কৃষিতে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়, মিলছে না ন্যায্যমূল্য
জ্বালানি তেল, সার-কীটনাশকসহ সব ধরনের কৃষিসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির ফলে কৃষিতে বাড়ছে উৎপাদন ব্যয়। তবে এর বিপরীতে ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না বলে দাবি কৃষকদের।
তারা বলছেন, খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষিপণ্য উৎপাদন করে জীবিকানির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। উৎপাদন বেশি হলেও ন্যায্যমূল্য পাওয়া যায় না। ফলে বাম্পার ফলন হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কৃষকরা।
নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার বালাগ্রামের কৃষক জালাল উদ্দিন। তিন পুরুষ থেকে তার পরিবারের আয়ের উৎস কৃষি। তবে গেলো বছরের মাঝামাঝি ডিজেল ও চলতি বছরে বিদ্যুতের দাম বাড়ায় এবার বোরো মৌসুমে চাষাবাদে খরচ বাড়বে। এজন্য বোরো ধান চাষ করবেন কী না, এ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন জালাল উদ্দিন।
একই অবস্থা এই অঞ্চলের হাজারো কৃষকের। তাদের অভিযোগ, প্রতিনিয়ত জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। কৃষিকাজে উৎপাদন ব্যয় বাড়লেও কোনোভাবেই কৃষক পর্যায়ে তাদের ফসলের দাম বাড়ে না। গেলো বছরে বোরো মৌসুমের ধান চাষে সেচ খরচ ছিল বিঘাপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা। এবছর ৪০০ টাকা বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। প্রতি কেজি ধানের বীজে দাম বেড়েছে প্রায় ২০০ টাকা। এছাড়া জমি চাষের খরচ ৯০০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ২০০ টাকা। একইভাবে চাষের খরচ বেড়েছে ভুট্টা, আলু, সরিষাসহ অন্য ফসল রোপণ ও উৎপাদনে। সেইসঙ্গে যোগ হবে কীটনাশকের বাড়তি খরচও।
কৃষক জালাল উদ্দিন বলেন, প্রতিবছর ২০ বিঘা জমিতে বোরো ধান রোপণ করি। তবে সারের দাম এখন বেশি। আবার যদি বিদ্যুতের দাম বাড়ে তাহলে কীভাবে সেচ দেবো? একে তো ফসলের দাম পাই না। আবার এদিকে খরচ বেশি। তাহলে কীভাবে হবে। দেখি চিন্তা করে খরচের সঙ্গে মিললে বোরো ধান চাষ করব, না হলে করব না।
গোলমুন্ডা এলাকার কৃষক আবুল কাশেম বলেন, আমার সংসারের সব খরচ চলে কৃষি থেকে উৎপাদিত শস্য বিক্রি করে। তবে দিনদিন যে হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে সে তুলনায় বাড়েনি কৃষিজাত ফসলের দাম।
তিনি বলেন, খরচ বেশি হওয়ায় এবারে পাঁচ বিঘার জায়গায় দুই বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলাম। হিসাব করে দেখলাম যে ভুট্টা ভাঙা পর্যন্ত যা খরচ হবে তা দিয়ে খরচের টাকাই উঠবে না। তাই সার না দিয়ে বিক্রি করে দিয়েছি দেড় বিঘা। বাকিটা আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি।
কৃষক আব্দুল গফুর বলেন, এবার আমার আলুর ফলন ভালো হয়েছে। তবে আমরা ন্যায্যদাম পাচ্ছি না। উৎপাদন খরচ তো ওঠেনি উল্টো লোকসান গুনতে হয়েছে।
নীলফামারী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস এম আবু বকর সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধিতে কিছুটা প্রভাব পড়বে। তবে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবেন কৃষকরা। তাছাড়া সরকার বিভিন্ন সময় কৃষকদের বিনামূল্যে সার-বীজ দিচ্ছে। আমরা কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান সে বিষয়ে মনিটরিং করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বর্তমানে যেমন জ্বালানির দাম বেড়েছে, তেমনি ধান-ভুট্টাসহ সব ফসলের দামও বেড়েছে। চাষাবাদ করে কৃষকরা লাভবানই হয়।
এ কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, কৃষকরা সাধারণত একযোগে সবাই শস্য বিক্রি করে থাকেন। আবার যারা কিনছেন তারা দাম পরে পান। কৃষকরা যদি মজুত রেখে বিক্রি বা একটু দেরি করে বিক্রি করেন তারাও দাম পাবেন। এক্ষেত্রে তাদের কিছুটা কৌশলী হতে হবে।
রাজু আহম্মেদ/এমআরআর/জেআইএম