চীন থেকে আমদানি বন্ধ
স্থানীয় স্কুল ব্যাগের ওপর নির্ভরশীল ভৈরবের দোকানিরা
চাইনিজ স্কুল ব্যাগের আমদানি কমে যাওয়ায় দেশীয় কারখানায় উৎপাদিত ব্যাগের ওপর নির্ভর করছেন ভৈরবের বিক্রেতারা। তবে স্থানীয় কারখানা মালিকদের দাবি দেশের বাজারে ব্যাগ তৈরির সরঞ্জামের দাম দ্বিগুণ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়েছে। কিন্তু বাজারে তাদের উৎপাদিত ব্যাগের দাম বাড়ছে না। যদি সামনের মৌসুমে বেশি দামে ব্যাগ বিক্রি না হয় তাহলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যাবে বলেও জানিয়েছেন তারা।
কিশোরগঞ্জের ভৈরবের কমলপুর, তাতারকান্দি, গাছতলাঘাট এলাকাসহ ১২-১৫টি ছোটবড় স্কুলব্যাগ তৈরির কারখানা রয়েছে। সেসব কারখানায় সরেজমিনে দেখা যায়, সামনের মৌসুমকে কেন্দ্র করে পুরোদমে নতুন ব্যাগ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা।
তবে কারখানা মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিশ্ববাজারে সব জিনিসপত্রের দাম বাড়ার কারণে স্কুলব্যাগ তৈরির সরঞ্জামের দামও বেড়েছে। আগে একটি ব্যাগ তৈরি করে যে পরিমাণ খরচ হতো বর্তমানে একই ব্যাগ তৈরি করতে খরচ পড়ছে দ্বিগুণ।
দেশি ব্যাগের ওপর নির্ভর করছেন দোকানিরা-ছবি জাগো নিউজ
১৫ বছর ধরে ব্যাগ তৈরির কারখানার সঙ্গে জড়িত পৌর শহরের তাতারকান্দি এলাকার স্কুলব্যাগ তৈরির কারখানার মালিক মো. জাহাঙ্গীর।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, গত দুই বছর করোনার কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় আমাদের কারখানায় ব্যাগের উৎপাদন বন্ধ ছিল। সে সময়ে বাজারে একেবারেই স্কুলব্যাগের বেচাকেনা ছিল না। এখন দেশের পরিস্থিতির কারণে ব্যাগ তৈরির ম্যাটারিয়ালের যে হারে দাম বেড়েছে বাজারে ব্যাগের দাম সেভাবে বাড়েনি। ব্যবসায়ীরা বাড়তি দামে সরঞ্জাম কিনে ব্যাগ তৈরি করে বাজারে লাভবান হচ্ছেন না। কারখানায় উৎপাদিত ব্যাগ বাজারে খরচের চেয়ে ১০-২০ টাকা কম দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। এখন আমরা দুশ্চিন্তায় আছি, এভাবে আর ক’দিন ব্যবসা করবো?
ভৈরব গাছতলাঘাট এলাকার ব্যাগ কারখানার মালিক মো. লিটন মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এ বছর ব্যবসার অবস্থা শোচনীয়। আমার ২০ বছরের ব্যবসায়িক জীবনে এমনটা দেখিনি। প্রত্যেকটা জিনিসের দাম বেড়েছে। বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে প্রত্যেকটা উপকরণ। মজুরিও বাড়তি দিতে হচ্ছে। ঘরভাড়া ও খাদ্যদ্রব্যেরও দাম বাড়ছে। কিন্তু আমাদের দাম নেই! খুবই কঠিন অবস্থা পার করছি। অবস্থা এতটা শোচনীয় যে ব্যবসায় টিকে থাকতে পারবো কি না সন্দেহ আছে।
নতুন ব্যাগ তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা-ছবি জাগো নিউজ
ইত্যাদি কসমেটিকসের স্বত্বাধিকারী মো. খোকন মিয়া জানান, ভৈরব নিউমার্কেটসহ বাজারের সব ব্যাগ বিক্রেতাদের দাবি, বাজারে বিদেশি ব্যাগের আমদানি না থাকায় দেশের উৎপাদিত ব্যাগের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা যারা ব্যাগের ব্যবসা করি। নানা ধরনের ব্যাগের পাশাপাশি স্কুলব্যাগ বিক্রি করি, কিন্তু বর্তমানে স্কুলব্যাগের উৎপাদন এতটা কম যে, কারখানার মালিকদের কাছ থেকে বাড়তি দামে ব্যাগ আনতে হচ্ছে। যে ব্যাগ এক বছর আগে পাইকারি ৫০০ টাকা ছিল একই ব্যাগ এখন ৭৫০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। এসব ব্যাগ বাড়তি দামে বিক্রি করতে কষ্ট হচ্ছে। তবে পাইকারি বাজারেও ব্যাগের স্বল্পতা রয়েছে। আমরা মনমতো ব্যাগ পাচ্ছি না। এছাড়া এলসি বন্ধ থাকায় দেশের বাজারে চায়নিজ ব্যাগের আমদানি নেই। ফলে খুচরা বাজারে স্কুলব্যাগ বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
একটি স্থানীয় ব্যাগ তৈরির কারখানা-ছবি জাগো নিউজ
ভৈরব উদয়ন স্কুল পরিচালক ও নাট্যব্যক্তিত্ব মতিউর রহমান সাগর জাগো নিউজকে বলেন, গত দু’বছর করোনা পরিস্থিতিতে এমনিতেই দেশের শিক্ষাব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। দ্রব্যমূল্যের যে হারে ঊর্ধ্বগতি তাতে অনেক অভিভাবক শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় নিয়মিত জড়িত রাখতে পারছেন না। শিক্ষাক্ষেত্রে স্কুলব্যাগ অপরিহার্য। এর দামও যদি অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে তাহলে এটা কিন্তু অভিভাবকদের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
এটা শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেও মনে করেন তিনি।
এসএইচএস/এমএইচআর