শ্রীপুরে এবারও ফুটেছে ১২ রঙের ৭০ হাজার টিউলিপ

আমিনুল ইসলাম
আমিনুল ইসলাম আমিনুল ইসলাম , জেলা প্রতিনিধি গাজীপুর
প্রকাশিত: ০৯:৫৭ পিএম, ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

২০২০ সালে প্রথমবার দেশে টিউলিপ ফুল ফুটিয়ে সাড়া জাগিয়েছিলেন গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামের দেলোয়ার হোসেন ও সেলিনা হোসেন দম্পতি। এরই ধারাবাহিকতায় এবার তাদের বিশাল বাগানে ফুটেছে ১২ জাতের ৭০ হাজার টিউলিপ। বিস্তৃত জায়গাজুড়ে শুধু বাহারি রঙিন ফুলের খেলা। এ যেন দেশের বুকে এক টুকরো নেদারল্যান্ডস।

শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে শ্রীপুরে দেলোয়ার হোসেন ও সেলিনা দম্পতির টিউলিপ ফুলের বাগান পরিদর্শন করেছেন নেদারল্যান্ডসের বাংলাদেশ হাইকমিশনের হেড অব মিশন থিজ উডস্ট্রা। তিনি বাগান দেখে উচ্ছ্বসিত হন। এ সময় তিনি বাংলাদেশে টিউলিপের সম্ভাবনার কথা জানিয়ে এ ফুলচাষি দম্পতিকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, টিউলিপ বাংলাদেশের সৌন্দর্য্য আরো বৃদ্ধি করবে। নেদারল্যান্ড ও ইউরোপে এ টিউলিপের ব্যাপক বাজার রয়েছে। বাংলাদেশের নারী ও পুরুষরা এ টিউলিপ চাষ করে টিউলিপের বাজার তৈরি করতে পারে। বাংলাদেশে টিউলিপচাষে নেদারল্যান্ডস সহযোগিতা করবে।

শ্রীপুরে এবারও ফুটেছে ১২ রঙের ৭০ হাজার টিউলিপ

আরও পড়ুন- ফুলচাষিদের ঋণ দিলো সোনালী ব্যাংক

ফুল উৎপাদনে বৈশ্বিক তালিকায় বাংলাদেশের নাম হয়তো একেবারেই তলানিতে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই দেশে টিউলিপ ফুলের উৎপাদন বিস্ময় জাগিয়েছে। ষড়ঋতুর এই দেশে শীতকালের বাহারি টিউলিপ চাষে এসেছে ব্যাপক সফলতা। এই ফুল চাষ প্রতিনিয়ত সম্প্রসারিত হচ্ছে সারাদেশেই। শুরু হয়েছে বাণিজ্যিক উৎপাদনও।

টিউলিপ ফুলের বাগান দেখতে সেখানে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসছেন। তবে এবার একটু ভিন্ন পথে হাঁটছেন হোসেন দম্পতি। তারা নির্ধারণ করেছেন তাদের বাগানের প্রবেশ ফি। এখানে টিউলিট দর্শনে আপনাকে গুণতে হবে ১০০ টাকা।

উদ্যোক্তাদের ভাষ্য, ৯ জানুয়ারি বাল্ব রূপণের পর ৩০ জানুয়ারি নাগাদ ২১ দিনের মাথায় ফুল ফুটে বের হয়।

১৫ বছর ধরে ফুল ব্যবসায় জড়িত এ দম্পতি। তখন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের মন্ত্রী, সচিব, এমপিসহ দেশের বিশিষ্টজনেরা বাগান পরিদর্শনে এসেছিলেন। বাংলাদেশের পরিবেশে টিউলিপ উৎপাদন দেখতে বাগান পরিদর্শনে এসেছিলেন টিউলিপের রাজধানী নেদারল্যান্ডসের বেশ কজন। এর আগে গোলাপ, জারবেরা, লিলিসহ নানা জাতের ফুল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করে আসছিলেন তারা।

