গোলাপের ভালো ফলনেও চাষির কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ

মাহফুজুর রহমান নিপু মাহফুজুর রহমান নিপু , উপজেলা প্রতিনিধি সাভার সাভার (ঢাকা)
প্রকাশিত: ০৯:১১ এএম, ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
বাগান থেকে গোলাপ সংগ্রহ করছেন চাষি

ফুলের রানী গোলাপ। নিজস্ব সৌন্দর্য আর স্নিগ্ধতা মুগ্ধ করে সব বয়সের মানুষকেই। সেই গোলাপ চাষ করে ঢাকার সাভার উপজেলার বিরুলিয়া ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রাম পরিচিত পেয়েছে গোলাপ গ্রাম নামে। বর্তমানে উপজেলার দেড় হাজার কৃষক প্রায় ২৭৫ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ করছেন।

গত তিন বছর নানা প্রতিকূলতায় গোলাপ চাষিরা পড়েন বিপাকে। এবার ফলন ভালো হওয়ায় তাদের বিপদ কেটেছে। তবে বিদেশ থেকে আমদানি করা ফুলে চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

sa-(6).jpg

মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিরুলিয়ার সাদুল্লাপুর, শ্যামপুর, কমলাপুর, বাগিনীবাড়ি, মোস্তাপাড়া ঘুরে দেখা যায়, মাঠের পর মাঠ জুড়ে ফুটে আছে গোলাপ। কোথাও লাল টকটকে কোথাও আবার হলুদ কোথাও সাদা। এ যেন এক গোলাপ রাজ্য। প্রতিটি বাগানে দেখা মেলে চাষিদের। পরম যত্নে ঘাম ঝাড়াচ্ছেন তারা। দূর দূরান্ত থেকে ফুলপ্রেমীরাও ছুটে আসছেন বাগানে।

শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের পদচারণা দেখা যায় বাগানগুলোতে। কেউ ছবি তুলছেন কেউবা বাগান থেকে নিজ হাতে তুলছেন ফুল। বাগানগুলোর সম্মুখে কেউ কেউ ফুলের পরসা সাজিয়ে বসে আছেন। আগত অধিকাংশ নারীর মাথায় ছিল বাহারি ফুলের মুকুট।

sa-(6).jpg

রাজধানীর ডেমরা থেকে আসা তামিম হাসান বলেন, ‘ফেসবুক আর বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বহুদিন ধরে দেখছি গোলাপ গ্রাম। আজ পরিবার নিয়ে ছুটে এসেছি। ভালোই লাগছে, যে দিকে তাকাই সে দিকে শুধু গোলাপ আর গোলাপ।’

তার সঙ্গে থাকা আইরিন আক্তার বলেন, ‘যতই মন খারাপ হোক না কেন, গোলাপ গ্রামে এলে ভালো হয়ে যাবে। কত সুন্দর গোলাপ বাগান। বাগানে কিছু গোলাপ ফুটে আছে আবার কিছু ফোটার অপেক্ষায়। চোখ যে কত শান্তি পায় তা না দেখলে বোঝার উপায় নাই।’

ফুলচাষিরা জানান, গতবারের চেয়ে ফলন ভালো হয়েছে। দাম পেলে লাভবানও হবেন। তবে আমদানি হওয়া বিদেশি ফুলের কারণে হতাশ চাষিরা।

sa-(6).jpg

গোলাপ চাষি আমজাদ হোসেন বলেন, ‘দুই বছর করোনা আর এক বছর ফুলগাছে অজ্ঞাত রোগে লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে এবার গোলাপের ফলন ভালো হয়েছে। তবুও শঙ্কা কাটছে না। কারণ কাঁচা ফুলের বাজারে ঢুকে পড়ছে বিদেশ থেকে আমদানির প্লাস্টিকের ফুল। এতে বাজারে কাঁচা ফুলের কদর এবং দাম দুটোই কমছে। যতদিন যাচ্ছে ততই প্লাস্টিক ফুলের বাজার বড় হচ্ছে।’

আরেক চাষি মজিবুর রহমান বলেন, ‘বছরজুড়ে ফুল বিক্রি হয়। তবে ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত ধরা হয় ফুল বিক্রির প্রধান মৌসুম। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস, শহীদ দিবস ও স্বাধীনতা দিবস ঘিরে এ সময় ফুল বিক্রি বাড়ে কয়েকগুণ। গেলো বিজয় দিবসে ফুল বিক্রি বেশি হলেও দাম তেমন ভালো পাইনি। আমদানির ফুলের কারণে চাহিদা কমেছে। এখন চেয়ে আছি বাকি উৎসবগুলোর দিকে।’

নবীনগর ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সভাপতি ময়েজ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আকার ও ধরন ভেদে প্রতিটি ফুল বিক্রি হচ্ছে ৫ থেকে ১০ টাকা। ২০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির সম্ভাবনা আছে।

sa-(6).jpg

তিনি আরও বলেন, এবার ফুলের ফলন ভালো হলেও বাজারে চাহিদা কম। বিদেশ থেকে আমদানি করা এবং প্লাস্টিকের ফুলে বাজার সয়লাব। এখনই এসব বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে ফুল চাষিরা আগ্রহ হারাবে।

সাভার উপজেলার অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা মরিয়ম খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, এবার গোলাপের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষি অফিস থেকে চাষিদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হয়েছে।

তোর দাবি, আমদানি করা ফুল হয়ে উঠেছে গলার কাটা। এভাবে চলতে থাকলে অনেকেই চাষাবাদে আগ্রহ হারাবে। তাই বিদেশি ফুল পরিহার করে দেশের চাষিদের উৎসাহ দিতে সবাইকে দেশীয় ফুল ব্যবহারের অনুরোধ জানাই।

এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।