সিরাজগঞ্জে ৫২১ বিদ্যালয়ে নেই খেলার মাঠ
শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অন্যতম মাধ্যম খেলাধুলা। এর জন্য প্রয়োজন মাঠ। খেলাধুলা ছাড়াও সমাবেশ আয়োজন ও শ্রেণিকক্ষের বাইরে পাঠদানের জন্য প্রয়োজন হয় একটি সুন্দর মাঠের। কিন্তু সিরাজগঞ্জে ৫২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই কোনো খেলার মাঠ। একই অবস্থা কিন্ডারগার্টেনগুলোতেও। ফলে শিশুদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার নয় উপজেলায় এক হাজার ৬৭১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও ৫২১টিতেই নেই খেলার মাঠ। এর মধ্যে রায়গঞ্জে ১৮৫টির মধ্যে ১২০টি, সিরাজগঞ্জ সদরে ২৪৬টির মধ্যে ২০টি, বেলকুচির ১৫৪টির মধ্যে পাঁচটি, উল্লাপাড়ার ২৭৮টির মধ্যে ৭৮টি, কাজীপুরের ২৩৭টির মধ্যে ১১৪টি, চৌহালীর ১২৮টির মধ্যে ১৫টি, কামারখন্দে ৮৩টির মধ্যে ১৫টি, তাড়াশ ১৩৬টির মধ্যে ৮২টি ও শাহজাদপুরের ২২৪টির মধ্যে ৭২টি বিদ্যালয়ে নেই কোনো খেলার মাঠ।
সিরাজগঞ্জ প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, জেলায় প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত তিন লাখ ৯৫ হাজার ৭৪৯ শিক্ষার্থীর বিপরীতে এক হাজার ১৫০টি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ থাকলেও আয়তনে তা খুবই সরু। এদের মধ্যে প্রায় ৩২০টি খেলার মাঠকে প্রতিষ্ঠানের উঠান বলা যেতে পারে।
এ ছাড়া জেলায় বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) বিদ্যালয় ৩১০টি, কিন্ডারগার্টেন ৫২৬টি, উচ্চবিদ্যালয় সংযুক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় আটটিসহ অন্যান্য প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে ১২৯টি। এগুলোর অধিকাংশেই কোনো খেলার মাঠ নেই।
রায়গঞ্জ উপজেলার চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রহিচ উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, আমার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রায় তিন শতাধিক। এদের মধ্যে ৯০ ভাগ শিক্ষার্থী নিয়মিত উপস্থিত থাকে। তবে একটি খেলার মাঠের অভাবে শিক্ষার্থীরা সহশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
জেলা সদরের ঐতিহ্যবাহী মোহাম্মাদীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, মাঠ তো দূরে থাক স্কুলগুলোই যেন পাখির খাঁচা।
রায়গঞ্জ উপজেলার চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী সাবিনা খাতুন বলেন, আমাদের বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ না থাকায় আমরা খেলতে পারি না। মাঠ থাকলে আমরা নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা করতাম।
রৌহাদহ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা শিরিন আকতার জাগো নিউজকে বলেন, বিদ্যালয়ে প্রায় ২৫০ শিক্ষার্থী আছে। নিয়মিত উপস্থিতির হার ৯৫ ভাগ। খেলাধুলার অভাবে এসব কোমলমতি শিশুরা অমনোযোগী হয়ে পড়ছে পড়াশোনায়।
রায়গঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আপেল মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, এ উপজেলায় ১৮৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১২০টিতেই খেলার মাঠ নেই। এতে শিক্ষার্থীরা খেলার জায়গার অভাব ঘোচাতে উদ্বেগজনক হারে স্মার্টফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। যা তাদের মনস্তাত্ত্বিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এ বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, শিশুদের মানসিক বিকাশ এবং সুশৃঙ্খল জীবন গড়ে তুলতে খেলাধুলার বিকল্প নেই। বিদ্যালয়গুলোতে মাঠ না থাকার বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালক বরাবর একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে।
জেএস/জিকেএস