মৌমিতা ফ্লাওয়ার্স নামে ফুলচাষের একটি প্রতিষ্ঠানও গড়ে তুলেছেন। এই প্রতিষ্ঠানের আওতায় ফুল ছাড়াও তাদের প্রকল্পে ছিল ব্যাপক আকারে স্ট্রবেরি ও জি নাইন কলার চাষ। ফুল ও ফল উৎপাদনের পাশাপাশি তারা এগুলোর বীজ স্থানীয়ভাবে কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ ও প্রযুক্তিগত পথও দেখিয়ে দেন।

শ্রীপুরে এবারও ফুটেছে ১২ রঙের ৭০ হাজার টিউলিপ

প্রথম বছর তাদের টিউলিপ বাগানের আয়তন ছিল মাত্র ২ শতাংশ। সফলতা পেয়ে এ বছর তারা মোট ১ বিঘা জমিতে ৭০ হাজারের বেশি টিউলিপ ফুল চাষ করেছেন। টিউলিপ ও অন্যান্য ফুল-ফলের এই প্রকল্পে কাজ করছেন ২৫ জন নারী ও পুরুষ। প্রতিবছর নেদারল্যান্ডস থেকে টিউলিপ ফুলের বাল্ব আমদানি করেন তারা।

উদ্যোক্তারা জানান, টিউলিপ ফুল গাছগুলো ২৮ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয়। এগুলো টবে সাজিয়ে রাখার জন্য আদর্শ ফুল। একটি গাছ থেকে একটিই ফুল পাওয়া যায়। পৃথিবীতে টিউলিপ ফুলের ১৫০টির বেশি জাত আছে। টিউলিপ ফুলচাষে সবচেয়ে সফল দেশের নাম নেদারল্যান্ডস। সেখানে এই ফুলের ব্যাপক চাষাবাদ হয়। বর্তমানে নেদারল্যান্ডস ছাড়াও অন্যান্য কয়েকটি শীতপ্রধান দেশেও টিউলিপের চাষ হচ্ছে।

আরও পড়ুন- তিন দিবস ঘিরে স্বপ্নে বিভোর ফুলচাষিরা
উদ্যোক্তা সেলিনা হোসেন বলেন, বাংলাদেশের পরিবেশে টিউলিপ ফুল চাষ নিয়ে বেশ কয়েক বছর গবেষণা করেছেন তারা। এরপর ২০২০ সালে পরীক্ষামূলকভাবে টিউলিপ চাষে সফলতা দেখেন। পরবর্তীতে ২০২১, ২০২২ ও সর্বশেষ ২০২৩ সালে তারা ক্রমান্বয়ে ফুলটির চাষের আওতা বাড়িয়েছেন। এ বছর পুরোপুরি বাণিজ্যিক উৎপাদনে নেমেছেন তারা। বাগান থেকে কেটে ফুল বিক্রির পাশাপাশি এ বছর পটেও টিউলিপ বিক্রি করছেন। তিন থেকে পাঁচটি টিউলিপ গাছসহ এসব পটের দাম ৩০০ থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে।

দেলোয়ার হোসেন বলেন, নেদারল্যান্ডস এখন টিউলিপ ফুল রপ্তানি করছে। আমরা চেষ্টা করলে ব্যাপকহারে এই ফুল উৎপাদন করে রপ্তানির খাতায় নাম লেখাতে পারি।

দেলোয়ার জানান, এ বছর পঞ্চগড়, যশোর, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বাগেরহাট, রংপুর ও জামালপুরের কয়েকটি এলাকায় তিনি টিউলিপ বাল্ব সরবরাহ করেছেন। এসব বাগানে তিনি নিয়মিত টেকনিক্যাল সাপোর্ট দিচ্ছেন। তার আশা একদিন বাংলাদেশের ফুলপ্রেমীদের বাড়ির আঙিনায় জায়গা করে নেবে টিউলিপ।

এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।