দিনাজপুরে ৮ ডিগ্রি তাপমাত্রা, আগুন পোহাচ্ছেন শ্রমিক-দিনমজুররা
দিনাজপুরে সাত দিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ চলছে। ঘন কুয়াশা আর হিমেল বাতাসে হাড় কাঁপানো শীত অনুভূত হচ্ছে। এতে জনজীবন বিপর্যস্ত। কৃষিতেও পড়েছে এর প্রভাব। দোকানপাট খুলছে বেলা ১১টার পর। স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কমেছে।
বুধবার (১১ জানুয়ারি) বেলা ১১টায়ও নেই সূর্যের দেখা। জেলাজুড়ে ঘন কুয়াশা পড়ছে। সঙ্গে আছে হিমেল বাতাস। কনকনে শীতে প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বের হচ্ছেন না। যানবাহনও চলাচল করেছে অপেক্ষাকৃত কম। আবার দূর পাল্লার পরিবহনগুলো কুয়াশার কারণে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীর গতিতে চলছে।
পেটের দায়ে বাধ্য হয়ে শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে বের হয়েছেন দিনমজুর ও খেটে খাওয়া মানুষ। তবে কাজে যোগ দেওয়ার আগে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। পরিবহন শ্রমিকদেরও আগুন পোহাতে দেখা গেছে।
সকাল ৯টার দিকে দিনাজপুরের নিমনগর ফুলবাড়ী বাসস্ট্যান্ডে কাগজ, পলিথিন, খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। এ সময় কথা হয় চেইন মাস্টার মো. মানিকের সঙ্গে।
তিনি বলেন, ‘ভাই ভোর সাড়ে ৫টার সময় এসেছি। কনকনে শীতে দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন হয়ে পড়েচে। সাতদিন ধরে দিনাজপুরে শৈতপ্রবাহ চলছে। তাই কাগজ, গাছের পাতা ও পলিথিন দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রেখেছি। আমি নিজে তো আগুন পোহাচ্ছি, আবার যাত্রী ওঠানামার ফাঁকে শ্রমিক-চালকরাও আগুনের কাছে আসছেন। বাসে যাত্রীও কমে গেছে।
অপর পাশে আরেক শ্রমিক মো. স্বপনও আগুন জ্বালিয়ে রেখেছেন। তিনি বলেন, শ্রমিকরা কনকনে শীতে টিকতে পারছে না। তাই আগুন জ্বালিয়ে তাদের সহযোগিতা করছি। কিছু সময়ের জন্য হলেও একটু উষ্ণতা পাচ্ছে।
সকাল সাড়ে ৮টার দিকে দিনাজপুর পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে চকলেট কারখানার মোড়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন ওএমএসের চাল ও আটা নিতে আসা মানুষ।
চাল-আটা নিতে আসা ৫৫ বছর বয়সী মো. জাবেদ আলী বলেন, ‘ভোরে এসেছি। শীতে অবস্থা কাহিল। ব্যাগ মাটিতে রেখে সিরিয়াল দিয়েছি। এখন কয়েকজন মিলে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছি। আর কিছুক্ষণ পর চাল আটা দেওয়া শুরু হবে। তখন গিয়ে লাইনে দাঁড়াবো।’
পৌর শহরের রাস্তাঘাটে অপেক্ষাকৃত লোকজন কম দেখা গেছে। বাজারেও প্রয়োজন ছাড়া তেমন কেউ ঢোকেনি। নাজমুল ইসলাম নামে এক কাঁচামাল ব্যবসায়ী বলেন, ‘আলু পেঁয়াজ থেকে শুরু করে সব ধরনের সবজির দাম কমেছে। কিন্তু ক্রেতা নেই। তাই বিক্রিও কম। শীতের কারণেই এ অবস্থা।’
অপরদিকে স্কুল কলেজগুলোতেও উপস্থিতি কমেছে। কনকনে শীতে শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না। অভিভাবকরাও তাদের শিশুদের স্কুলে কম পাঠাচ্ছেন।
আনোয়ার সাদাত মন্ডল নামে এক শিক্ষক বলেন, ‘শীত অনেক বেশি, নতুন বছরের শুরু তাই স্কুলে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কম।’
ফজিবর রহমান বাবু নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘কনকনে শীতে অনেক কষ্ট করে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে এসেছি। স্কুলগুলোতে কিছুটা উপস্থিতি কম। তবে শীত কমে গেলে উপস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’
সদর উপজেলার কমলপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা আব্দুর রহমান বলেন, ‘কনকনে শীতের কারণে কৃষি শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। বীজতলা কুঁকড়ে যাচ্ছে। আলুর পরিচর্যা করা যাচ্ছে না। গরু ছাগলকে চটের বস্তা দিয়ে ঝুল বানিয়ে পরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরকম শীত চলতে থাকলে বোরো চারা রোপণ কিছুটা দেরিতে শুরু হবে।’
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান আসাদ জাগো নিউজকে বলেন, আজ থেকে সাত দিন ধরে ৯ এর ঘরে। বাতাসের আদ্রতা ও গতি বাড়ায় এবং ঠিকমতো সূর্য না ওঠায় কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। বুধবার দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এসজে/জেআইএম