দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের পদভারে মুখর তুরাগ তীর

আমিনুল ইসলাম
আমিনুল ইসলাম আমিনুল ইসলাম , জেলা প্রতিনিধি গাজীপুর
প্রকাশিত: ০৯:০১ এএম, ১২ জানুয়ারি ২০২৩

ঘন কুয়াশা, কনকনে শীত আর শৈত্যপ্রবাহ উপক্ষো করে লাখ লাখ মুসল্লির পদভারে পরিপূর্ণ তুরাগ তীর। শুক্রবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও মূলত বুধবার রাতেই পুরো ইজতেমা ময়দান পুরিপূর্ণ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবারও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে দল বেধে মুসল্লিরা আসছেন ইজতেমা ময়দানে।

বৃহস্পতিবার সকালে ইজতেমা ময়দানে গিয়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন খিত্তা অনুযায়ী ইজতেমা ময়দানে অবস্থান নেওয়া মুসল্লিরা তাদের আমীরের দেওয়া দীনের বয়ান শুনছেন। যদিও কেন্দ্রীয়ভাবে মূল বয়ান শুরু হবে শুক্রবার বাদ ফজর থেকে। এখন ইজতেমায় আগত সকল মুসল্লিদের তাদের নিজ নিজ দলের আমীরের মাধ্যমে ইজতেমার যাবতীয় ইমান, আদব, আখলাক ও শৃংখলা নিয়ে কথা বলছেন। ইজতেমায় তাদের দলের সদস্যদের কার কী কাজ, কে কী দায়িত্ব পালন করবে তা ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন- টঙ্গীর তুরাগ তীরে মুসল্লিদের ঢল

বুধবার রাত থেকেই দেশ-বিদেশের মুসল্লিরা জামাতবদ্ধ হয়ে দলে দলে ইজতেমা মাঠের নির্ধারিত স্থানে (খিত্তায়) প্রয়োজনীয় মালামাল ও ব্যাগ নিয়ে অবস্থান করছেন। তিনদিন ব্যাপী বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব ১৫ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।

কাল শুক্রবার দেশের সর্ববৃহৎ জুম্মার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে এই ইজতেমা ময়দানে। এতে প্রায় ১০ লাখ মুসল্লি এক জামাতে শরিক হয়ে জুম্মার নামাজ আদায় করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। রাজধানী ও গাজীপুরের বিভিন্ন উপজেলা এবং আশপাশের জেলা থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি এ বৃহৎ জুম্মার নামাজে শরিক হবেন।

ইজতেমা মাঠের মুরুব্বিরা জানান, তাবলীগ জামাতের উদ্যোগে প্রতিবছর বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়। মাঠের সব কাজ করা হচ্ছে পরামর্শের মাধ্যমে। এখানে বিদ্যুৎ, পানি, প্যান্ডেল তৈরি, গ্যাস সরবরাহ প্রতিটি কাজই আলাদা আলাদা গ্রুপের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। বিশ্বের প্রায় সব মুসলিম দেশ থেকেই তাবলীগ জামাতের অনুসারী মুসলমানরা অংশ নেন। তারা এখানে তাবলীগ জামাতের শীর্ষ আলেমদের বয়ান শোনেন এবং ইসলামের দাওয়াতী কাজ বিশ্বব্যাপী পৌঁছে দেওয়ার জন্য জামাতবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে যান।

আরও পড়ুন- ডান্ডাবেড়ি নিয়ে মায়ের জানাজা পড়ানো বিএনপি নেতা আলী আজম কারামুক্ত

বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের মিডিয়া সমন্বয়কারী মুফতি জহির ইবনে মুসলিম বলেন, বুধবার থেকে দেশি-বিদেশি মুসল্লিরা ময়দানে এসে ইজতেমায় যোগ দেওয়া শুরু করেছেন। বিদেশিরা ইজতেমা ময়দানের উত্তর-পশ্চিম পাশে তাদের জন্য উন্নত তাবুতে এসে অবস্থান নিচ্ছেন। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৬টি দেশের প্রায় দেড় হাজার বিদেশি মেহমান এসে ময়দানে অবস্থান নিয়েছেন। তাদের পাশাপাশি একই সময়ে দেশের প্রায় সব জেলা থেকে লাখো মুসল্লি এসে ময়দানে নির্ধারিত খিত্তায় হাজির হয়েছেন।

