বগুড়া-৬ উপ-নির্বাচন

নগদে ওমর, মামলায় মান্নান, ঋণে রিপু

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক বগুড়া
প্রকাশিত: ০৫:১৫ পিএম, ২৬ জানুয়ারি ২০২৩
প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমর, আব্দুল মান্নান আকন্দ ও রাগেবুল আহসান রিপুর

বগুড়া-৬ (সদর) আসনের উপ-নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে জাতীয় পার্টি মনোনীত সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম ওমরের নগদ অর্থের পরিমাণ বেশি। আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপুর নগদ এবং ব্যাংকে জমা অর্থের চেয়ে ঋণ বেশি। তবে ঋণের পরিমাণ এবং মামলার সংখ্যায় সবার শীর্ষে আছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান আকন্দ। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলমের নগদ টাকা বেশি না থাকলেও সঞ্চয়পত্র আছে ৫৫ লাখ টাকার।

নির্বাচন কার্যালয়ে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে দাখিল করা সম্পদ-বিবরণী সংক্রান্ত হলফনামায় এসব তথ্য জানা গেছে।

হলফনামা অনুযায়ী, এ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী রাগেবুল আহসান রিপু ব্যবসা ও হাটের ইজারা থেকে প্রতিবছর আট লাখ টাকা আয় করেন। পৈতৃক সূত্রে ১৫ বিঘা জমির মালিক রাগেবুল আহসান রিপুর নয়তলা বাড়ি এবং নয় একরের একটি মৎস্যখামার আছে। ব্যাংকে তার নামে ৩১ লাখ ১৫ হাজার ৬২২ টাকা জমা থাকলেও ঋণ আছে দ্বিগুণ ৬৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। আর তার স্ত্রীর নামে আছে আরও ১৬ লাখ ৬০ হাজার টাকার ঋণ।

জাতীয় পার্টি (জাপা) থেকে প্রার্থী হয়েছেন জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম। তিনি বিএ পাস। তার কাছে নগদ ১ কোটি ৬০ লাখ ১৫ হাজার ৮৬১ টাকা আছে। তার নামে কোনো মামলা নেই। বার্ষিক আয় তিন লাখ টাকা। ২৫ লাখ টাকার মোটর যান, দুটি টিনসেড বাড়ি, ৫৪ শতক জমি আছে। তার নামে দেনা আছে ৩৭ লাখ ৬৩ হাজার ৭৬১ টাকা।

মামলা এবং ঋণে ওই দুই প্রার্থীকে ছাড়িয়ে গেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল মান্নান আকন্দ। হলফনামায় তিনি তার নামে ১০টি মামলার তথ্য দিয়েছেন। তার নামে ব্যাংকে প্রায় ৮১ লাখ টাকার ঋণের কথা উল্লেখ করেছেন। নিজেকে ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বছরে সাড়ে ১২ লাখ টাকা আয়ের তথ্য দিয়েছেন। এছাড়া তার নামে সাড়ে চার একর কৃষিজমি, ১৯ শতাংশ অকৃষিজমি, তিনটি ফ্ল্যাট, একটি মাইক্রোবাস এবং পৈতৃক সূত্রে পাওয়া তিনতলা একটি বাড়ি আছে। লেখাপড়ায় তিনি অষ্টম শ্রেণি পাশ।

অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচিত আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম নিজেকে সশিক্ষিত বলে উল্লেখ করেছেন। তার আয়ের প্রধান খাত হলো ব্যবসা। সেখান থেকে বছরে আড়াই লাখ টাকা পান তিনি। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া দেড় বিঘা জমি থেকে তার আয় ছয় হাজার টাকা। নয় শতাংশ অকৃষিজমির মালিক হিরো আলমের কাছে নগদ আছে মাত্র ৩০ হাজার টাকা। অবশ্য নগদ টাকার পরিমাণ কম থাকলেও ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার এবং ৫৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আছে।

বগুড়া-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে আরও সাত প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তারা হলেন- জাকের পার্টির ফয়সাল বিন শফিক (গোলাপ ফুল), গণফ্রন্টের আফজাল হোসেন (মাছ), জাসদের ইমদাদুল হক ইমদাদ (মশাল), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নজরুল ইসলাম (বটগাছ), বীর মুক্তিযোদ্ধা মাছুদার রহমান হেলাল (আপেল), সরকার বাদল (কুড়াল) এবং রাকিব হাসান (কুমির)।

প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে আয় বেশি জাসদের প্রার্থী ইমদাদুল হকের। হলফনামায় দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক ইমদাদুল হকের ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় ১ কোটি ৩৪ লাখ ৭ হাজার ৭৩৬ টাকা। ব্যাংকে আমানত আছে ১১ হাজার ৭৫৯ টাকার। স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ২ লাখ টাকা ও ব্যাংকে জমা আছে ৬০ লাখ ২ হাজার ৫৪৩ টাকা। এ ছাড়া তার কাছে ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার আসবাব এবং ব্যবসায় ২ কোটি ৪৫ লাখ ৫১৫ টাকার পুঁজি আছে। নিজ নামে ৫ দশমিক ৬৬ বিঘা কৃষিজমি, সোয়া ৩০ শতক অকৃষিজমি ও ৭৪ লাখ ৫০ হাজার টাকার চারতলা ভবন আছে।

স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মাছুদার রহমান হেলালের ব্যবসা ও কৃষি ভূমি থেকে বার্ষিক আয় ৩ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। বিএ পাশ এই প্রার্থীর নগদ আছে ২ লাখ টাকা, ব্যাংকে গচ্ছিত ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং কৃষি জমি আছে সাড়ে চার বিঘা।

সাবেক বিএনপি নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী ব্যবসায়ী সরকার বাদল এমএ পাস। তার আয় ৫ লাখ টাকা। নগদ ১ লাখ টাকা, ৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার, একটি দোকানঘর এবং ৫৩ লাখ টাকা মূল্যের ৪৫ শতক জমি আছে।

গণফ্রন্টের প্রার্থী আফজাল হোসেন এমবিএ পাস। তার নামে মামলা আছে একটি। সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তা এ প্রার্থীর কোনো আয় নেই। নগদ টাকা আছে ৬ লাখ এবং ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার আছে। স্ত্রীর নামে একটি অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণাধীন।

জাকের পার্টির ফয়সাল বিন শফিক বি.কম পাস। ব্যবসায়ী এ নেতার আয় ২ লাখ টাকা। নিজের নামে কিছু না থাকলেও স্ত্রীর নামে ১০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও আসবাবপত্র আছে।

বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম এমএ পাস। মামলা আছে একটি। পেশায় চাকরিজীবী। আয় প্রায় ৫ লাখ টাকার মতো। তার কাছে নগদ এক লাখ, ব্যাংকে ৭ লাখ, আমানত হিসেবে ৫ লাখ টাকা আছে। নিজের নামে সাড়ে ১৩ লাখ টাকার জমি এবং ১৭ লাখ টাকা দামের বাড়ি আছে। প্রায় ২৮ লাখ টাকা দেনা আছে তার।

স্বতন্ত্র প্রার্থী রাকিব হাসান এইচএসসি পাস। তার আয় সাড়ে ১২ লাখ টাকা। ব্যবসায়ী এ প্রার্থীর হাতে নগদ টাকা আছে ৫০ হাজার, শেয়ার বাজারে আছে ৯ লাখ ১২ হাজার টাকা, ২০ লাখ টাকা মূল্যের ২৫ ভরি স্বর্ণালঙ্কার।

এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।