ক্যানসার আক্রান্ত মায়ের কষ্ট দেখে বুক ফেটে যায় তাসিনের
ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার পৌর সদরের বাসিন্দা শাহনাজ পারভীন। দুই বছর ধরে প্যানক্রিয়াস ক্যানসারে ভুগছেন। ব্যয়বহুল এই রোগের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন তার স্বামী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ওবাইদুর রহমান। এতে তাদের দুই সন্তানের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে পরিবারটি।
ওবাইদুর রহমান ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ৯৮ নম্বর থানমাত্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক। বড় ছেলে সাজেদুর রহমান তামিম ভাঙ্গা সরকারি পাইলট স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। ছোট ছেলে শফিকুর রহমান তাসিন ভাঙ্গা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে।
মায়ের অসুস্থতার কারণে থমকে গেছে তাদের দুই ভাইয়ের শিক্ষাজীবন। অসুস্থ মায়ের দেখাশোনা করার জন্য তারা পালা করে একদিন বাদে একদিন স্কুলে যায়। আর স্বামী-সন্তানদের জন্য অসুস্থ শরীর নিয়েই সংসারের ঘানি টানছেন শাহনাজ। ভাঙ্গা শহরের হাসামদিয়ায় একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করেন তারা।
পেটে তীব্র ব্যাথা নিয়ে দুই বছর আগে বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গ্যাস্ট্রোলজি বিভাগে ভর্তি হন শাহনাজ পারভীন। সেখানকার চিকিৎসক ও গ্যাস্ট্রোলজির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ জানান তার লিভারে চর্বি জমেছে বলে জানান। এরপর ফ্যাটি লিভারের ওষুধ দেন তিনি। কিন্তু সেই ওষুধ সেবন করে তার সারা শরীর হলুদ বর্ণ হয়ে অবস্থার আরও অবনতি হয়। তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তার লিভারে টিউমার ধরা পড়ে।
চিকিৎসকের পরামর্শে শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল থেকে অস্ত্রোপচার করে তার খাদ্যনালী, পিত্তনালী ও রক্তনালী কেটে বিকল্প প্লাস্টিকের নালী স্থাপন করা হয়। এরপর ক্যানসার হাসপাতাল থেকে আটটি কেমো দেওয়া হয়। এভাবে চিকিৎসা চালিয়ে গেলেও উন্নতি না হওয়ায় গত জুলাইয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শে ভারতে নেওয়া হয় শাহনাজ পারভীনকে।
ভারতের ভেলোরের সিএমসি (খৃস্টান মেডিকেল কলেজ) হাসপাতালে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারা ওষুধপত্র লিখে ব্যবস্থাপত্র দেন। চার মাস পর আবার যেতে বলেন ফলোআপ চিকিৎসার জন্য। গত ১০ ডিসেম্বর তার ভেলোরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অর্থের অভাবে এখন আর সেটি সম্ভব হচ্ছে না।
শাহনাজ পারভীনের স্বামী ওবাইদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, এ পর্যন্ত তার স্ত্রীর চিকিৎসার পেছনে প্রায় সাত লাখ টাকা খরচ করেছেন। এজন্য জায়গা-জমি ও সঞ্চয়ের সবটুকুই চলে গেছে। এখন টাকার অভাবে তিনি স্ত্রীকে নিয়ে ভোলোরে যেতে পারছেন না। অর্থের সংস্থান করার মতো অন্য কোনো উপায়ও নেই তাদের। চোখের সামনেই ধুঁকে ধুঁকে মরতে বসেছেন তার স্ত্রী।
শাহনাজ পারভীন বলেন, ‘আমি মরে গেলে আমার ছোট দুটি সন্তানের জীবনও শেষ হয়ে যাবে। ওদের কে দেখবে? শুধু ওদের জন্য হলেও বেঁচে থাকতে চাই। আমি আল্লাহর কাছে শুধু এই দোয়াই করি।’
এই অসুস্থ শরীর নিয়েও স্বামী-সন্তানের জন্য রান্নাবান্না ও গৃহস্থালি কাজ করে যাচ্ছেন শাহনাজ পারভীন।
ছোট ছেলে তাসিন বলে, ‘আম্মু একবার রান্না করতে যায়, আবার পেটে ব্যথার কারণে বিছানায় এসে বসে। আবার উঠে রাঁধতে যায়।’
এ বিষয়ে ভাঙ্গা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পান্না মিয়া বলেন, অনেকদিন ধরে ওবাইদুর রহমানের স্ত্রী অসুস্থ। এ পর্যন্ত তিনি কখনও কারও দ্বারস্থ হননি। আমরা পৌরসভা থেকে তাকে দু-এক হাজার টাকা সহায়তা করতে পারি। কিন্তু তাতে তার কাজ হবে না। এ অবস্থায় সরকার তার পাশে দাঁড়ালে হয়তো বেঁচে যাবে এই অসুস্থ মা ও তার অসহায় পরিবারটি।
এন কে বি নয়ন/এসআর/এএসএম