২০২২ সালে দক্ষিণবঙ্গবাসীর জন্য সরকারের সেরা উপহার পদ্মা সেতু

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুর
প্রকাশিত: ০৪:১৩ পিএম, ০৪ জানুয়ারি ২০২৩

দেশে সড়ক পথে যোগাযোগের নতুন দিগন্ত স্থাপন করেছে বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু। ২০২২ সালটি তাই দক্ষিণবঙ্গবাসীর কাছে স্মরণীয় একটি বছর। বিদায়ী বছরে দক্ষিণাঞ্চলের ফরিদপুর, শরীয়তপুর, মাদারীপুরসহ ২১টি জেলার বাসিন্দাদের প্রাপ্তির ঝুলিতে সবচেয়ে বড় অর্জন ছিল এই স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

পদ্মা সেতু চালুর পর এরইমধ্যে শিল্প, কৃষি ও পর্যটনখাতে বহুমুখী প্রকল্প নিয়ে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন বিনিয়োগকারীরা। অবহেলিত দক্ষিণবঙ্গের সংশ্লিষ্ট জেলাগুলোতে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। লাখো মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে পদ্মা সেতুর ফলে। এক কথায় বলা যায়, পদ্মা সেতু স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি সবক্ষেত্রে পরিবর্তন আর উন্নয়নের ছোঁয়া লাগিয়েছে।

বিদায়ী বছরে স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় ফরিদপুর, শরীয়তপুর ও মাদারীপুরবাসীর অভিব্যক্তি জানার চেষ্টা করেছে জাগো নিউজ। বিস্তারিত জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে।

ফরিদপুর:
এ জেলার বাসিন্দারা বলছেন, বিদায়ী সালটি তাদের কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। কারণ ২০২২ সালে তাদের বড় একটি আকাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। পদ্মা সেতু ও ঢাকা-ভাঙ্গা সড়কে এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ফলে এ রুটে যাতায়াতের ভোগান্তি ও সময় অনেক কমেছে। ঢাকায় কর্মরত ফরিদপুর অঞ্চলের মানুষ নিজ বাড়ি থেকেই অফিস-আদালত, জরুরি কাজকর্ম করছেন। সেতু নির্মাণের আগে ফরিদপুর থেকে ঢাকা যেতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগতো। এখন দুই ঘণ্টার মধ্যে ঢাকায় পৌঁছানো যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষার মাধ্যমে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সূত্রপাত। মূল কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের শেষের দিকে। পদ্মা সেতুর দ্বার খুলেছে ২০২২ সালের ২৫ জুন। এ সেতু দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মোট ২১টি জেলাকে সড়কপথে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। কংক্রিট আর ইস্পাতের কাঠামোয় পদ্মা নদীর দুই প্রান্তের সামাজিক ও অর্থনৈতিক যোগাযোগের সেতুবন্ধনও তৈরি হয়েছে।

ফরিদপুরের বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্রে জানা গেছে, ফরিদপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর মানুষ ও ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ অপেক্ষার অবসানও ঘটায় এই স্বপ্নের সেতু। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলাতেই বিসিক শিল্পনগরী রয়েছে। এর মধ্যে গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুরে আছে দুটি করে শিল্পনগরী। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রায় ২ হাজার ৪০০ একর জায়গায় এ শিল্পনগরী করার পরিকল্পনা বিসিকের। ২০২৬ সালের মধ্যে এসব শিল্পনগরী বাস্তবায়ন করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য প্রায় আট হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

ফরিদপুর মোটর ওয়ার্কার ইউনিয়নের সভাপতি মো. জুবায়ের জাকির জাগো নিউজকে বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু আমাদের ফরিদপুরবাসীর জন্য আশীর্বাদ। সেতু পাড়ি দিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে ঢাকা-ফরিদপুর যাতায়াত করা যাচ্ছে। শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থাই নয়, সেতুর চালুর পর অর্থনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক সবদিক দিয়েই উন্নয়ন হয়েছে। ২০২২ সাল আমাদের ফরিদপুরবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় উপহার স্বপ্নের পদ্মা সেতু।

ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার সি এম আক্তার হায়দার জাগো নিউজকে বলেন, পদ্মা সেতু ফরিদপুরবাসীর সবদিক দিয়েই উন্নয়ন সাধিত করেছে। পদ্মা সেতু দিয়ে রেল চলাচল শুরু হলে মানুষ বাড়ি থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গিয়ে অফিস-আদালত, কাজকর্ম করতে পারবেন আরও সহজভাবে।

ঢাকার একটি ওষুধ কোম্পানিতে কর্মরত ফরিদপুরের বাসিন্দা রাকিবুল হাসান টোকন জাগো নিউজকে বলেন, এ বছরের আমাদের স্বপ্ন পূরণের বছর। এ সালে আমাদের বড় উপহার স্বপ্ন সেতু। আগে ভোগান্তির কারণে বাড়িতে যেতাম বছরে একবার। আর এখন প্রতি সপ্তাহে একবার করে বাড়িতে যাই, যা সেতুর কারণে সম্ভব হয়েছে।

ভাঙ্গা সদরের বাসিন্দা আব্দুল মান্নান জাগো নিউজকে বলেন, ২০২২ সালটিতে পাওয়া না পাওয়ার হিসেব কষলে দেখা যাবে আমাদের প্রাপ্তিই বেশি। এ সালটিতে দেশের বড়-মেগা প্রকল্প স্বপ্নের সেতুর দ্বার খুলেছে। সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে এ ফরিদপুরসহ দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হয়েছে।

নগরকান্দা পৌরসভার মেয়র নিমাই চন্দ্র সরকার জাগো নিউজকে বলেন, এ সালে আমাদের অনেক উন্নয়নের সেরা উন্নয়ন পদ্মা সেতু। পদ্মা সেতুকে নিয়ে আমরা গর্ববোধ করি। কয়েক বছর আগে যারা ভাঙ্গা-নগরকান্দা এসেছেন, এখন তারা চিনতে পারেন না। পদ্মা সেতুর কল্যাণে এখানে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের কাজ চলছে। এতে মানুষের কর্মসংস্থান হচ্ছে। আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে।

মধুখালী পৌরসভার মেয়র খন্দকার মোরশেদ রহমান লিমন জাগো নিউজকে বলেন, আগে পদ্মা পার হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে হতো। অনেক রোগী সময় মতো ফেরি পার হতে না পেরে পথেই মৃত্যু হয়েছে। এবছর সেতু চালুর ফলে এসব সমস্যা কেটে গেছে।

ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইসতিয়াক আরিফ জাগো নিউজকে বলেন, বিদায়ী বছরটি আমাদের ফরিদপুরবাসীর কাছে স্মরণীয় একটি বছর। ফরিদপুর ও দক্ষিণবঙ্গের সবদিক দিয়েই বিশাল পরিবর্তন এনেছে। সাধারণ মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ছাড়াও সেতুটি ব্যবসায়ীদের জন্য উন্নয়নের দ্বার খুলে দিয়েছে।

এ বিষয়ে ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লিটন ঢালী জাগো নিউজকে বলেন, বিদায়ী বছরটি দক্ষিণ অঞ্চল তো বটেই, বিশেষ করে ফরিদপুরবাসীর কাছে একটি স্মরণীয় বছর হিসেবে থাকবে।

তিনি বলেন, তুলনামূলকভাবে পদ্মা সেতুর আশপাশের ফরিদপুর অঞ্চলে জমির দাম কম। তবে শ্রমিকের সহজলভ্যতা রয়েছে। যার কারণে এ এলাকায় শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠায় আগ্রহী হচ্ছেন শিল্পপতিরা। শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে যেসব অনুকূল পরিবেশ থাকা দরকার, তার সবই ফরিদপুরে রয়েছে। পাশাপাশি পদ্মা সেতুর চালুর পর আরও বেশি সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) ফরিদপুরের উপ-মহাব্যবস্থাপক হ র ম রফিকউল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) প্রস্তাবিত নতুন শিল্পনগরীগুলো ফরিদপুরের নগরকান্দা শিল্পপার্কে হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।

