হুমগুটি খেলা দেখতে লাখো জনতার ভিড়

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ময়মনসিংহ
প্রকাশিত: ০৯:২৪ এএম, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩

ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলায় লক্ষ্মীপুরের বড়ই আটায় তালুক-পরগনার সীমানায় অনুষ্ঠিত একটি ঐতিহ্যবাহী খেলা হুমগুটি। ব্রিটিশ আমলে জমিদারদের জমির বিরোধের মীমাংসা করতে আয়োজন হয়েছিল এ খেলার। পরে আমন ধান কাটা শেষে ও বোরো ধান আবাদের আগে প্রজাদের শক্তি পরীক্ষার জন্য আয়োজন করা হতো এ খেলার। এরই ধারাবাহিকতায় আড়াইশো বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে এই ঐতিহ্যবাহী হুমগুটি খেলা।

শনিবার (১৪ জানুয়ারি) বিকেল ৩টার দিকে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। কয়েক হাজার খেলোয়াড় এ খেলায় অংশ নেন। খেলা দেখতে কয়েক লাখ মানুষের সমাগম হয়।

আরও পড়ুন: ঠাকুরগাঁওয়ে হা-ডু-ডু খেলা দেখতে জনতার ভিড়

জানা যায়, মূলত ব্রিটিশ আমলে জমিদারদের জমির বিরোধ মীমাংসার জন্যই গুটি খেলার আয়োজন করা হয়। খেলার শর্ত ছিল-গুটি যাদের সীমানার দিকে বেশি নিয়ে গুম করতে পারবে, তারা হবেন তালুক। পরাজিত দল হবে পরগনা। সে সময় মুক্তাগাছার জমিদার বিজয়ী হন এবং তাদের আওতাভুক্ত স্থানকে তালুক নামকরণ করা হয়। তখনকার সেই খেলা আজও ধারণ করে আসছে সেখানকার মানুষ।

খেলার তারিখ নির্ধারণ করা হয় বাংলা সাল হিসেব করে। পৌষের শেষদিন অনুষ্ঠিত হয় এ খেলা। উপজেলার লক্ষ্মীপুর, বড়ই আটা, বাটিপাড়া, বালাশ্বর, চরকালিবাজাইল, তেলিগ্রাম, সাড়ুটিয়া, ইচাইল, কাতলাসেনসহ অন্তত ১৫-২০টি গ্রামের মানুষ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে। ঘরে ঘরে চলে নতুন ধানের পিঠা-পুলির উৎসব। পিঠার মধ্যে অন্যতম নুন-মরিচের পিঠা, গুটা পিঠা, তেলের পিঠা, দুধ চিতই পিঠা, কলার পিঠা। গ্রামগুলোতে খেলার কয়েকদিন আগেই আসতে থাকে দূর-দূরান্তের আত্মীয়-স্বজন।

আরও পড়ুন: মণিপুরিদের বিলুপ্ত ‘কাং খেলার’ ঐতিহ্য ফিরে আসছে

খেলা দেখতে আসা বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম বলেন, আড়াইশ বছরের বেশি সময়ের এ ঐতিহ্যবাহী গুটি খেলার শুরু করার একটি নির্দিষ্ট সময় থাকলে শেষ হওয়ার কোনো সময় থাকে না। তবে দুই তিন দিন খেলা একটানা চলে।

jagonews24

স্থানীয় হযরত আলী বলেন, আমি নিজে গুটি খেলেছি। এখন বয়সের কারণে খেলি না। এটি আমাদের ফুলবাড়িয়ার ঐতিহ্য। খেলাটি এখনো বেঁচে আছে বিলুপ্ত হয় নাই ভাবতে অবাক লাগে। আজকের খেলা গভীর রাতে শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

হুমগুটি মিলন মেলার সভাপতি এবি সিদ্দিক বলেন, বিকাল তিনটার দিকে খেলা শুরু হয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে দলে দলে খেলোয়াড়রা আসছে। গুটি মূলত শক্তি পরীক্ষার খেলা। যারা শক্তি বেশি প্রদর্শন করবে তারাই খেলতে খেলতে এক সময় লুকিয়ে ফেলবে এবং খেলাটি শেষ হবে।

আরও পড়ুন: পত্নীতলায় তাসমিনা-হালিমার অংশগ্রহণে জমজমাট ঘোড়দৌড়

এবিষয়ে ফুলবাড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত খেলা চলছে। অপ্রীতিকর যেকোনো ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন করা আছে।

মঞ্জুরুল ইসলাম/জেএস/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।