বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব

আখেরি মোনাজাতে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ কামনা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি গাজীপুর
প্রকাশিত: ১২:২৮ পিএম, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩

মুসলিম উম্মাহর সুদৃঢ় ঐক্য, দুনিয়া ও আখেরাতের শান্তি, দেশের কল্যাণ কামনায় আখেরি মোনাজাত হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে শেষ হলো তাবলিগ জামাত আয়োজিত ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। মোনাজাত পরিচালনা করেন বিশ্ব তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় বাংলাদেশের মাওলানা হাফেজ জুবায়ের। তিনি আরবি, উর্দু ও বাংলা ভাষায় মোনাজাত করেন।

ভোর থেকে দিক-নির্দেশনামূলক বয়ানের পর লাখ লাখ মানুষের প্রতীক্ষার অবসান ঘটে রোববার (১৫ জানুয়ারি) সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে। ২৩ মিনিটের মোনাজাতে বিশাল এ জনসমুদ্রে হঠাৎ নেমে আসে পিনপতন নীরবতা।

যে যেখানে ছিলেন সেখানে দাঁড়িয়ে কিংবা বসে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। কান্নায় বুক ভাসান তারা। প্রথম ১০ মিনিট ব্যাপী মোনাজাতে মাওলানা জুবায়ের পবিত্র কোরআনে বর্ণিত দোয়ার আয়াতগুলো উচ্চারণ করেন। পরে ১৩ মিনিট বাংলা ভাষায় মোনাজাত করেন।

মোবাইল ফোন ও স্যাটেলাইট টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারের সুবাদে দেশ-বিদেশের আরও লাখ লাখ মানুষ একসঙ্গে হাত তোলেন আল্লাহর দরবারে। অনেকে বিমানবন্দর গোল চত্বর কিংবা উত্তরা থেকে আখেরি মোনাজাতে অংশ নেন। এদিন রাজধানী ঢাকা ও গাজীপুর ছিল প্রায় ফাঁকা।

বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ এ আখেরি মোনাজাতে আত্মশুদ্ধি ও নিজ নিজ গুনাহ মাফের পাশাপাশি দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে হেফাজতে লাখ লাখ মুসল্লি আকুতি জানান। আল্লাহর দরবারে দুই হাত তুলে ক্ষমা চান তারা। এ সময় ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে আকাশ-বাতাস মুখরিত হয়ে ওঠে।

মুসল্লিদের বাঁধভাঙা জোয়ার

বিশ্ব ইজতেমায় অংশগ্রহণকারীরা তো ছিলেনই, শুধু আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা ছুটে আসতে থাকেন শনিবার থেকেই। বাস, ট্রাক, মিনিবাস, কার, মাইক্রোবাস, ট্রেন, লঞ্চ ও স্টিমারে করে টঙ্গীতে পৌঁছে অবস্থান নিতে শুরু করেন। রাজধানীসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন ভিড় এড়াতে শীত, কুয়াশা ও নানা ঝক্কি ঝামেলা উপেক্ষা করে রাতেই টঙ্গীমুখী হন।

রোববার সকালেও চারদিক থেকে মুসল্লিরা হেঁটেই টঙ্গী বিশ্ব ইজতেমা স্থলে পৌঁছান। সকাল ৮টার আগেই ইজতেমা মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে মুসল্লিরা মাঠের আশপাশের রাস্তা, অলি-গলি, বিভিন্ন ভবনের ছাদে অবস্থান নেন। ইজতেমাস্থলে পৌঁছাতে না পেরে কয়েক লাখ মানুষ কামারপাড়া সড়ক ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নেন। রোববার ভোর থেকেই ফজরের নামাজ ও আখেরি মোনাজাতের জন্য পুরোনো খবরের কাগজ, পাটি, সিমেন্টের বস্তা ও পলিথিন বিছিয়ে বসে পড়েন।

ga-(2).jpg

এছাড়া পার্শ্ববর্তী বাসা-বাড়ি-কলকারখানা-অফিস-দোকানের ছাদে, যানবাহনের ছাদে ও তুরাগ নদীতে নৌকায় মুসল্লিরা অবস্থান নেন। যে দিকেই চোখ যায় সে দিকেই দেখা যায় শুধু টুপি-পাঞ্জাবি পরা মানুষ। ইজতেমাস্থলের চারপাশের ৩-৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আখেরি মোনাজাতের জন্য রোববার আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কলকারখানাসহ বিভিন্ন অফিস-আদালতে ছিল ছুটি। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা না করলেও কর্মকর্তাদের মোনাজাতে অংশ নিতে বাধা ছিল না।