শরীয়তপুর
শুধু ২০২২ সালই নয়, স্বাধীনতা পরবর্তী শরীয়তপুরবাসীর শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি পদ্মা সেতু। এই সেতুকে ঘিরে জেলায় অপার সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। এরমধ্যে দীর্ঘ প্রায় ৩৫ বছরের ভগ্নদশায় থাকা পরিবহন খাতে নতুন করে এ খাতে প্রায় ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। সেতু উন্মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পরিবহন খাত নতুন চেহারায় আবির্ভূত হয়েছে।

কথাগুলো বলছিলেন পরিবহন ব্যবসায় আসা নতুন উদ্যোক্তা শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস প্রাইভেট কোম্পানির অংশীদার সাইম মোল্লা। তার মতো অনেকেই বলছেন, পদ্মা সেতু ঘিরে শরীয়তপুরে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তারা বলছেন, পদ্মা সেতু শুধু যোগাযোগের দ্বারই উন্মুক্ত করেনি; শিল্প, সংস্কৃতি ও পর্যটনশিল্পসহ নানা ব্যবসার প্রসার ঘটিয়ে অর্থনীতিকে করেছে সমৃদ্ধ।

শরীয়তপুরের উদীয়মান কৃষি উদ্যোক্তা ও ভোজেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম শিকদার বলেন, মাছ, গরু, কৃষিপণ্য, মসলাসহ আমাদের উৎপাদিত অন্যান্য পণ্য শরীয়তপুরের বাইরে নেওয়া ছিল ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। আমরা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হতাম। ফলে কৃষি সেক্টর ছিল অনেকটাই অলাভজনক। পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর আমাদের যোগাযোগের সংকট কেটে গেছে।

শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফারুক আহমেদ তালুকদার বলেন, পদ্মা সেতু ঘিরে এরই মধ্যে শরীয়তপুর পরিবহন খাতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ হয়েছে। পরিবহন খাতের মতো সবক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে শুরু করেছে।

শরীয়তপুর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি, নড়িয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, মানি চেঞ্জার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ সভাপতি এ কে এম ইসমাইল বলেন, শরীয়তপুরে পর্যটনকেন্দ্রকে ঘিরে থ্রি-স্টার মানের হোটেল-মোটেল তৈরি হবে। গার্মেন্টস, মাঝারি শিল্প, মৎস্য, গবাদিপশু, কৃষিখাত, পরিবহন খাতসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এরইমধ্যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। যা শুধু এ অঞ্চলের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করবে না, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে জীবনমানের উন্নয়ন হবে। তাই পদ্মা সেতু শরীয়তপুরের জন্য শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি।

কৃষি বিজ্ঞানী বীরমুক্তিযোদ্ধা কবি মফিজুল ইসলাম বলেন, কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের উন্নয়নের পূর্বশর্ত হচ্ছে যোগাযোগব্যবস্থা। পদ্মা সেতু সেই যোগাযোগ ব্যবস্থার পালে নতুন হাওয়া দিয়েছে, যা শরীয়তপুরের কৃষিকে অনেক দূর এগিয়ে নিচ্ছে। তাই আমরা বলতে পারি, স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শরীয়তপুরে শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি পদ্মা সেতু।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর হারুন অর রশিদ বলেন, শরীয়তপুর ছিল একটি অনুন্নত জেলা। যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে এখানে ভালোমানের কোনো শিক্ষক আসতে চাইতেন না। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্যদিয়ে শরীয়তপুরের যোগাযোগব্যবস্থা আধুনিক হয়েছে। এখন ভালোমানের শিক্ষক এখানে পোস্টিং নিতে আসেন। এতে জেলার শিক্ষার মান আরও উন্নত হচ্ছে।

