাছ।

jagonews24

রায়গঞ্জ উপজেলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. হাফিজুর রহমান জাগো নিউজকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, এ প্রকল্পে পাঙাশ, কার্প, তেলাপিয়া, গুলশা, পাবদা, শিং, কৈ মাছের চাষ বেশি হয়। এটি দেশের একমাত্র সমাজভিত্তিক মৎস্যচাষ প্রকল্প। হ্যাচারিতে রয়েছে ৪৩টি পুকুর। যেখানে কার্প ও দেশীয় জাতের মাছের পোনা উৎপাদন করা হয়।

নিমগাছি মৎস্যচাষ প্রকল্প (রাজস্ব) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালে হ্যাচারিতে প্রাকৃতিকভাবে ব্রুড মাছ (প্রজননক্ষম মাছ) উৎপাদন করা হয় ১৫ দশমিক ৪৫ মেট্রিক টন। যা ২০২১ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ১৫ দশমিক ৫০ টন। এতে সরকার ওই বছরে হ্যাচারি থেকেই রাজস্ব পেয়েছে ৫০ লাখ ৭৪ হাজার টাকা।

jagonews24

বর্তমানে প্রতিবছর ১৫ হাজার কেজি কৌলিতাত্ত্বিক গুণসম্পন্ন ব্রুড মাছ উৎপাদন করে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হ্যাচারিতে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর চাহিদা থাকায় কুঁচিয়ার পোনা ও শামুক-ঝিনুকের উৎপাদন কার্যক্রম চলমান।

রায়গঞ্জ উপজেলার সমাজভিত্তিক মৎস্যচাষী এনছাব আলী সেখ (৬৪) জাগো নিউজকে বলেন, ‘দরিদ্র ৩০ সদস্যকে নিয়ে স্থানীয় ঘোড়ামারা পুকুরে মাছচাষ করছি। এতে আগে কষ্টে দিন কাটলেও এখন স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বেশ ভালো আছি।’

নিমগাছি হ্যাচারির টেকনিশিয়ান দিনাথ মাহাতো (৬২) জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্রায় ৩০ বছর ধরে হ্যাচারিতে কর্মরত। এ কাজ করে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করিয়েছি। দুই সন্তানই এখন সরকারি চাকরি করছে। সংসারে আর কোনো অভাব নেই।’

সমাজভিত্তিক মৎস্যচাষ প্রকল্পের সুফলভোগী শ্যামল চন্দ্র মাহাতো বলেন, সমাজভিত্তিক প্রকল্পের একটি পুকুর ইজারা নিয়ে তারা মাছচাষ করছেন। এতে ৩০টি পরিবারের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়েছে।

jagonews24

তাড়াশ উপজেলার মাছচাষি মাসুদ রানা জাগো নিউজকে বলেন, মাছচাষ অনেকের কপাল খুলে দিছে। আগে শুধু জেলেরা মাছচাষ করলেও এখন শিক্ষিত সমাজও এ পেশায় ঝুঁকছে।

এ প্রসঙ্গে সিরাজগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, নিমগাছি মৎস্যচাষ প্রকল্পটি দেশের একমাত্র সমাজভিত্তিক মৎস্যচাষ ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম। এখানে হ্যাচারি ইউনিট ও মৎস্যজীবীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রকল্পটি রাজস্ব আদায়ের পাশাপাশি মাছ ও পোনা উৎপাদনের মাধ্যমে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে কাজ করছে।

এসআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।