ফেনী কলেজ

২২ হাজার শিক্ষার্থীর গ্রন্থাগারে আসন ১৬!

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফেনী
প্রকাশিত: ০৫:৩২ পিএম, ০৯ জানুয়ারি ২০২৩
দুই টেবিলে মাত্র ১৬ শিক্ষার্থী বসতে পারেন

ফেনী সরকারি কলেজে ২২ হাজার শিক্ষার্থী থাকলেও গ্রন্থাগারে মাত্র আসন আছে ১৬টি। পর্যাপ্ত বই থাকলেও পড়ার পরিবেশ না থাকায় ক্রমেই গ্রন্থাগার বিমুখ হচ্ছেন শতবর্ষী এ প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা।

সরেজমিনে দেখা যায় গ্রন্থাগারের দুরাবস্থা। কলেজের পুরাতন লাল দালানের দোতলার মাঝামাঝি একটি কক্ষে গ্রন্থাগারটি। আছে আলোক স্বল্পতা। ২৯টি সেলফে গাদগাদি করে রাখা হয়েছে বই। কিছু চেয়ার-টেবিলেও স্তূপ করে রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বসার জন্য আছে দুটি টেবিল। এতে বসতে পারেন ১২-১৬ জন।

কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ লাইব্রেরিতে শতবছর আগের বইও সংরক্ষিত আছে। তবে ভবনটি জরাজীর্ণ হওয়ায় বৃষ্টি হলেই ছাদ ছুঁয়ে পানি পড়ে। তখন ত্রিপল দিয়ে সেলফ ঢেকে রাখতে হয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের বসার পরিবেশও থাকে না। এ নিয়ে বিভিন্ন সময় গ্রন্থাগারটি অন্যত্র স্থানান্তরের আলোচনা হলেও এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

গ্রন্থাগারিক বাবুল চন্দ্র সাহা চলতি বছর রাজধানীর সরকারি তিতুমীর কলেজে বদলি হয়েছে। ফলে তার পদটি শূন্য পড়ে আছে। সহকারী গ্রন্থাগারিক আরজিনা আক্তার চৌধুরী ভারপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিকের দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি বলেন, শতবর্ষী এ কলেজে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হলেও গ্রন্থাগারে এর ছোঁয়া লাগেনি। এখানে শত বছরের ইতিহাস সমৃদ্ধ অনেক গুণী লেখকের বই সংরক্ষিত আছে। পাশাপাশি বৈজ্ঞানিকদের রচিত বিভিন্ন বইও আছে। গ্রন্থাগারটি সুন্দর পরিবেশে স্থানান্তর করা হলে একদিকে রক্ষণাবেক্ষণ হবে অন্যদিকে শিক্ষার্থীরাও গ্রন্থাগারমুখী হবে।

fe-1

একাধিক শিক্ষার্থী জানান, কলেজ চলাকালে শিক্ষার্থীদের চাপ থাকায় গ্রন্থাগারে বসার জায়গা পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে পরীক্ষার আগে শিক্ষার্থীদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হয়।

কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি নোমান হাবিব বলেন, গ্রন্থাগারে বসার পর্যাপ্ত আসন না থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের অনেক কষ্ট হয়। অনেকে বসার জায়গা না পেয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থেকে ফিরে যায়।

কলেজ ছাত্র সংসদের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক নুর করিম জাবেদ বলেন, গ্রন্থাগারে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস সংবলিত অনেক বই আছে। কক্ষটি ব্যবহার অনুপযোগী হওয়ায় আগামী প্রজন্মের জন্য বইগুলো জরুরি ভিত্তিতে সংরক্ষণ প্রয়োজন।

কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি তোফায়েল আহম্মদ তপু বলেন, গ্রন্থাগারে পড়াতো দূরের কথা ভেতরে প্রবেশেরও পরিবেশ নেই। লাইব্রেরিটি পাঁচ তলা বিশিষ্ট কমিশনার জয়নাল আবদীন ভবনে স্থানান্তর করতে বেশ কয়েকবার আবেদন জানানো হয়েছে। কলেজ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে বরাবরই উদাসীন।

এ বিষয়ে কলেজশিক্ষক পরিষদ সম্পাদক জয়নাল আবদীন জাগো নিউজকে বলেন, প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে লাল ভবনটি পুনর্নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আর্থিক বরাদ্দ পেলে কাজ শুরু হবে। এরআগে শিক্ষক পরিষদের সভায় কমিশনার জয়নাল আবদীন ভবনের ১০১ ও ১০২ নম্বর কক্ষে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই ভবনে চলে গেলে গ্রন্থাগার আরও দৃশ্যমান হবে। গ্রন্থাগারে ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার্থে দুজন অফিস সহায়ককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ফেনী সরকারী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, কলেজের ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা অনুযায়ী একটি গ্রন্থাগার ভবন প্রয়োজন। করোনাকালে বরাদ্দ না পাওয়ায় অনেক উন্নয়ন কাজই থেমে যায়। এছাড়া কমিশনার জয়নাল আবদীন ভবনে একাধিক বিভাগের শ্রেণি কার্যক্রম চলায় গ্রন্থাগার সেখানে স্থানান্তর করা যায়নি।

এসজে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।