খুলনা নগরবাসীর ভোগান্তিতে যোগ হলো মশার উপদ্রব
খুলনা নগরীতে একযোগে চলছে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। সড়ক প্রশস্তকরণ, পয়ঃনিষ্কাশন, ড্রেনের ব্যবস্থার উন্নয়নের মতো ভারী কাজ চলছে একসঙ্গে। সবমিলিয়ে চার হাজার কোটি টাকার কাজ চলছে এ মহানগরজুড়ে।
দীর্ঘদিন ধরে ধীরগতিতে চলমান এসব উন্নয়ন কাজের জন্য নগরবাসীকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। সেই ভোগান্তিতে নতুন করে যোগ হয়েছে মশার উপদ্রব। মশার কাছে যেন রাত আর দিন বলে কোনো কথা নেই। সুযোগ পেলেই দল বেঁধে হুল ফুটিয়ে দিচ্ছে মানুষের চামড়ায়।
যদিও অতিষ্ঠ নগরবাসীকে কিছুটা স্বস্তি দিতে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক মশকনিধন কার্যক্রম জোরদারে নির্দেশ দিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, খুলনা সিটি করপোরেশনের অধীনে কয়েক বছর ধরেই নগরীতে চলছে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ। ধীরগতিতে চলমান এ কাজের জন্য শুরু থেকেই নগরীর অধিকাংশ ড্রেন ও সড়ক বন্ধ আছে। এতে মানুষ ও যানবাহনের চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। ছোট ছোট নগর পরিবহনগুলো ঘুরপথে গন্তব্যে যাওয়ার কারণে ভাড়াও বেড়েছে। ফলে কর্মস্থল বা কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে পৌঁছাতে খরচও বেড়েছে।
আরও পড়ুন: উন্নয়নকাজে ধীরগতি, ভোগান্তিতে খুলনা নগরবাসী
ভোগান্তির শেষ এখানেই নয়, নগরীর বাণিজ্যিক ও আবাসিক এলাকার মধ্যে সড়কগুলোতেও চলছে ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন কাজ। অত্যন্ত ধীরগতিতে চলমান এ কাজের জন্য ড্রেনগুলোতে পানি চলাচল একেবারেই বন্ধ। অনেক এলাকায় ড্রেনের পানি চলে এসেছে সড়কের ওপর। দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা পানি এখন মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
নগরীর খানজাহান আলী রোডের বাসিন্দা গোলাম রসুল, খোকন শিকাদার, হায়দার হোসেন বলেন, ‘এটি নগরীর প্রধান সড়ক। ড্রেনেজ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য সড়কটি খুঁড়ে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন। বাসাবাড়ির পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ নাই। যেখানে খোঁড়া হয়েছে, সেইখানে পানি গিয়ে জমা হচ্ছে। নোংরা পানি দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকার কারণে সেখানে মশার বংশ বিস্তার হচ্ছে প্রতিনিয়ত।
তারা আরও বলেন, কোথাও গিয়ে একটু চুপ করে কাজ করার সুযোগ নেই। প্রতিনিয়ত মশার হুল ফুটছে গায়ে।
নগরীর টুটপাড়া এলাকার বাসিন্দা আসলাম গোলদার বলেন, টুটপাড়া মেইন রোডের ড্রেনের কাজ চলছে প্রায় এক বছর ধরে। আজ একটু কাল একটু করে কাজ করায় মাসের পর মাস ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে আমাদের।
আরও পড়ুন: টানা বৃষ্টিতে ভোগান্তি খুলনা নগরবাসীর
স্কুলছাত্রী সাদিয়া রহমান বলেন, ড্রেনের ময়লা আবর্জনা তুলে রেখেছে সড়কের ওপর। সরানোর কোনো নামও নেই। মাঝেমধ্যে স্কুলে যেতেও চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এমনও হয়েছে যে, স্কুল ড্রেস পরে বের হওয়ার পর রাস্তায় আসার সঙ্গে সঙ্গে সড়কের শ্রমিকের ছোড়া নোংরা কাদা আর ময়লায় ড্রেস নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু কিছু বলার নেই। তার ওপর মশার উপদ্রবে রাতে পড়াশোনা করাও কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে খুলনা সিটি করপোরেশনের কঞ্জাভেন্সী অফিসার প্রকৌশলী মো. আনিসুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, নগরীতে মশক নিধনের জন্য প্রতিদিনই কার্যক্রম চলছে। ফগার মেশিনের পাশাপাশি লার্ভিসাইড, এডাল্টিসাইড ছিটানো হচ্ছে। তবে ড্রেনে পানি জমে থাকার কারণে মশার দ্রুত বংশ বিস্তার ঘটছে।
এদিকে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে এক সভায় মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক মশক নিধন কার্যক্রম জোরদারের নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ঋতু পরিবর্তনের সময় স্বাভাবিকভাবে মশার উপদ্রব বাড়ে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় রেখে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নগরবাসী যাতে মশকমুক্ত পরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করতে পারে এর জন্য যা যা প্রয়োজন সবকিছুর নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এ কাজে কারও গাফিলতি পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসজে/জেআইএম