তেঁতুলিয়ায় সৌরভ ছড়াচ্ছে ভিনদেশি টিউলিপ

সফিকুল আলম
সফিকুল আলম সফিকুল আলম , জেলা প্রতিনিধি পঞ্চগড়
প্রকাশিত: ০৮:৫২ পিএম, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় এবারও ফুটেছে ভিনদেশি ফুল টিউলিপ। উত্তরের শীতপ্রবণ উপজেলাটির দর্জিপাড়া এলাকায় গড়ে ওঠা টিউলিপ বাগান দেখতে ভিড় করছেন দর্শনার্থীরা।

মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে টিউলিপ বাগানটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেন ইকো-সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশনের (ইএসডিও) পরিচালক (প্রশাসন) ড. সেলিমা আখতার।

দুপুরে সরেজমিন দেখা যায়, ৫০ টাকা টিকিট কেটে আগে থেকে দর্শনার্থীরা টিউলিপ ফুল দেখতে অপেক্ষা করছিলেন। উদ্বোধনের পর তারা পরিবার-পরিজন নিয়ে বাগানে ঢোকেন এবং ছবি তোলেন।

Tulip-2.jpg

গতবছর ছয়টি প্রজাতির ১২ রঙের টিউলিপ চাষ করা হলেও এবার ১০ প্রজাতির ফুল চাষ করা হয়েছে।

স্থানীয় উদ্যোক্তারা জানান, বাহারি ফুল টিউলিপ সাধারণত নেদারল্যান্ডস, কাশ্মীর, তুরস্কের মতো শীতপ্রধান দেশে চাষ হয়। তবে শীতপ্রবণ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) সহযোগিতায় বেসরকারি সংস্থা ইকো-সোস্যাল ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন (ইএসডিও) টিউলিপ চাষ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে।

এই ফুল চাষ হিমালয় কন্যাখ্যাত তেঁতুলিয়ার সম্ভাবনাময় পর্যটনে নতুন সংযোগ বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। এখানকার আবহাওয়া ও মাটি টিউলিপ চাষের উপযোগী হওয়ায় গতবারের তুলনায় এবার বাগানের ফলন আরও ভালো হয়েছে।

Tulip-2.jpg

ইএসডিও সূত্র জানায়, এবার টিউলিপ চাষ প্রকল্পে এক লাখ ফুলের জন্য বীজ বা চারার দাম, শেড নেট, ফেন্সিং নেট, সার, কীটনাশক ও শ্রমের মূল্য বাবদ এ পর্যন্ত মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ লাখ টাকা। এরইমধ্যে টিউলিপ বাগান থেকে ঢাকায় প্রায় দুই লাখ টাকার ফুল বিক্রির জন্য পাঠানো হয়েছে।

মঙ্গলবার থেকে স্থানীয়ভাবেও ফুল ও চারা বিক্রি শুরু করা হয়। প্রতিটি ফুল স্টিকসহ ১০০ টাকা এবং ফুলের প্রতিটি চারাও ১০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। সেই হিসাবে এবার টিউলিপ চাষ করে এক কোটি টাকায় বিক্রি এবং প্রায় ২০ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন কৃষকরা। গতবছর ৩২ লাখ টাকা খরচে ৪০ হাজার টিউলিপ ফুল বিক্রি করে মাত্র দুই মাসে আট লাখ টাকা আয় করবেন চাষিরা।

স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা মনোয়ারা বেগম বলেন, ইএসডিওর সহযোগিতায় আমি গত বছর পাঁচ শতক জমিতে ফুল চাষ করেছিলাম। প্রতিটি ফুল ১০০ টাকা করে বিক্রি করেছিলাম। অন্য ফসলের তুলনায় অল্প সময়ে এই ফুল চাষ করে লাভবান হয়েছিলাম। তাই এবার ১০ শতক জমিতে টিউলিপ করেছি। এই ফুল দেখতে অনেকেই আসছেন, ফুল কিনছেন।

Tulip-2.jpg

উপজেলা সদরের মাগুড়া এলাকার জহিরুল ইসলাম বলেন, গত বছর আসতে পারিনি। এবার প্রথম দিনেই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে টিউলিপ ফুল দেখতে এসেছি। সবাইকে নিয়ে ছবি তুলেছি, ভিডিও করেছি। এমন ফুল আমি বাস্তবে কোনোদিন দেখিনি। খুব ভালো লাগলো।

তেঁতুলিয়ায় টিউলিপ ফুলচাষ প্রকল্পের সমন্বয়কারী আইনুল হক বলেন, গতবছর এই টিউলিপ বেশ সাড়া জাগিয়েছিল। দেশ-বিদেশের অনেক পর্যটক ফুল দেখতে এসেছিলেন। এবার একটু বড় পরিসরে বাণিজ্যিকভাবে ২০ জন প্রান্তিক কৃষকের ১০ শতক করে দুই একর জমিতে ১০ প্রজাতির টিউলিপের চারা রোপণ করা হয়েছে। এই ফুলের বীজ নেদারল্যান্ডস থেকে আনা হয়েছে। সব মিলিয়ে ৭৫ থেকে ৮০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।

Tulip-2.jpg

তিনি বলেন, আশা করছি, এবার এক কোটি টাকার ফুল ও চারা বিক্রি হবে। অর্থনৈতিকভাবে লাভবানের পাশাপাশি সম্ভাবনাময় তেঁতুলিয়ার পর্যটনেও নতুন মাত্রা যোগ করেছে টিউলিপ।

তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বড় পরিসরে টিউলিপ চাষ উত্তরবঙ্গের তেঁতুলিয়ায় প্রথম। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে থাকা আবহাওয়া এই ফুল চাষের উপযোগী। সেক্ষেত্রে উত্তরের এই উপজেলায় দীর্ঘসময় শীত থাকে। এরকম শীতপ্রবণ এলাকায় টিউলিপ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

Tulip-2.jpg

ইএসডিওর পরিচালক ড. সেলিমা আখতার বলেন, সাধারণ ফসলে আমরা যে খাদ্য উৎপাদন করি, সেই ক্ষেতেই আমরা টিউলিপ ফুল চাষ করছি। এটা অল্প মেয়াদি চাষযোগ্য একটি কৃষিপণ্য। এই ফুলের চারা রোপণের ১৮ দিনের মধ্যে কলি বের হয় এবং ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে ফুল ফুটে। তাই সেই জমিতে কিন্তু কৃষকরা অন্য কৃষিপণ্যও সঠিক সময়ে উৎপাদন করে থাকেন।

তিনি বলেন, একজন মানুষের খাদ্য চাহিদার পাশাপাশি মনে খোরাকও দরকার। ফুল একটি মনের খোরাক বলে আমরা মনে করি। এছাড়া দেশে ফুলের বাজারও প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই ফুল বাজারজাত করে কৃষকরা অতি দ্রুত লাভবান হচ্ছেন।

এমআরআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।