হাওর রক্ষা বাঁধ

বরাদ্দ শত কোটি থাকলেও কাজ শেষ নিয়ে শঙ্কা

লিপসন আহমেদ লিপসন আহমেদ , সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ০৩:৪৭ পিএম, ২১ ডিসেম্বর ২০২২

সুনামগঞ্জের হাওরে বোরো ধানের বীজতলা তৈরি শেষ পর্যায়ে। আগামী সাত দিনের মধ্যে পুরোদমে শুরু হবে বোরো ধান রোপণ মৌসুম। এবার যথাসময়ে হাওরে থেকে পানি নামছে। আবহাওয়াও ভালো রয়েছে। তবে প্রতিবছরের মতো এবারও যথাসময়ে হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু না হওয়ায় চিন্তিত কৃষকরা।

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৩৭টি হাওর রয়েছে। এসব হাওরের বেড়িবাঁধের আয়তন প্রায় এক হাজার ৭১৮ কিলোমিটার। ২০২১-২০২২ অর্থবছরে প্রায় ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭২৭টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল। এরমধ্যে ৫৩০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ মেরামত ও সংস্কার করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে হাওরের বোরো ফসল রক্ষার জন্য বাঁধের নির্মাণকাজ সম্পন্ন করতে প্রাথমিকভাবে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে পাউবো।

গত অক্টোবর থেকে তাদের ২৭টি দল (সার্ভেয়ার ও উপ-সহকারী প্রকৌশলী) হাওরে গিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই করেছে। এখনো প্রাক্কলনের কাজ চলছে।

সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে প্রি-ওয়ার্ক (সম্ভাব্যতা যাচাই) শেষ করে প্রকল্প গ্রহণ ও অনুমোদন, ১৫ ডিসেম্বর কাজ শুরু এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু জেলার ১২ উপজেলায় মঙ্গলবার (২০ ডিসেম্বর) পর্যন্ত মাত্র ১৯৩টি প্রকল্প চূড়ান্ত করা হয়েছে। এদিন মাত্র ৪০টি প্রকল্পের কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। কৃষকরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ে যদি বাঁধের কাজ শুরু না হয় তাহলে বোরো ধান হুমকির মুখে পড়বে।

করচার হাওর পাড়ের কৃষক মনু মিয়া বলেন, ‘এক সপ্তাহ পর আমরা বোরো ধান রোপণ করবো। এরই মধ্যে বীজতলা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। তবে প্রতিবছর হাওর রক্ষা বাঁধ দেরিতে শুরু হওয়ায় আমাদের নানা দুশ্চিন্তায় পড়তে হয়। এবারও আমরা আশ্বস্ত হতে পারছি না।’

কৃষক স্বপন কুমার বর্মণ জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা হাওরপাড়ের মানুষ। প্রতিবছর বছর বন্যায় আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বোরো ধান রোপণ করবো কিন্তু এখন পর্যন্ত হাওর রক্ষা বাঁধের কাজ পুরোদমে শুরু হয়নি। যা শুরু হয়েছে তা নামমাত্র।’

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে (২৮ ফেব্রুয়ারি) ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করার দাবি জানান কৃষক হায়দার আলী।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা দুই লাখ ২২ হাজার ৩০০ হেক্টর। যা থেকে ধান হবে ১৩ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন, চাল উৎপাদন হবে ৯ লাখ মেট্রিক টন। যা টাকার পরিমাণে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।

এখন পর্যন্ত জেলার পাঁচ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো রোপণ শুরু হয়েছে। চাষিরা আগামী সপ্তাহ থেকে পুরোদমে বোরো ধানের চাষাবাদ শুরু করবেন।

সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, হাওরে পানি থাকার কারণে প্রি-ওয়ার্ক ও এস্টেমেট (প্রাক্কলন) করতে বিলম্ব হয়। এ কারণে যাচাই-বাছাই করে প্রকল্প গ্রহণ শেষ করে কাজ শুরু করতে দেরি হয়। তাছাড়া যে যন্ত্র দিয়ে মাটি কেটে বাঁধে ফেলা হয় সে যন্ত্রও হাওরের মাটি ভেজা থাকায় নামানো যায় না। যে কারণে বিলম্ব হয়। তবে এখন পর্যন্তু ৪০ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও হাওরের বাঁধ ব্যবস্থাপনা জেলা কমিটির সভাপতি দিদারে আলম মোহাম্মদ মাকসুদ চৌধুরী বলেন, নির্ধারিত ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে কাজ শেষ হবে বলে আশা করছি।

এসআর/এএসএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।