বরগুনার বিষমুক্ত শুঁটকি যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে
সমুদ্রবেষ্টিত জেলা বরগুনার পাথরঘাটা ও তালতলী উপজেলায় বেসরকারি উদ্যোগে শুরু হয়েছে পরিবেশবান্ধব ও বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন। গুণগতমানের কারণে এসব শুঁটকির বেশ চাহিদা তৈরি হয়েছে। পর্যটকদের চাহিদা মেটাতে কুয়াকাটা, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন পর্যটককেন্দ্রগুলোতে বিক্রির জন্য পাঠানো হচ্ছে।
বরগুনার পাথরঘাটার খেয়াঘাট সংলগ্ন উত্তর পাড়ে পদ্মা, রোহিতা এবং চরদুয়ানী আর তালতলী উপজেলার লাউ পারা, আসার চর এলাকায় সম্মিলিতভাবে শুঁটকি উৎপাদন চলমান। মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বছরের সাত মাস শুঁটকি উৎপাদন করা যাবে।
বিষমুক্ত পরিবশে এ শুঁটকি উৎপাদন কাজের পথপ্রদর্শক হয়ে কাজ করে যাচ্ছে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ)। বিশ্ব ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় এটি বাস্তবায়ন করছে বরগুনার বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সংগ্রাম (সংগঠিত গ্রামোন্নয়ন কর্মসূচি)।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২১ সালের জুলাই থেকে প্রকল্পের শুরুতে বরগুনার পাথরঘাটা ও তালতলী উপজেলায় ২৯৩ জন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে বাস্তবায়নকারী সংস্থাটি কেবল বরগুনা জেলাতে নয়, বর্তমানে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা ও মহিপুর এলাকায় বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনে উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও উৎপাদনে ব্যবহৃত মেশিনারিজ দিয়েছে বিনামূল্যে। সংগ্রাম আধুনিক পদ্ধতিতে বিষমুক্ত শুঁটকি তৈরি, সংরক্ষণ, ফিশ ড্রয়ার ব্যবহার, প্যাকেটজাতকরণ ও বিপণন কেন্দ্র স্থাপন এবং শুঁটকি বাজারজাতকরণসহ বিভিন্ন বিষয়ে ধারণা দিয়ে আসছে। এরই মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত উদ্যোক্তারা শুঁটকি উৎপাদন প্রক্রিয়ায় নিজেদের সম্পৃক্ত করেছেন।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে সাগর থেকে আহরিত সামুদ্রিক মাছের মধ্যে লইট্টা, ছুরি, চিংড়ি, লাক্ষা, গাবের আঁটি, মধু ফালিসা, কাবিলা, রূপচাঁদা, সাদা পোয়া, হাঙর, মরমা, বৈরাগী, কোরাল ইত্যাদি তাজা মাছের আঁশ ও নাড়িভুঁড়ি ফেলে আংশিক কেটে প্রথমে ড্রেসিং করা হয়। পরে বিশুদ্ধ পানিতে ধুয়ে পানি ঝরানোর পর ঝুলিয়ে রাখা হয় শুকাতে। পানি ঝরে যাওয়ার পর হলুদ এবং মরিচের গুঁড়ার মিশ্রণে পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। এ সংস্থার আওতায় শুঁটকি সংরক্ষণে কোনো ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য বা কীটনাশক ব্যবহৃত হচ্ছে না।
প্রকল্প বাস্তবায়নকারী বেসরকারি সংস্থা সংগ্রামের সিনিয়র পরিচালক (কর্মসূচি) ইউসুফ বলেন, শুঁটকির যথেষ্ট চাহিদা থাকা সত্ত্বেও স্বাস্থ্যসম্মত আর বিষমুক্ত শুঁটকি বাজারে পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রায়ই কীটনাশকসহ বিভিন্ন কেমিক্যালযুক্ত শুঁটকি হওয়ায় গুণগতমান যেমন থাকে না, তেমনি স্বাস্থ্য ঝুঁকিও থেকে যায়।
সংগ্রামের উপ-নির্বাহী পরিচালক ও সাসটেইনেবল এন্টাপ্রাইজ প্রজেক্টের (এসইপি) ফোকাল পারসন চৌধুরী মোহাম্মাদ মঈন বলেন, সমুদ্র ও নদীকেন্দ্রিক দেশের সর্বদক্ষিণের জেলা বরগুনা। যেখানে নানা প্রজাজির সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যায়। যার বেশিরভাগই শুঁটকি তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকী দেশে উৎপাদিত মাছ প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে শুঁটকি বিক্রি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
তিনি বলেন, বর্তমানে কীটনাশক কিংবা কেমিক্যালমুক্ত শুঁটকি বাজারে পাওয়া কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই প্রাকৃতিক ও পরিবেশবান্ধব উপায়ে বিষমুক্ত শুঁটকি তৈরি করতে সংগ্রাম শুঁটকি উৎপাদন উদ্যোক্তা তৈরিতে প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বাজারজাতকরণে সব ধরনের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। বিষমুক্ত এ শুঁটকি উৎপাদন অব্যাহত রাখবে সংগ্রাম।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দে বলেন, বরগুনা শুঁটকি উৎপাদনে সম্ভাবনাময় একটি এলাকা। বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনে বেসরকারি এ উদ্যোগ সফল করতে মৎস্য বিভাগ থেকে মাঠ পর্যায়ে তদারকি করা হচ্ছে।
এসআর/এএসএম