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন, পদ্মা সেতুকে ঘিরে শরীয়তপুরে অপার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে অনেকগুলো বৃহৎ শিল্প এখানে আসার অপেক্ষায় আছে। জেলা ব্র্যান্ডিং হিসেবে জাজিরার কালোজিরা মধু, মৃৎশিল্পের টেরাকোটা ও কাঁসা-পিতল শিল্পকে আমরা বিভিন্ন অনলাইন সাইট ও ই-কমার্সে দিয়েছি। সেগুলো এখন দেশ এবং দেশের বাইরে বিক্রি হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, দক্ষিণবঙ্গের ২১টি জেলায় মূলত কৃষিভিত্তিক শিল্প গড়ে উঠবে। তারই ফলে আমরা গোসাইরহাট চরজালালপুর মৌজায় একটি ইকোনমিক জোন করার জন্য জেলা প্রশাসন থেকে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। সেটা বেজা থেকে অনুমোদন হয়েছে।

তিনি বলেন, নদীবেষ্টিত এলাকা হিসেবে আমরা পর্যটনশিল্পকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছি। সেতু উদ্বোধনের পর অনেক ধরনের উন্নয়ন আমরা দেখছি। শরীয়তপুর কৃষিপ্রধান অঞ্চল হওয়ায় এরইমধ্যে কৃষি সেক্টরে অনেকে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছেন। আমরা কৃষিভিত্তিক অর্থনীতিকে গতিশীল করতে সংশ্লিষ্টদের উৎসাহিত করছি। ২০২৩ সালে পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে জাজিরার কৃষিপণ্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হবে।

পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় শরীয়তপুর আধুনিক ও স্বনির্ভর জেলা হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শরীয়তপুরে শেখ হাসিনা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিয়েছেন। এখানে শিক্ষা, সংস্কৃতি, কৃষি, পরিবহন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প কারখানা হবে।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তাঁতপল্লীসহ সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যকে ঘিরে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শরীয়তপুরে ব্যাপক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে। সব মিলে শরীয়তপুর উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তৈরি হয়েছে শেখ রাসেল ক্যান্টনমেন্ট। বঙ্গবন্ধুকন্যার কার্যকর উদ্যোগের ফলে শরীয়তপুরবাসী নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেয়েছে। তাছাড়া মেঘনা সেতু ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। ইনশাল্লাহ, শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায় আসবে। আর পরবর্তী পাঁচ বছরে শরীয়তপুর হবে বাংলাদেশের ১০টি জেলার মধ্যে একটি জেলা।

মাদারীপুর
২০২২ সালের মাদারীপুরসহ এই দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি, আনন্দের প্রাপ্তি পদ্মা সেতু। এই সেতুর জন্য এই অঞ্চলের হাজারো দুর্ভোগ দূর হয়েছে। সেইসঙ্গে এ সেতুর জন্য মাদারীপুরে বহুমাত্রিক উন্নয়ন হয়েছে এবং এখনো অনেক উন্নয়ন চলমান আছে। স্বপ্নের পদ্মা সেতু শুধু এপাড়-ওপাড়কে এক সুতোয় গেঁথে বন্ধন তৈরি করেনি, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ২১ জেলার সঙ্গে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশকে যুক্ত করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পদ্মা সেতুকে ঘিরে মাদারীপুরে নির্মাণ উন্নত দেশের আদলে এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ে করা হয়েছে। এরই মধ্যে জেলাজুড়ে বহু কাজ চলমানের পাশাপাশি প্রণয়ন করা হয়েছে নানা প্রকল্প। যার মধ্যে আছে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী, শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, দাদা ভাই উপশহর, মুজিব কেল্লা, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, শেখ রাসেল মিনি স্টেডিয়াম, হাইটেক পার্ক, সারাদেশের সঙ্গে দক্ষিণবঙ্গে রেলওয়ে নেটওয়ার্ক, ফোরলেন মহাসড়ক, ইনডোর স্টেডিয়াম, অলিম্পিক ভিলেজ। এসব প্রকল্প শেষ হলে মাদারীপুর পৌঁছে যাবে উন্নয়নের নতুন দিগন্তে।

