ফরিদপুরের বোয়ালমারী

বিলুপ্তপ্রায় কৃষি উপকরণের সংগ্রহশালা ‘গাঁও গেরাম ভিলেজ পার্ক’

এন কে বি নয়ন এন কে বি নয়ন ফরিদপুর
প্রকাশিত: ০৪:২৭ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০২৩

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার চতুল ইউনিয়নের হাসামদিয়া গ্রামে গড়ে উঠেছে ‘গাঁও গেরাম ভিলেজ পার্ক’ নামের একটি বিনোদন কেন্দ্র। এটি একটি কৃষি জাদুঘরও। কেননা ঢেঁকি, মই, লাঙল, জোয়াল, গরুর গাড়ির চাকা, তেল ভাঙানোর ঘানি, বিলুপ্তপ্রায় নানা কৃষি উপকরণ ও গ্রামীণ জিনিসপত্র স্থান পেয়েছে এই পার্কে। জেলা-উপজেলা ছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে এখানে ছুটে আসছেন বিনোদনপ্রেমীরা।

jagonews24

সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলা সদর থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে ভিলেজ পার্কটি অবস্থিত। প্রায় ৩০ একর জায়গায় ওপর নির্মিত পার্কটিতে অন্তত আড়াইশ প্রজাতির ভেষজ, ঔষধি ও ফলদ গাছ রয়েছে। ১০টি লেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ, প্যাডেল বোর্ড, শিশুদের জন্য চরকিসহ নানা ধরনের রাইডিং রয়েছে। গাছের ওপর নির্মাণ করা হয়েছে ‘টি হাউজ’। হরিণসহ নানা প্রাণী ও একসঙ্গে কয়েকশ মানুষের পিকনিক করার ব্যবস্থা রয়েছে। পার্কটি পরিচালনার জন্য একজন ম্যানেজারসহ চারজন স্টাফ রয়েছেন।

jagonews24

উপজেলার চতুল ইউনিয়নের হাসামদিয়া গ্রামের মির্জা জাকারিয়া বেগ এবং তার দুই ভাই মির্জা শামসুজ্জামান বেগ ও মির্জা কামরুজ্জামান বেগে গাঁও গেরাম ভিলেজ পার্কটির মালিক।

jagonews24

সরেজমিনে দেখা যায়, ঢেঁকি, মই, লাঙল, জোয়াল, গরুর গাড়ির চাকা, তেল ভাঙানোর ঘানি, হারিয়ে যাওয়া কৃষি উপকরণ স্থান পেয়েছে এ পার্কে। পাশাপাশি এখানে রয়েছে কৃষিসমৃদ্ধ একটি পাঠাগারও। ছন দিয়ে নির্মিত প্রবেশদ্বার। কৃষিকাজের নানা উপকরণ, দড়ি পাকানোর ঢ্যারা, আমপাড়ার জালি, লাঙল-জোয়াল, গরুর গাড়ির ছই, গরুর টোনা, মাছ ধরার পলো থেকে শুরু করে হারানো দিনের নানা কৃষি উপকরণে সাজানো হয়েছে কৃষি জাদুঘরটি। পাশেই অবস্থিত কৃষি পাঠাগারে রয়েছে কৃষকের স্বাস্থ্যশিক্ষা ও চাষবাসসহ নানা পরামর্শমূলক ও শিক্ষনীয় প্রায় পাঁচ শতাধিক বই।

jagonews24

মিনি পার্ক ও কৃষি জাদুঘরটি দেখতে আসা মিথিলা বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটি ব্যতিক্রমী একটি বিনোদন কেন্দ্র। বিশেষ করে কৃষিভিত্তিক জ্ঞান অর্জনের বেশ উপযুক্ত একটা জায়গা। পার্কটি ঘুরে কৃষি ও কৃষকদের বিষয়ে বেশ কিছু অজানা বিষয় জানতে পারলাম। হারানো দিনের বিভিন্ন ধরনের কৃষি উপকরণগুলো দেখে বেশ ভালো লাগলো।’

jagonews24

ঘুরতে আসা অসিম সরকার জাগো নিউজকে বলেন, ‘এখানে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে এসে পার্কটির নাম শুনে ঘুরতে এসেছি। দেখে খুব ভালো লাগলো। ব্যতিক্রমী একটি বিনোদন কেন্দ্র।’

jagonews24

গাঁও গেরাম ভিলেজ পার্কের মালিক ও উদ্যোক্তা মির্জা জাকারিয়া বেগ জাগো নিউজকে বলেন, ‘কৃষকের মধ্যে বাস্তবভিত্তিক জ্ঞান দিতে এ কৃষি জাদুঘর গড়ে তোলা। প্রায় একযুগ ধরে তিলে তিলে এটা গড়ে তুলেছি। এখনো সংগ্রহ করে চলেছি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ভ্রমণের সময় যেখানে আদি বাংলার কোনো উপকরণ চোখে পড়ে, সেগুলো সংগ্রহ করে আমার কৃষি জাদুঘরে সাজিয়ে রাখি।’

jagonews24

মির্জা জাকারিয়া বেগের ভাই মির্জা শামসুজ্জামান বেগ জাগো নিউজকে বলেন, আমি সার্বক্ষণিক পার্কটি দেখাশোনা করি। উপজেলার মধ্যে আমাদের এই পার্কটি একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র। পার্কটি আরও বড় পরিসরে এবং নানা উপকরণে সাজানোর কাজ চলছে।

jagonews24

তিনি বলেন, গড়ে প্রতিদিন প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ বিভিন্ন স্থান থেকে পার্কটি দেখতে আসেন। ৫০ টাকা প্রবেশ ফি দিয়ে পার্কের সবকিছু বিনামূল্যে দেখার ব্যবস্থা রয়েছে।

jagonews24

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোশারেফ হোসাইন বলেন, পার্কটিতে এখনো যাওয়া হয়নি। তবে সময় করে যাওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। গাঁও গেরাম ভিলেজ পার্কে গড়ে ওঠা কৃষি সংগ্রহশালাটি ভবিষ্যতে আরও সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে সহযোগিতা থাকবে।

jagonews24

এ বিষয়ে ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক জিয়াউল হক জাগো নিউজকে বলেন, কালের বিবর্তনে কৃষিক্ষেত্রেও আধুনিকতার ছোঁয়ায় উদ্ভাবিত হচ্ছে নতুন নতুন যন্ত্রপাতি। ফলে কৃষির পুরোনো যন্ত্রপাতিগুলো আজ প্রায় বিলুপ্তির পথে। কৃষি ও কৃষকদের আধুনিকরণের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মকে মডেল কৃষির সঙ্গে যুক্ত করতে এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়।

এন কে বি নয়ন/এসআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।