উপহারের ঘর মাসের পর মাস তালাবদ্ধ, সামনে চরে গরু-ছাগল
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের রতনপুর গ্রামে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় ঘর পেয়েছে ১৪টি গৃহহীন পরিবার। রঙিন টিনের পাকা বাড়িগুলো এখন অনেকটাই গৃহস্থ বাড়ির মতো। তবে এমন সুন্দর বাড়ি পেয়েও বসবাস করছেন না অনেকে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দুস্থ ও অসহায়দের না দিয়ে সচ্ছল ব্যক্তিদের এই ঘর দেওয়া হয়েছে। তারা নিজের বাড়ি রেখে উপহারের ঘরে বসবাস করছেন না।
সরেজমিন গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর ইউনিয়নের রতনপুরের আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় দেখা যায়, রাস্তার পাশে তিনটি উপহারের ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। এতে বিদ্যুৎ সংযোগও আছে। পরিবেশও চমৎকার। তবে ঘরগুলোতে কেউ বসবাস করছেন না। ঘরের সামনে বেঁধে রাখা হয়েছে গরু। বারান্দায় খড়ি ও পাশে বিচালির পালা। ঘরগুলো তালাবদ্ধ।
কিছুটা দূরে দেখা মিললো আরও ১১টি উপহারের ঘর। তবে এখানেও তিনটি ঘরে থাকছেন না উপকারভোগীরা। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যারা ঘরগুলো বরাদ্দ পেয়েছেন তাদের কেউ চার মাস পরে আসেন, আবার কেউ আসেন না।
রাস্তার পাশের তিনটি ঘরের মধ্যে একটি পেয়েছেন গোমস্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) বাড়ির কেয়ারটেকার মোসারফ আলী। রহনপুর পৌর এলাকার কাশিমপুরে তার নিজস্ব বাড়ি থাকায় উপহারের ঘরে বসবাস করছেন না বলে জানান তার স্ত্রী শিউলি বেগম।
রতনপুরে উপহারের ঘর পেয়েও বসবাস করছেন না আরও পাঁচজন। তারা হলেন ওমর আলী, মোজাফফর হোসেন, শুভঙ্কর, বাবু আলী ও মুনিরুল ইসলাম।
মেরিনা বেগম নামের এক উপকারভোগী বলেন, ‘আমার বাড়ির পাশের ঘরটা পেয়েছেন মনিরুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু তিনি এখানে এসে থাকেন না। দুই তিনমাস পরে একদিন হয়তো সকালে আসেন, বিকেলে চলে যান।’
তিনি আরও বলেন, ‘এত সুন্দর ঘর করে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ। কোনো সমস্যা নেই; বিদ্যুৎ, পানির পাম্প সব পেয়েছি। তবে তারা যে কেন থাকছেন না তা আমার জানা নেই।’
রতনপুর জামে মসজিদের ইমাম মেরাজ আহম্মেদ জাগো নিউজকে বলেন, এখানে মোট ১৪টি ঘর করে দেওয়া হয়েছে। তবে রাস্তার পাশের তিনটি ঘরে কেউ থাকছেন না। সবসময় বন্ধ থাকে। মাঝে মধ্যে দেখি সন্ধ্যার পর কিছুলোক এসে ঘরগুলো খুলে আড্ডা মারে। পরে আবার চলে যায়।’
তিনি বলেন, এই ঘর তিনটি হয়তো গরিব-অসহায়দের পরিবর্তে সচ্ছল ব্যক্তিরা পেয়ে গেছেন। তাই তারা বসবাস করেন না। ঘরগুলো তাদের কাছ থেকে ফিরিয়ে নিয়ে স্থানীয় গরিব ও অসহায়দের মধ্যে বিতরণের দাবি জানান তিনি।
উপহারের ঘরের সামনে আবু বক্করের দোকান। তিনি বলেন, ‘ঘরগুলো দেওয়ার সময় মাঝে মধ্যে তারা আসত। কিন্তু গত এক বছর কেউ আর আসে না।’
নজিবুর রহমান নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘এই উপহারের ঘরের মাটিতে আমার বাড়ি ছিল। আমাকে উঠিয়ে দিয়ে গুচ্ছগ্রাম করা হয়েছে। কিন্তু লাভ কী হয়েছে? তারা তো ঘর পেয়েও থাকছে না। আমার থাকার স্থান নেই। আমাকে একটা ঘর দিলে তো বসবাস করতে পারতাম।’
শাকির রহমান নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ঘরগুলোতে বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে সবধরনের সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। তারপরও দেখছি গত ছয়মাস ধরে ঘরগুলো তালাবদ্ধ।
এ বিষয়ে রহনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান সোহরাব বলেন, যারা উপহারের ঘর পেয়েও থাকছিলেন না তাদের আমরা চিঠি দিয়েছি। তারপরও যদি তারা না থাকেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কিছু মানুষ কর্মসংস্থানের জন্য ঢাকায় রয়েছেন বলে জানান তিনি।
জানতে চাইলে গোমস্তাপুর ইউএনও আসমা খাতুন জাগো নিউজকে বলেন, ঘর পেয়েও যারা ঘরে বসবাস করছেন না তাদের তালিকা করা হচ্ছে। কিছু ব্যক্তিকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ১০ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান বলেন, যদি কোনো সচ্ছল ব্যক্তির নামে ঘর বরাদ্দ হয়ে থাকে তাহলে তাদের নাম কেটে গরিব-অসহায় মানুষকে দেওয়া হবে।
এসআর/এমএস