যৌনপল্লিতে বিক্রি করা স্বামীর সংসারই করতে চান স্ত্রী

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি পটুয়াখালী
প্রকাশিত: ০৫:১২ পিএম, ০৫ জানুয়ারি ২০২৩

পটুয়াখালীতে স্বামীর কাছে স্ত্রীর মর্যাদা দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক নারী। বৃহস্পতিবার (৫ জানুয়ারি) সকালে পটুয়াখালী জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে সাহিনুর বেগম সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।

ভুক্তভোগী সাহিনুর বেগম দাবি করেন, ‘বরিশাল সদর উপজেলার ১০নং চন্দ্রমোহন ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের ভেদুরিয়া গ্রামের মৃত জালাল খানের ছেলে মো. জাহিদ খানের সঙ্গে ১৪ বছর আগে তার বিয়ে হয়। সেসময় ইসলামী শরিয়া মোতাবেক নিজ বাড়িতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ভাই আলমগীর, ইসমাইল, বোন মিতু ও বকুল এবং তার মা খালেদার উপস্থিতিতে সাহিনুর বেগমকে বিয়ে করেন জাহিদ। বিয়ের প্রায় দুই বছর পর জাহিদ বিদেশ যাওয়ার কথা বলে সাহিনুরের কাছে ২ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। যৗতুকের টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে শুরু হয় শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।

একদিন নির্যাতনের পর চিকিৎসার নাম করে সাহিনুরকে বরিশাল শহরে নিয়ে আসেন এবং কিছু ওষুধ খাওয়ান জাহিদ। সেসময় সাহিনুর বেগম ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। সেখান থেকে তাকে পটুয়াখালীতে নিয়ে এসে বোন পরিচয় দিয়ে এক বাসায় রেখে চলে যান জাহিদ। পরে সাহিনুর জানতে পারেন তাকে সেখানে যৌনপল্লির দালালের কাছে বিক্রি করে মোটা অংকের টাকা নেওয়া হয়েছে। আর সেই টাকা দিয়েই বিদেশে পাড়ি দেন স্বামী জাহিদ খান।

এদিকে ওষুধ খাওয়ার ২০ দিন পর একটি মৃত সন্তান প্রসব করেন সাহিনুর। এরপর দীর্ঘ ১০ বছর পতিতাবৃত্তি করার পর মুক্তি মেলে সাহিনুরের। এখন নিজে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে সেখানে বসবাস করছেন।

তবে সম্প্রতি তিনি জানতে পারেন তার স্বামী মো. জাহিদ খান দেশে ফিরেছেন। এমন খবর পেয়ে ২০২২ সালের ৫ ডিসেম্বর সহিনুর তার এক পরিচিত জনকে নিয়ে জাহিদের বাড়ি রওনা হন। এ সময় পথে চন্দ্রমোহন ইউনিয়ন পরিষদের সামনে জাহিদকে দেখতে পান। সাহিনুরকে দেখে জাহিদ একটি দোকানে নিয়ে বসান এবং তিনি কেন সেখানে গেছেন সেজন্য তাকে গালমন্দ করতে থাকেন।

সাহিনুর বলেন, ‘আমি স্ত্রীর মর্যাদা দাবি করলে আমার ওপর চড়াও হন তিনি। এক পর্যায়ে ৬নং ওয়ার্ডের ভেদুরিয়ার ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন সুজন ও স্থানীয় গ্রাম্য ডাক্তার লিটনের সহযোগিতায় পরিষদের এক রুমে আটকে আমাদের মারধর করেন। ওই সময় আমাদের সঙ্গে থাকা টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যান জাহিদের লোকজন।

খবর পেয়ে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান বন্দর থানা পুলিশের মাধ্যমে আমাদের উদ্ধার করে পটুয়াখালী পাঠিয়ে দেন।

সংবাদ সম্মেলনে সাহিনুর কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, আমি কী অপরাধ করেছি, আমার জীবনটা কেন এভাবে চলবে। আমি তো স্বামীর সংসার করতে চাই। আমি আমার স্বামীর কাছে অধিকার ফিরে পেতে চাই। আর না হলে বিচার চাই।

আব্দুস সালাম আরিফ/এফএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।