নানা বয়সী ও পেশার মানুষ এমনকি নারীরাও ভিড় ঠেলে মোনাজাতে অংশ নিতে রোববার সকালেই টঙ্গী এলাকায় পৌঁছান।

গাজীপুর ও টঙ্গীর সব কারখানায় ছুটি

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে গাজীপুর ও টঙ্গীর সব কারখানায় ছুটি ছিল। ফলে এবার এসব কারখানার শ্রমিকদের ইজতেমায় আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে সমস্যা হয়নি।

মোনাজাতে যা বলা হয়

মাওলানা জুবায়ের মোনাজাতে বলেন, হে আল্লাহ তুমি তো ক্ষমাশীল, তোমার কাছেই তো আমরা ক্ষমা চাইব। দ্বীনের ওপর আমাদের চলা সহজ করে দাও। হে আল্লাহ, তুমি আমাদের ওপর সন্তুষ্ট হয়ে যাও। আমরা যেন তোমার সন্তুষ্টিমাফিক চলতে পারি সে তৌফিক দাও। দুনিয়ার সব বালা-মুসিবত থেকে আমাদের হেফাজত করো। নবিওয়ালা জিন্দেগি আমাদের নসিব করো। হে আল্লাহ আমাদের ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত সব গুনাহ মাফ করে দেন। গোপন গুনাহ, প্রকাশ্য গুনাহ সব গুনাহ মাপ করে দেন। এ বিশাল ময়দানে যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদের মধ্য থেকে যার হাতকে আপনার পছন্দ হয় তার উছিলায় আমাদের সবার মোনাজাত কবুল করে নেন। আজ আমরা তওবা করছি সব প্রকার গুনাহ থেকে দূরে থাকবো।

ga-(2).jpg

আমাদের জিন্দেগি গুনাহমুক্ত হওয়ার তৌফিক দেন। দুনিয়ার সব নর-নারীর জীবনের গুনাহ মাফ করে দেন। হে আল্লাহ ইমানের হাকিকতে তামাম নসিব করে দেন। হে আল্লাহ ইমানি সিফাত আমাদের মধ্যে পয়দা করে দেন। হে আল্লাহ আমাদের ইমানি জিন্দেগি নসিব করে দেন। হে আল্লাহ আমাদের আমানি হাওয়া চালিয়ে দেন। হে আল্লাহ ইমানকে শক্তিশালী করে দেন।

মোনাজাতে নারীদের অংশগ্রহণ

বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে বিপুল সংখ্যক নারী অংশ নেন। ইজতেমায় নারীদের অংশ নেওয়ার বিধান নেই। তবে আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে কয়েক হাজার নারী আগের দিন রাত থেকে ইজতেমা ময়দানের আশপাশ, বিভিন্ন মিলকারখানা, বাসা-বাড়িতে অবস্থান নেন। ভোর থেকে নারীরা ইজতেমা ময়দানের পাশে টঙ্গী আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল মাঠ, ইজতেমা মাঠের পশ্চিম পাশে কামারপাড়া ও আশপাশের খোলা ময়দানে অবস্থান নেন।

মোনাজাত শেষে বাড়ি ফেরা ও যানজট

আখেরি মোনাজাত শেষ হওয়ার পরপরই বিভিন্ন স্থান থেকে আশা মানুষ নিজ গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করেন। আগে যাওয়ার জন্য মুসল্লিরা তাড়াহুড়ো শুরু করে। এতে টঙ্গীর কামারপাড়া সড়ক, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের আহসানউল্লাহ মাস্টার উড়াল সেতু ও আশপাশের সড়ক-মহাসড়ক এবং সংযোগ সড়কগুলোতে দীর্ঘ জনজট ও যানজট দেখা দেয়। যানজট নিরসন করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের হিমশিম খেতে হয়।

চারদিন বিরতি দিয়ে আগামী শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) থেকে শুরু হবে বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। ২২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মাধ্যমে শেষ হবে চলতি বছরের বিশ্ব ইজতেমা।

মো. আমিনুল ইসলাম/এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।