ফরিদপুরে হালি পেঁয়াজের চারা রোপণের ধুম
দেশজুড়ে পেঁয়াজ চাষে বিখ্যাত ফরিদপুর। এখানকার কৃষকদের প্রধান অর্থকরী মসলা জাতীয় ফসল এটি। জেলাজুড়ে এখন চলছে হালি পেঁয়াজের চারা রোপণের মৌসুম। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ফসলি জমিতে দলবেঁধে পেয়াঁজ রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। জেলা-উপজেলার বিভিন্ন মাঠে হালি পেঁয়াজ রোপণের ধুম পড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশজুড়ে পুরো বছর ধরে পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোরে মাঠে নামছেন ফরিদপুরের কৃষকেরা। সন্ধ্যা পেরিয়ে গেলেও তাদের মাঠেই পড়ে থাকতে দেখা যায়। শিশু-কিশোর ও নারীরাও বসে নেই। তারাও সমান তালে জমিতে হালি পেঁয়াজ রোপণ করছেন।
এখানকার মাটি ও আবহাওয়া পেঁয়াজ চাষের উপযোগী হওয়ায় জেলার ৯টি উপজেলাতেই হালি পেঁয়াজের আবাদ হচ্ছে। তবে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় নগরকান্দা, সালথা, মধুখালী, সদরপুর, চরভদ্রাসন ও সদর উপজেলায়। এখানকার উৎপাদিত পেঁয়াজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ফরিদপুরে প্রায় ৪১ হাজার ৮১০ হেক্টরের অধিক জমিতে হালি পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। পুরোদমে শুরু হয়েছে চারা রোপণ। ফরিদপুরে ৯টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি হালি পেঁয়াজ চাষ হয়ে থাকে সালথা ও নগরকান্দায়। তবে গতবারের উৎপাদিত পেঁয়াজের আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় অনেক কৃষক হতাশার পাশাপাশি অন্য ফসল আবাদেও ঝুঁকেছেন।
সরেজমিনে বিভিন্ন উপজেলার কয়েকটি মাঠে দেখা যায়, কনকনে ঠান্ডা ও ঘন কুয়াশা উপেক্ষা করে ভোর থেকে দুজন করে শ্রমিক চার খিল লাঙল দিয়ে জমিতে দাগ কেটে দিচ্ছেন আর ২০ থেকে ৩০ জনের একদল কৃষক সারিবদ্ধভাবে বসে সেখানে পেঁয়াজের চারা রোপণ করছেন। অন্যদিকে, আরও একদল কৃষক পেঁয়াজের চারা (হালি) উত্তোলন করে এনে জমিতে কর্মরত শ্রমিকের হাতে ধরিয়ে দিচ্ছেন। এরপর জমিতে চারা রোপণের কাজ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ইঞ্জিনচালিত শ্যালোমেশিন দিয়ে সেচ ও সার-ওষুধ ছিটিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এভাবেই চলছে পুরো জেলাজুড়ে পেঁয়াজ আবাদের কর্মযজ্ঞ।
সালথা উপজেলার সোনাপুর ইউনিয়নের চান্দাখোলা এলাকার কৃষক মতিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, হালি পেঁয়াজ রোপণে এবছর বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মতো খরচ হচ্ছে। বর্তমান বাজারে পেঁয়াজের যে দাম, এই দাম থাকলে পেঁয়াজ আবাদে আমাদের লাভ তো দূরে থাক লোকসান শুনতে হবে। তারপরও পেঁয়াজের ফলন ও ভালো দামের আশায় রোপণ করছি। শ্রমিকের মূল্য, সার-কীটনাশক থেকে শুরু করে ডিজেল সবকিছুরই বাজার চড়া। ফলে খরচ বেশি, লাভ কম।
বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়নের সুতালীয়া গ্রামের পেঁয়াজ চাষি সুবীর বিশ্বাস জাগো নিউজকে বলেন, বর্ষার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বীজতলা তৈরি করে পেঁয়াজের চারা তৈরি করতে হয়। চারার বয়স ২০ থেকে ২৫ দিন হলেই অগ্রহায়ণের মাঝামাঝি থেকে পৌষ মাসের প্রথম থেকে ক্ষেতে হালি পেঁয়াজ রোপণ করা হয়। আর চৈত্র মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ফসল তোলা শুরু হয়।
ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. জিয়াউল হক জাগো নিউজকে বলেন, চলতি মৌসুমে এ জেলায় ৪১ হাজার ৮১০ হেক্টরের অধিক কৃষি জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এবছর জেলায় হালি পেঁয়াজের ব্যাপক আবাদের আশা করা যাচ্ছে। এরইমধ্যে রোপণ মৌসুম শুরু হয়েছে। পেঁয়াজ উৎপাদনে দেশের মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ফরিদপুর।
এন কে বি নয়ন/এমআরআর/এএসএম