জানা যায়, স্বপ্নের পদ্মা সেতুকে ঘিরে শিবচরে ১২০ একর জমির ওপর ১ হাজার ৯১১ কোটি টাকা ব্যয়ে চলছে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লীর কর্মযজ্ঞ। প্রকল্পটির জন্য মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুরে ও জাজিরার নাওডোবা এলাকায় কাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পে প্রত্যেক তাঁতির জন্য ৬০০ ফুটের কারখানা ও ৮০০ ফুটের মধ্যে আবাসন সুবিধা থাকবে। নির্মিত হবে আন্তর্জাতিক মানের শো-রুম ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। তাঁতিদের ছেলেমেয়েদের জন্য থাকবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এছাড়া শিবচরে আট একর জমিতে ১৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে চলমান রয়েছে শেখ হাসিনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কাজ। প্রস্তাবিত হাইটেক পার্ক, ইনডোর স্টেডিয়াম, অলিম্পিক ভিলেজসহ একাধিক মেগা প্রকল্প। সম্পন্ন হয়েছে দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেস হাইওয়ের (যাত্রাবাড়ী-শিবচর-ভাঙ্গা) শিবচর অংশে দৃষ্টিনন্দন ১৫ কিলোমিটারের কাজ।

অন্যদিকে, ঢাকা-মুন্সিগঞ্জ থেকে পদ্মা সেতু ও জেলার শিবচর হয়ে পুরো দক্ষিণাঞ্চল রেলওয়ের নেটওয়ার্কের আওতায় আনার কাজ চলমান আছে। শিবচর-ভাঙ্গা-মাদারীপুর হয়ে রেললাইন চলে যাবে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। সেতু চালুর পর পরীক্ষামূলকভাবে রেলও চালানো হয়েছে। সবমিলিয়ে এই পদ্মা সেতু হচ্ছে মাদারীপুরবাসীর জন্য ২০২২ সালের সবচেয়ে বড়প্রাপ্তি।

মাদারীপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, পদ্মা সেতু হচ্ছে এই অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের স্বপ্ন। এই পদ্মা সেতুর জন্য অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। আবার অনেক মেগা প্রকল্পগুলো চলমান আছে। নতুন নতুন প্রকল্প পাস হচ্ছে। এরইমধ্যে এই সেতুর জন্য শিবচরসহ দক্ষিণাঞ্চলের নতুন ধরনের অর্থনৈতিক পরিবর্তন শুরু হয়েছে।

মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান বলেন, পদ্মা সেতু হচ্ছে এই দক্ষিণাঞ্চলের আশীর্বাদ। এই অঞ্চলের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া সেরা উপহার। পদ্মা সেতু এই অঞ্চলের উন্নয়নের অগ্রদূত।

মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য ড. আবদুস সোবাহান গোলাপ বলেন, এই পদ্মা সেতু মাদারীপুরের উন্নয়নের পাশাপাশি যোগাযোগ ব্যবস্থায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই জেলার মানুষ সকালে ঢাকা গিয়ে কাজ শেষ করে আবার বিকেলে মাদারীপুরে ফিরে আসতে পারেন। যা এই পদ্মা সেতুর জন্য সম্ভব হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতু নির্মাণ করে শুধু বাংলাদেশে নয় সারাবিশ্বে সুনাম অর্জন করেছেন।

মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, পদ্মা সেতু হচ্ছে মাদারীপুরসহ এই দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের স্বপ্নের সেতু। পদ্মা সেতুর জন্যই মাদারীপুরের অর্থনৈতিকসহ নানা দিক আস্তে আস্তে পরিবর্তন হচ্ছে।

এন কে বি নয়ন/মো. ছগির হোসেন/এমআরআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।