‘একজন মানুষও কি নেই আমার শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করবে’

লিপসন আহমেদ লিপসন আহমেদ , সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৯:০০ পিএম, ২১ জানুয়ারি ২০২৩
বেশিরভাগ সময় চেয়ারেই বসে থাকতে হয় ষাটোর্ধ্ব আমির হোসেনকে

‘এত কষ্ট নিয়ে কি মানুষ বেঁচে থাকতে পারে। ৮ বছর ধরে এক ঘরের ভেতরে একটি প্লাস্টিকের চেয়ারের বসে আছি। এত যন্ত্রণা আর সহ্য হচ্ছে না।’ কথাগুলো বলে কাঁদছিলেন সুনামগঞ্জ পৌর শহরের উত্তর আরফিন নগর এলাকার বাসিন্দা ষাটোর্ধ্ব আমির হোসেন।

তিনি বলেন, ‘হুইলচেয়ারের জন্য অনেক জায়গায় গেছে আমার স্ত্রী। কেউ একটা হুইলচেয়ার দিলো না। শুধু আশা দিয়েছে। আর কয়দিনই বা বাঁচবো। তবে মরার আগে শেষ ইচ্ছা একটা হুইলচেয়ারে ঘুরে বেড়াবো। একজন মানুষও কি নেই, যে আমার শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করবে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্ত্রী, এক ছেলে ও তিন মেয়েকে নিয়ে ছিল আমির হোসেনের সাজানো সংসার। তবে পরিবারের বড় ছেলে রাজন মিয়া মানসিক প্রতিবন্ধী। আমির হোসেন পরিবার পরিকল্পনা সমিতির এফপিএবি লটারি বিক্রেতা ছিলেন। রাস্তায় ঘুরে ঘুরে লটারি বিক্রি করতেন।

লটারির মাধ্যমে অনেকের ভাগ্য বদল হয়েছে। কিন্তু লটারি বিক্রেতা যেমন ছিলেন তার চেয়ে আরও করুণ পরিস্থিতি হয়েছে। ২০১৫ সালে হঠাৎ ব্রেইন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বাম হাত, বাম পা, কোমর অচল হয়ে যায় আমিরের। এরপর থেকে ঘরবন্দি হয়ে পড়েন তিনি।

সংসারে দেখা দেয় অভাব অনটন। নিরুপায় হয়ে সংসারের হাল ধরে তিন মেয়ে। ঘরের ভেতরে টেইলারি করে যা রোজগার হয় তা দিয়েই বাবার ওষুধ ও কোনোরকম সংসার চলে। কিন্তু এখনো বাবার জন্য একটি হুইল চেয়ার জোগাড় সম্ভব হয়নি তাদের। এছাড়া বিভিন্ন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মেলেনি কোনো সমাধান।

স্থানীয় বাসিন্দা সাজ্জাদ মিয়া বলেন, ‘আমির হোসেন আট বছর হয় ঘরের ভেতর পড়ে আছেন। তার বড় ছেলে মানসিক প্রতিবন্ধী। সংসারের হাল তিন মেয়ে ধরেছে। এখন আমির হোসেনের শেষ ইচ্ছা একটি হুইলচেয়ার।’

আরেক বাসিন্দা দেলোয়ার মিয়া বলেন, ‘কত সুন্দর পরিবারটা নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে। যখন আমির হোসেন সুস্থ ছিলেন তিন মেয়েকে কষ্ট করে পড়িয়েছেন। যখন তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন তখন তিন মেয়েই পড়াশোনা ছেড়ে সংসারের হাল ধরেছে।’

আমির হোসেনের স্ত্রী মদিনা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেকের দরজায় দরজায় ঘুরেছি একটি হুইলচেয়ারের জন্য। কেউ দেয়নি। তিন মেয়ে আছে বলে আমরা কোনোরকম বেঁচে আছি। সমাজের কেউ একজন যদি আমার স্বামীর শেষ ইচ্ছাটা পূরণ করতো তাহলে সারাজীবন তার জন্য দোয়া করতাম।’

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সমাজ সেবা কার্যালয়ের উপ পরিচালক সুচিত্রা রায় জাগো নিউজকে বলেন, যারা চলাফেরা করতে পারে না আমরা তাদের হুইলচেয়ার দিয়ে থাকি। তবে এখন আমাদের কাছে কোনো হুইলচেয়ার বরাদ্দ নাই। বরাদ্দ এলে আমির হোসেনকে হুইলচেয়ার দেওয়া হবে।’

এসজে/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।