ব্রহ্মপুত্র শুকানোর অপেক্ষায় থাকেন তারা
দেশের প্রায় সব নদীই এখন প্রাণহীন। নদীর তলদেশ ভরাট হওয়ার ফলে তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনাবেষ্টিত গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, ফুলছড়ি, সদর, সাঘাটা এই চার উপজেলার বিভিন্নস্থানে প্রতিবছর দেখা দিচ্ছে নদী ভাঙন। এতে করে ভিটেমাটিসহ সব হারাচ্ছে নদীপাড়ের বাসিন্দারা।
নদীর কারণে এক সময় গাইবান্ধায় ছিল প্রচুর গাছপালা, সবুজের প্রাচুর্য। তবে এখন সেই নদীই যেন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে এ অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য। কেড়ে নিচ্ছে তাদের সহায়-সম্বল। প্রতিবছরই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে নদী ভাঙন। সব হারিয়ে প্রতিবছর নতুন করে নিঃস্ব হচ্ছেন নদীপাড়ের মানুষ। তবু বেঁচে থাকার জন্য নতুন করে স্বপ্ন দেখেন নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা।
আরও পড়ুন: গাইবান্ধার চরে যাতায়াতে একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি
চর-দ্বীপচরের প্রতিটি বালুকণায় মিশে আছে তাদের হাড়ভাঙ্গা খাটুনি। যাদের শ্রমে ফসলে ভরে ওঠে বিস্তীর্ণ বালুচর। গবাদিপশুর একটা বড় অংশই আসে চরাঞ্চলের মানুষগুলোর গোয়াল থেকে। অথচ এই জনপদের বাসিন্দাদের জীবন কখনো কখনো দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। যেমন গ্রীষ্মকাল মানে দুঃখ কষ্টের পাহাড় এখানে। যখন নদ-নদী শুকিয়ে চৌচির। তখন পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হয় মাইলের পর মাইল। বিশেষ করে এখানে কেউ অসুস্থ হলে চিকিৎসকের মুখ দেখার আগেই দেখা হয়ে যায় আজরাইলের সঙ্গে। তারপরও হাসিমুখে বেঁচে আছেন এই এলাকার মানুষজন। নেই কোনো অভিমান।
চারিদিকে ব্রহ্মপুত্রের ধু ধু বালুচর। একদৃষ্টে তাকিয়ে আছেন কালাম মিয়া। চোখ জুড়ে তার যাত্রীর জন্য প্রতীক্ষা। বিস্তীর্ণ বালুচর পেরিয়ে ঘোড়ার গাড়িতে যাত্রী ও মালামাল পৌঁছে দেবেন নির্দিষ্ট গন্তব্যে।
আরও পড়ুন: চরাঞ্চলে ভরসা কেবল ঘোড়ার গাড়ি
গাইবান্ধার ব্রহ্মপুত্রের চরে ঘোড়ার গাড়ি চালান কালাম মিয়া। বাড়ি তার সদর উপজেলার কামারজানির আদর্শবাড়ি গ্রামে। গাড়ি চালিয়ে প্রতিদিন আয় করেন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। ঘোড়ার খাওয়ার জন্য প্রতিদিন খরচ হয় ২০০ টাকা। বাকি টাকা দিয়ে সংসার চালান। স্ত্রী, দুই ছেলে ও দুই মেয়ে তার। এক মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।
ডিসেম্বর মাস থেকে এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র শুকিয়ে জেগে ওঠে বিশাল চর। এসময় নৌ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে চর পেরুতে হয় ঘোড়ার গাড়ি বা ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে। তখন চরবাসীদের কাছে এসব যানবাহন যাতায়াতের একমাত্র বাহন হয়ে ওঠে। শুষ্ক মওসুমে কালাম মিয়ার মতো আরও অনেকে ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে আসেন ব্রহ্মপুত্রের চরে যাত্রী বহনের জন্য।
আরও পড়ুন: বেশি ফলনেও হতাশ চরাঞ্চলের কৃষকরা
তিনি বলেন, চার-পাঁচ মাস চলে এই যাত্রী বহনের কাজ। এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি ব্রহ্মপুত্রে পানি এলে বন্ধ হয়ে যায় কাজ। তখন থেকে কালাম মিয়ার মতো অনেকেই আবার দিন গুণতে থাকেন ব্রহ্মপুত্র শুকিয়ে যাওয়ার।
জেএস/এমএস