তিনি আরো জানান, আল্লাহর অশেষ রহমতে সভাপতিহীন বিশ্ব ইজতেমার এতো বড় আয়োজন প্রতিবছরই অত্যন্ত সু-শৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করা হয়। এজন্য আমাদের কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পুরো ইজতেমা ময়দানকে মুরুব্বীদের পরামর্শে সাজানো হয়। ময়দানে জেলাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান, রান্না-বান্না করার স্থান, টয়লেট, অজুখানা, গোসলখানা সবই সুর্নিদিষ্ট করা থাকে।

আরও পড়ুন- ছেলের বাসায় বেড়াতে এসে সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মায়ের মৃত্যু

এদিকে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম জানান, ইজতেমার নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকছে প্রায় সাড়ে সাত হাজার পুলিশ ও র‌্যাবসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। কয়েকটি স্তরের এ নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ইজতেমা ঢেকে রাখা হবে। কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন ঘটতে না পারে সে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে।

পুলিশ ও র‌্যাবের কন্ট্রোল রুম থেকে নিরাপত্তার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরাও ব্যবহার করা হচ্ছে। নিরাপদ যাতায়াত ও সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে প্রতিদিন ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।

এছাড়া মাঠের উত্তর-পশ্চিম পাশে নির্মিত বিদেশি নিবাসে বিদেশি মুসল্লিরা থাকবেন। ইজতেমা ময়দানের পশ্চিম পাশে মুসল্লিদের পারাপারের জন্য তুরাগ নদীর উপর ৫টি স্থানে ৫টি ভাসমান সেতু স্থাপন করেছে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ব্রিগেড।

র‌্যাবের কার্যক্রম

বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের সার্বিক নিরাপত্তা ও নজরদারির সুবিধার্থে সমগ্র ইজতেমা ময়দারকে ঘিরে থাকছে র‌্যাবের অবজারভেশন পোস্ট। নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে নিশ্ছিদ্র করার লক্ষ্যে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে র‌্যাবের পর্যাপ্ত সংখ্যক সদস্য ২৪ ঘণ্টা বিশ্ব ইজতেমা মাঠে পর্যায়ক্রমে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছেন।

এছাড়া একটি প্রধান নিয়ন্ত্রণ কক্ষ পর্যাপ্ত সিসিটিভির মাধ্যমে সার্বক্ষণিকভাবে মনিটরিং করা হবে। ইজতেমার অভ্যন্তরে ছদ্মবেশে ও বিশেষ পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারি ও আভ্যন্তরীণ টহলের মাধ্যমে স্থল ফোর্স, নৌ টহলের পাশাপাশি হেলিকপ্টার যোগে পর্যায়ক্রমে টহল প্রদানের মাধ্যমে নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ ও যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনারোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

র‌্যাবের বোম্ব স্কোয়াড এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখা হবে। মুসল্লিদের চিকিৎসা সেবা দেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে র‌্যাবের মেডিকেল টিম দায়িত্ব পালন করবে।

যানবাহন চলাচল ও পার্কিং

বিশ্ব ইজতেমায় মুসল্লিদের নিরাপদ যাতায়ত এবং সুষ্ঠুভাবে যানবাহন চলাচলের সুবিধার্থে পুলিশ বিভাগ ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন জানান, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা সুষ্ঠু রাখতে এবার নজরদারী তিনগুণ বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যাপ্ত সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। সঙ্গে থাকছে আইপি ক্যামেরাও। ট্রাফিক পুলিশ তিন শিফটে দিনে ও রাতে ২৪ ঘণ্টা ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করবেন।

গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানান, জেলা প্রশাসন বিশ্ব ইজতেমার সার্বিক কর্মকাণ্ড সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন বিভাগের কাজের সমন্বয় করে থাকে। বিদেশি মেহমানদের আবাসস্থল নির্মাণের নিমিত্তে টিন সরবরাহ, বিভিন্ন দফতরের কন্ট্রোল রুমের স্থান নির্ধারণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকার পাশাপাশি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকা বিভাগীয় প্রশাসনের দিক নির্দেশনায় বিভিন্ন কার্যাদি তদারকি করে থাকে। সর্বপরি বিশ্ব ইজতেমার সকল দিক জেলা প্রশাসন পর্যবেক্ষণ করে।

এফএ/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।