দু’দশক পর নতুন স্বপ্ন দেখাচ্ছে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল

আলমগীর হান্নান আলমগীর হান্নান খুলনা
প্রকাশিত: ০৭:২৭ পিএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০২২

এশিয়ার বৃহত্তম ও খুলনার ঐতিহ্য খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল আবারও চালু হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। মিলটি বন্ধ হওয়ার দুই দশকের বেশি সময় পর বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) এখানে নতুন আঙ্গিকে আবারও পেপার মিল চালু করবে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে বিসিআইসির একটি পরামর্শক টিম বর্তমানে মিলে অবস্থান করছে। তাদের দেওয়া প্রতিবেদনের ওপরই বিসিআইসি পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। মিলটি চালু হলে আবারও শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠবে মিল চত্বর।

সূত্র জানায়, সুন্দরবনের গেওয়া কাঠের ওপর ভিত্তি করে ১৯৫৭ সালে নগরীর খালিশপুরে (ভৈরব নদের তীরে) ৮৮ দশমিক ৬৮ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল। ১৯৫৯ সালে মিলটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন শুরু করে। তখন মিলটির বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ৪৮ হাজার টন।

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে লাভজনক থাকা মিলটি ১৯৯২ সাল থেকে লোকসানের সম্মুখীন হতে শুরু করে। ১৯৯৫-৯৬ অর্থবছরে নিউজপ্রিন্টের ওপর ৭৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের পর অনেক ব্যবসায়ী বিদেশ থেকে কাগজ আমদানি শুরু করেন। ফলে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলে উৎপাদিত ৫২ গ্রামের নিউজপ্রিন্টের চাহিদা কমে যায়।

চাহিদা কম থাকলেও তা কোন রকমে সামলে উঠেছিল মিলটি। কিন্তু সুন্দরবনকে বিশ্বের ঐতিহ্যের অংশ ঘোষণার পর আরও বিপাকে পড়ে যায় মিল কর্তৃপক্ষ। অব্যাহতভাবে লোকসান দিতে শুরু করে মিলটি। মাত্র সাত বছরে (১৯৯৫ থেকে ২০০২) মিলটির লোকসানের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৮৪ কোটি টাকা। ক্রমাগত লোকসান এবং মূলধনের ঘাটতির কারণে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর মিলটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় এবং প্রায় ৩ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী বেকার হয়ে পড়েন।

বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ মু. আশরাফ উজ জামান বলেন, মিলটি পূনরায় চালু করার জন্য খুলনাবাসী অনেক আন্দোলন সংগ্রাম করেছে। এখানে ভিন্ন কিছু করারও প্রস্তাব দেওয়া হয় সরকারকে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মিলের বৃহৎ একটি অংশ দিয়ে দেওয়া হয়েছে নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেডকে। সেখানে এই কোম্পানি ‘রূপসা ৮০০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট’ স্থাপন করছে। পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে বলেও জানান তিনি।

খুলনা উন্নয়ন কমিটির সভাপতি আরও বলেন, নিউজপ্রিন্ট মিলের বাকি জমিতে নতুন পেপার মিল হবে বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু কবে নাগাদ কী হবে তা জানা সম্ভব হয়নি।

jagonews24

এক সময় খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলে চাকরি করা খালিশপুর বিআইডিসি রোডের চা দোকানি মিকাইল হোসেন বলেন, আমরা কয়েকদিন ধরে শুনছি নিউজপ্রিন্ট মিল আবার চালু হবে। আমার চাকরি ফিরে পাই বা না পাই, মিলটি চালু হলে মৃত শিল্পাঞ্চল একটু হলেও চাঙ্গা হবে।

তিনি বলেন, আমার মতো অনেকেই চাকরি হারিয়ে হয়তো ইজিবাইক চালিয়ে জীবনধারণ করছে, নয়তো চায়ের দোকান দিয়েছে। অনেকেই চলে গেছে তাদের গ্রামের বাড়িতে। তবে পাওয়ার প্লান্ট হওয়ায় আমার ব্যবসা একটু হলেও ভালো চলছে।

নিউজপ্রিন্ট মিল সংলগ্ন পোড়া মসজিদ রোডের বাসিন্দা মো. হুমায়ূন কবীর বলেন, আমরাও চাই মিলটি আবারও চালু হোক। নিউজপ্রিন্ট না হয়ে হোয়াইট প্রিন্ট মিল হলেও কোনো অসুবিধা নেই।

বর্তমানে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের (বিসিআইসি) কয়েকজন কর্মকর্তা এবং কয়েকজন নিরাপত্তা কর্মী খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের মালামাল দেখাশোনা করেন। বিসিআইসির একটি ক্যাম্পও স্থাপন করা হয়েছে মিলের অভ্যন্তরে।

মিলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ আরিফুজ্জামান বলেন, মিলের মোট জমির মধ্যে থেকে ৫০ একর জমি আগেই দিয়ে দেওয়া হয়েছে নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিডেটকে। সেখানে তারা পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের কাজ অব্যাহত রেখেছে। এখনও ৫০ একরের বেশি জমি রয়েছে। সেখানে বিসিআইসি নতুন করে শিল্প প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) বিসিআইসির একটি পরামর্শক টিম ঢাকা থেকে খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলে আসেন। তারা মিলটি পরিদর্শন শেষে প্রতিবেদন দাখিল করবেন। তাদের দেওয়া প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে বিসিআইসি পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে। হতে পারে নতুন আঙ্গিকে পেপার মিল চালু হবে।

এফএ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।