বিশ্ব ইজতেমা
যৌবন হারিয়েছে তুরাগ, মুসল্লিদের নিয়ে চলাচল করতে পারে না নৌযান
গাজীপুরের টঙ্গীতে তুরাগ নদের পাড়ে বসে বিশ্ব ইজতেমার আসর। এক সময় দুই পর্বে চলা এ ইজতেমার ময়দানে সড়কের পাশাপাশি নৌপথেও সমান তালে আসতেন মুসল্লিরা। ধীরে ধীরে সরু হচ্ছে তুরাগ নদ আর কমছে পানি।
ফলে ইজতেমায় এক সময় জমজমাট থাকা এ নৌপথ তার জৌলুস হারিয়েছে। নৌযানগুলো এখন অলস হয়ে পড়েছে। হাতেগোনা কয়েকটি নৌযান চললেও তা আগের তুলনায় অপ্রতুল। তাই বিশ্ব ইজতেমার মুসল্লিদের চাপ বেড়েছে সড়কপথে।
আরও পড়ুন: ইজতেমার দ্বিতীয় পর্বের জন্য ময়দান বুঝে নিলেন সাদ অনুসারীরা
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) আশুলিয়া ও টঙ্গী নৌঘাট ঘুরে দেখা গেছে, এক সময়ের জমজমাট নৌঘাটে নেই মাঝিদের হাঁকডাক। নেই নৌযানের ইঞ্জিনের শব্দ আর যাত্রীদের ব্যস্ততা। বিশ্ব ইজতেমা ময়দানের চারপাশে তুরাগ নদী সরু হয়ে আছে। কোথাও কোথাও পানির খরায় খালে পরিণত হয়েছে। কোথাও আবার নদী দখলের কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে নৌযান চলাচল। তবে কাছাকাছি এলাকা থেকে কিছু নৌযানে ইজতেমার ময়দানে মুসল্লিদের আসতে দেখা গেছে।
আশুলিয়া নৌঘাটে নৌকার ওপর বসে আছেন বৃদ্ধ মাঝি মফিজুল মিয়া। তুরাগের অতীত জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘১০-১৫ বছর আগেও তুরাগের যৌবন ছিল। টলমলে পানি থৈথৈ করতো তুরাগপাড়। চলাচল করতো ছোট বড় নৌযান। মালবাহী আর যাত্রীবাহী নৌযানের দেখা মিলতো নদীতে। ছোট ছোট ডিঙ্গি নৌকাও থাকতো তুরাগের বুকে। কিন্তু এখন তা শুধু স্বপ্ন।’
আরও পড়ুন: গাড়ি পার্কিং ও বিমানবন্দরগামীদের জন্য ট্রাফিক নির্দেশনা
ইজতেমায় কতটুকু ভূমিকা রাখতো এ নদী এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এসময় দূরের মুসল্লিরা ছোট-বড় নৌকা ও ট্রলারে ইজতেমায় আসতেন। সঙ্গে থাকতো তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র ও রান্না সামগ্রী। জিকির করতে করতে দলে দলে মানুষ আসতেন ইজতেমায়। কখনো কখনো নাওয়া খাওয়াও করতেন নৌযানে। মোটকথা মুসল্লিদের প্রধান পছন্দ ছিল নৌযান। কিন্তু এখন আর সেসব নৌযান দেখা যায় না। যেগুলো দেখা যায় সেগুলো আশপাশের এলাকার।’
খানিক সামনে গেলেই কামারপাড়া নৌঘাট। সেখানে ট্রলার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন চালক আলমাস উদ্দিন। ইজতেমার প্রথম পর্বে কেমন আয় হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আশুলিয়া থেকে শুধু মুসল্লিদের কামারপাড়া এনেছি। অল্প একটু পথ। দূরে কোথাও তো আর চলাচল করা যায় না। তবে বাপ-দাদাদের মুখে শুনেছি ইজতেমার সময় এ ঘাটে নৌযান থাকতো শতশত। এখনতো হাতেগোনা কয়েকটা।’
আরও পড়ুন: প্রথম পর্বের ইজতেমায় ৭ মুসল্লির মৃত্যু
পাশেই বসে কথা শুনছিলেন মিল্লাত মিয়া নামের আরেক বৃদ্ধ। তিনি বলে উঠলেন, ‘আগে ইজতেমায় আসা মুসল্লিরা তুরাগ নদের পানি দিয়ে অজু সারতেন। এখন ১০ টাকা করে পানি কিনে অজু করতে হয় অনেক মুসল্লিকে। ৪০ বছর কাটছে তুরাগপাড়। কত কিছু দেখলাম। যতই সময় যাচ্ছে তুরাগ তার যৌবন হারিয়ে আমার মতো বার্ধক্যতে পরিণত হয়েছে।
পরিবেশবিদ সালাউদ্দিন খান নঈম জাগো নিউজকে বলেন, দখল আর দূষণে তুরাগ নদ তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। এভাবে চলতে থাকলে একদিন শুধু মানচিত্রেই তার অস্তিত্ব পাওয়া যাবে। ইজতেমায় নদীটি যে কী পরিমাণ কাজে আসতো, তা এখন অনেকেই উপলব্ধি করতে পারছেন। শুধু গুরুত্ব দিচ্ছেন না যাদের এসব দেখভাল করার কথা তারা। যা খুবই দুঃখজনক।
এসজে/এমএস