খাল কাটা নিয়ে দ্বন্দ্ব, অনিশ্চিত ৭০০ একর জমির চাষাবাদ

মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুরুল ইসলাম ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ০৬:০৬ পিএম, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩

ময়মনসিংহের তারাকান্দায় জমির মালিক জায়গা না দেওয়ায় আটকে আছে খাল খননের কাজ। আর এ খাল খনন করতে না পারায় প্রায় ৭০০ একর জমিতে জলাবদ্ধতা নিরসন হচ্ছে না। এতে সময় হলেও বোরো আবাদ করতে পারছেন না কৃষকরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তারাকান্দা উপজেলার কামারিয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের চর কৃষ্ণপুর এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে মাঠে কোনো ফসল ফলাতে পারেন না কৃষকরা। এমনকী বর্ষা মৌসুমে আশপাশের এলাকার ঘর-বাড়িতে পানি উঠে যায়। পরে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে খাল খনন করার সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় প্রশাসন।

jagonews24

সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত বোরো মৌসুমে কৃষ্ণপুর ফসলের মাঠ থেকে মোজাহারদী গ্রামের বাসিন্দা সুরুজ আলীর আবাদি জমি পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার একটি খাল খননের কাজ শুরু করে স্থানীয় প্রশাসন। সম্পূর্ণ খাল খননের কাজ শেষ পর্যায়ে চলে আসলেও মাঝখানে মাত্র ৬০ থেকে ৭০ গজ জমিতে খনন কাজে বাধা দেন স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মো. মাহাবুবুল আলম বুলবুল। তিনি তার জমির ওপর দিয়ে খাল দেবেন না বলে জানান। এরপর খাল খননের কাজ বন্ধ হয়ে যায়।

এখন বোরো আবাদের সময় হলেও জমি থেকে পানি নেমে না যাওয়ায় স্থানীয় কৃষকরা তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর খাল কাটার জন্য জন্য গত ৫ ডিসেম্বর ও ২ জানুয়ারি আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

jagonews24

পরে গত ২৫ জানুয়ারি স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মো. মাহাবুবুল আলম বুলবুল খালের জন্য জমি দিতে রাজি হন। তবে, বুলবুলের জমির পাশ দিয়ে আব্দুর রহমানের জমি। এখন আব্দুর রহমান খালের জন্য দিতে রাজি হচ্ছেন না। এতে প্রায় ৭০০ একর জমির বোরো আবাদ আটকে আছে।

এ বিষয়ে চর কৃষ্ণপুর গ্রামের শাজাহান মিয়া বলেন, এই খাল না খনন করার কারণে প্রায় ৭০০ একর জমিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। বর্ষা মৌসুমে বাড়ি-ঘরেও পানি ওঠে। বেশ কিছুদিন আগে বুলবুল মেম্বার তার জমি দিয়ে খাল দেবেন না বলে খাল খনন আটকে যায়। এখন বুলবুল মেম্বার জায়গা দিতে রাজি হলেও আব্দুর নামে আরেকজন জমি দিতে রাজি হচ্ছেন না। এখন প্রশাসনই বিষয়টা মীমাংসা করতে পারে। না হলে আমরা কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়বো।

jagonews24

একই গ্রামের মো. আলতাফ হোসেন বলেন, একজন লোকের কারণে ৭০০ একর জমির বোরো আবাদ আটকে আছে। অনেক কৃষক এই জমিতে বোরো আবাদ করা নিয়ে শঙ্কায় আছেন। আমারও এখানে প্রায় ১০ একর জমি আছে। জলাবদ্ধতার কারণে বোরো আবাদ করতে পারছি না। এই জমিতে যদি ধান লাগাতে না পারি তাহলে পরিবারের লোকজন নিয়ে পথে বসতে হবে।

এ বিষয়ে সাবেক ইউপি সদস্য মো. মাহাবুবুল আলম বুলবুল বলেন, মানুষের যেন ক্ষতি না হয় তাই, আমার জমির পাশ দিয়ে খাল করার কথা বলেছি। এখন অন্য কেউ যদি বাধা দেয় সেখানে আমার কিছু করার নেই।

jagonews24

আব্দুর রহমান বলেন, প্রথম যখন খাল খনন শুরু হয় তখনই আমি গ্রামবাসীর কাছে বলেছিলাম, ওই পাশে ৩৪ কাঠা জমির ওপর দিয়ে খাল দিলে এখানে জমি দেবো না। কারণ, আমার এত জমি নেই যে, এক জায়গায় ৩৪ কাঠার ওপর দেবো, আবার এখানেও দেব। এটা সম্ভব না।

এ বিষয়ে তারাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজাবে রহমত বলেন, কোনো ফসলি জমি অনাবাদি রাখা যাবে না। দুইপক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসা করা হবে। কৃষকরা যেন বোরো আবাদ করতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হবে।

এমআরআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।