বালুতে ভরাট জলমহাল, ইজারা নিয়ে বিপাকে মৎসজীবীরা
কুড়িগ্রামে বন্যার পানিতে বালু পড়ে জলমহাল ভরাট হয়ে যাওয়ায় ইজারা নিয়ে বিপাকে মৎস্যজীবী সমিতির সদস্যরা। ইজারাকৃত জলমহালে মাছচাষ করতে না পেরে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন প্রায় ২৩ জন মৎস্যজীবী। এ বিষয়ে একাধিকবার স্থানীয় উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো প্রতিকার মেলেনি।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, জেলার ভূরুঙ্গামারী উপজেলার তিলাই ইউনিয়নের প্রায় ১২ একর আয়তনের দক্ষিণ তিলাই জলমহাল ইজারা নেয় চর ভূরুঙ্গামারী ইউনিয়নের মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড। উপজেলা প্রশাসনের কাছ থেকে গত বছর এপ্রিল মাসে ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকায় তিন বছরের জন্য ইজারা নেওয়া হয়। যার প্রথম কিস্তি হিসাবে তিন লাখ ষাট হাজার টাকা সরকারি দপ্তরে জমা করেছেন। কিন্তু ইজারা নেওয়ার পর গত বছরের দফায় দফায় বন্যায় ভারত থেকে আসা দুধকুমার নদের ভাঙনে জলমহাল ছড়াটি বালু দিয়ে ভরাট হয়ে যায়। এতে করে জলমহালটি মাছ চাষের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ে।
মাছচাষ করতে না পেরে অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েন সমিতির সদস্যরা। ফলে আর্থিক ক্ষতি সামলে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি উপজেলা এবং জেলা প্রশাসনকে গত বছরের ১১ অক্টাবর বিষয়টি লিখিতভাবে জানান। কিন্তু দীর্ঘদিনেও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় হতাশ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা। দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান সমিতির সদস্যরা।
আরো পড়ুন- সয়াবিন চাষে লাভবান হওয়ার স্বপ্ন কৃষকদের
ছড়ার পাশের বাসিন্দা আলা বকস (৬৫) বলেন, আমরা ছোটবেলা থেকে এই ছড়ার পানিতে গোসল, মাছ ধরা এবং সেচ কাজের জন্য ব্যবহার করেছি। গতবছর বন্যায় ছড়ার উত্তর পাশ বালু পড়ে একদম ভরাট হয়ে গেছে। আর দক্ষিণ পাশের একাংশে ২-৩ ফিট পানি আছে। কিছুদিনের মধ্যে তাও শুকিয়ে যাবে। এই ছড়া মরে গেলে এলাকার কৃষক, মাছচাষিসহ বহু মানুষের ক্ষতি হবে।
অপর এক বাসিন্দা রহিমা বেগম বলেন, এই ছড়ার পানিতে হাঁস পালন করেছি। পাট জাগ দেওয়া হতো। গরু-ছাগল, কাপড় চোপড় ধোয়া যেত। কিন্তু বালু পড়ে ছড়া বন্ধ হওয়ায় সব কিছু এখন বন্ধ। অভাবের সংসারে হাঁস-মুরগি পালন করে সংসারের বাড়তি আয়ের সুযোগও শেষ।
নছর আলী বলেন, ‘এই ছড়ায় ১০-১৫ ফুট করে পানি আছিল। এই পানি দিয়া গাও গোসল কচ্ছি, গরু সাঁতরাইছি, জমিতে পানি দিছি। এহন বালু পড়ে একবারে বন্ধ হয়া গেছে।’
আরো পড়ুন- কুড়িগ্রামে ৫০০ হেক্টর জমিতে আগাম আলুর চাষ
মৎস্যজীবী সমিতির সদস্য মাহামুদুল আলম বলেন, প্রায় ১২ একর আয়তনের জলমহালটি ইজারা নেওয়ার পর মাছচাষ করতে পারিনি। এরমধ্যে বন্যা এসে ছড়াটি বালুতে ভরাট হয়ে গেছে। এখন ছড়ার কোনো অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। ধারদেনা করে ইজারা নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। ইউএনও স্যারের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি। তিনি একজনকে ফোন দিয়ে তদন্ত করতে বললেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত কেউ ছড়াটি দেখার জন্য আসেনি।
তিনি বলেন, আমরাতো গরিব মানুষ, দেনা শোধ করি নাকি ইজারার বাকি টাকা শোধ করি। আজ পর্যন্ত তো একটা মাছও চাষ করতে পারিনি।
সমিতির সভাপতি সহিদ আলী বলেন, গত বছর এপ্রিল মাসে পহেলা বৈশাখ থেকে তিন বছরের জন্য ছড়াটি ইজারা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু বন্যা এসে বালুতে ছড়াটি ভরাট হয়ে যায়। এতে করে আমরা আর মাছচাষ করতে পারছি না। সমিতির ২৩ জন সদস্য ধার দেনা করে ইজারা নিলেও কোনো লাভ হয়নি। উল্টো এখন ধারদেনা পরিশোধ করা এবং সরকারকে বাকি টাকা দেওয়া নিয়ে চিন্তায় আছি। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য লিখিতভাবে জানিয়েও কোনো লাভ হয়নি। আমরা খুব অসহায় হয়ে পড়েছি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক সাইদুল আরীফ বলেন, দক্ষিণ তিলাই জলমহালটি যে মৎস্যজীবী সমিতি ইজারা নিয়েছে তাদের সমস্যার কথা জানলাম। এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে যাতে করে ইজারা নেওয়া মৎস্যজীবী সমিতি এর সুফল পেতে পারেন।
ফজলুল করিম ফারাজী/এফএ/জিকেএস