ঠাকুরগাঁওয়ে বিমানবন্দর চালুর সিদ্ধান্ত : উন্নয়নের হাতছানি
বে-সামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রীর ঠাকুরগাঁওয়ে শিবগঞ্জ বিমানবন্দর চালুর সিদ্ধান্ত ও পাশের জেলা পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চালুর কারণে এই অঞ্চলে উন্নয়নের সম্ভাবনা দেখছেন এলাকাবাসীসহ সকলেই।
উত্তরের অবহেলিত সীমান্ত ঘেঁষা জেলা ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড়। দেশ স্বাধীনের পর থেকে এ অঞ্চলে তেমন কোনো বড় শিল্প কারখানা গড়ে ওঠেনি। এর একমাত্র কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। তাই রাজধানীর কোনো শিল্প উদ্যোক্তা এই দুটি জেলায় কোনো ভারি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে আগ্রহ প্রকাশ করেননি এতদিন।
সম্প্রতি ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালুর সিদ্ধান্তে ও পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশন চালুর কারণে এই এলাকার মানুষের মাঝে উন্নয়নের সঞ্চার ঘটবে বলে বিশিষ্টজনেরা মন্তব্য ব্যক্ত করেছেন। এছাড়াও ঠাকুরগাঁও সীমান্ত এলাকা হওয়ায় এবং পাশে ভারতের বড় বড় শহর থাকায় এ পাশ দিয়ে ভারতে বিমান চলাচলের ব্যবস্থা করা গেলে আরো বেশি উন্নয়ন করা সম্ভব বলে মনে করে এ এলাকার সুধীজন।
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ মনোতোষ কুমার দে জানান, ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালুর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই। এর আগেও বিমানবন্দরটি চালুর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। পরে আলোর মুখ দেখেনি বিমানবন্দরটি। বিমানবন্দরটি চালু হলে শুধু ঠাকুরগাঁওয়ের মানুষই সুবিধা ভোগ করবে না বরং আশের পাশের কয়েকটি জেলায় কয়েক লাখ লাখ মানুষ এর সুবিধা ভোগ করতে পারবে। জেলাটি বাণিজ্যিক জেলায় পরিণত হলে বেকারত্বও দূর হবে।
ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলা থেকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরের বিমানের টিকিট বুকিং দেয়ার জন্য রয়েছে মোট ৫টি বুকিং অফিস। প্রতিদিন এ অফিসগুলোতে গড়ে ৩৫-৪০টি টিকিট বুকিং হয় ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় যাওয়ার জন্য। এ অবস্থায় ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু হলে পঞ্চগড়, দিনাজপুরসহ ঠাকুরগাঁওয়ের লোকজন সহজে এ বিমানবন্দর দিয়ে বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করতে পারবে।
ঠাকুরগাঁও শারীফ বিমান এয়ারলাইন্সের মালিক সাকের উল্লাহ জানান, ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকা যাওয়ার বিমানের টিকিট অনেক বিক্রি হয়। সেই পরিমাণ সেবা দিতে আমরা পারছি না। তাই বেশির ভাগ মানুষ টিকিট না পেয়ে ফিরে যায়। ঠাকুরগাঁওয়ে বিমানবন্দর চালু হলে বিমান খাত লাভজনক হবে ও মানুষ কম সময়ে দ্রুত বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছাতে পারবে। অন্যদিকে বিমানবন্দরটি চালু হলে ভারতের অনেক ব্যবসায়ী এটির সুবিধা ভোগ করতে পারবে।
ঠাকুরগাঁও চেম্বার অব কর্মাসের সভাপতি হাবিবুল ইসলাম বাবলু জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল না হওয়ায় ঢাকার ব্যবসায়ীদের এই অঞ্চলে শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহ নেই। যদি শিবগঞ্জ বিমানবন্দর পুনরায় চালু হয়। তাহলে এই এলাকায় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। ফলে মানুষের কর্মসংস্থান ও জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। কার্গো বিমান চালু হলে অন্য জেলা থেকে মালামাল পরিবহন করা যাবে এবং এ এলাকার মালামাল সহজে ও কম খরচে বিভিন্ন জেলায় পাঠানো যাবে।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মুহম্মদ সাদেক কুরাইশী বলেন, সড়ক পথে ঢাকা যাওয়া ঝুকিপূর্ণ। ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দরটি চালু হলে মানুষ স্বাচ্ছন্দে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে। এছাড়াও এ এলাকায় বিমানবন্দর চালু হলে অন্য জেলা থেকে শিল্পপতিরা এ এলাকায় শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে আগ্রহী হবে। ঠাকুরগাঁওবাসী এ বিমানবন্দরটি চালুর জন্য বর্তমান সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৩ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁওয়ে বেসামরিক বিমান ও পর্যনটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন সদর উপজেলার শিবগঞ্জ বিমানবন্দর পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত নেয়ায় জেলার মানুষ আশার আলো দেখতে শুরু করেছে। এ সময় ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি আব্দুল মাতলুব আহমাদ পঞ্চগড় সফরে এসে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের সম্ভাবনাময় স্থান বলে মন্তব্য করেন। এই ইমিগ্রেশন চালু হলে পঞ্চগড়েব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি পর্যটন এলাকায় পরিণত হবে। তাই রাজধানী থেকে এই এলাকায় আসার জন্য যদি শিগগিরই ঠাকুরগাঁও বিমানবন্দর চালু হয় তাহলে এই দুটি জেলা উন্নত জেলায় পরিণত হবে বলে তিনি জানান।
রবিউল এহ্সান রিপন/এফএ/এসএস/এমএস