মৌলভীবাজারের পর্যটন
অপার সম্ভাবনা থাকলেও সমস্যা অনেক
মৌলভীবাজার জেলায় রয়েছে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা। প্রাকৃতিক সবুজ বন, হাওর ও পাহাড়ি টিলার বৈচিত্র্যময় পরিবেশের কারণে পর্যটকরা এখানে ছুটে আসেন। মনকাড়া সবুজ বন-বনানী উঁচু নিচু পাহাড় টিলার ভাঁজে ভাঁজে আছে সৌন্দর্যের হাতছানি। কেবল পাঁচতারা হোটেল আর রিসোর্ট বাড়ালেই জেলার পর্যটন খাত উন্নত হবে না। তার আগে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা পর্যটন স্পটগুলো সংরক্ষণ ও আকর্ষণীয় করে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। নতুবা এক সময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাবে মৌলভীবাজার। এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞ ও পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
জেলা প্রশাসন জানিয়েছেন, সরকার নিরাপত্তা দেবে ও রাস্তাঘাট সংস্কার করবে। ব্যক্তিপর্যায়ে উদ্যোক্তা বাড়াতে হবে, উন্নত যানবাহনের ব্যবস্থা করতে হবে। আবাসন ব্যবস্থায় বৈষম্য দূর করতে হবে। লোকেশন গাইডার বাড়ানো প্রয়োজন। তবেই ব্যাপক হারে পর্যটক আসবেন।
স্থানীয় পরিবেশ কর্মী ও পর্যটকরা বলেন, মাত্র ৫ থেকে ৭ বছরে হোটেল মোটেল ও রিসোর্টে সয়লাব শ্রীমঙ্গলের রামনগর, রাধানগরসহ বিভিন্ন এলাকা।
তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানান, পর্যটকদের নিয়ন্ত্রিত আসা যাওয়ার ব্যবস্থা করার। হইহুল্লোর আর বেপোরোয়া চলাফেরা নজরদারির আওতায় আনা প্রয়োজন। না হলে দ্রুত বন ও পরিবেশের ক্ষতি হবে।
পরিবেশকর্মী মুরাদ হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, মৌলভীবাজারের পর্যটন বলতে শ্রীমঙ্গলের নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে বোঝায়। এখানে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। পরিবেশের প্রতি নজর দিয়ে চিহ্নিত সমস্যাগুলো সমাধান করলে এগিয়ে যাবে চায়ের রাজ্য শ্রীমঙ্গল।
বাংলাদেশ পরিবেশ সাংবাদিক ফোরাম মৌলভীবাজার শাখার সাধারণ সম্পাদক নুরুল মোহাইমিন মিল্টন জাগো নিউজকে বলেন, ভ্রমণপিপাসুদের অনিয়ন্ত্রিত আনাগোনা আর বনের গভীরতা কমে যাওয়ায় জাতীয় উদ্যান লাউয়াছড়া ফাঁকা হয়ে আসছে। এতে লোকালয়ে খাবারের অভাবে বেড়িয়ে আসছে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য। বাণিজ্যিকভাবে শ্রীমঙ্গলে অনেক হোটেল মোটেল ও রিসোর্ট গড়ে উঠেছে। যদি এর সঙ্গে প্রাকৃতিক পরিবেশের সৌন্দর্যবর্ধন না করা হয় তবে অচিরেই ধ্বংস হবে পর্যটন স্পটগুলো।
ট্যুরিজ সংশ্লিষ্ট তাপস দাস জাগো নিউজকে বলেন, শ্রীমঙ্গলের রামনগরে বিচিত্র নামের ১৫টি রিসোর্ট ও ইকো কটেজ রয়েছে। বিদেশিদের পছন্দ ন্যাচারাল ইকো কটেজ বা রিসোর্ট। এখানে চা বাগানের অন্যরকম প্ল্যানটেশন তাদের আকৃষ্ট করে। কিন্তু টি ট্যুরিজম সহজ না হওয়ায় অনেক সময় বিরক্ত হন বিদেশি পর্যটকরা। শ্রীমঙ্গলের হাইল হাওর ও বাইক্কাবিলকেন্দ্রিক ওয়াটার বেস ট্যুরিজম গড়ে তোলা যেতে পারে।
পর্যটনসেবা সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কাজী সামছুল হক জাগো নিউজকে বলেন, পর্যটনের জন্য খুবই সম্ভাবনাময় হচ্ছে জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা। জমিজমা নিয়ে আইনের যাঁতাকলে স্থানীয় উদ্যোক্তারা। এর ফাঁকে বাইরের লোকজন এসে এখানে রিসোর্ট কটেজ গড়ে তোলার সুযোগ পাচ্ছে। যে কারণে স্থানীয়রা এগিয়ে আসছে না। স্থানীয়রা এগিয়ে না এলে পর্যটনশিল্প উন্নত হবে না। ঢাকা থেকে শ্রীমঙ্গলের দূরত্ব অনেক কম। তাই ভ্রমণপিপাসুরা সহজে এখোনে সুযোগ পেলেই বেড়াতে আসেন। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও ট্রেনের টিকিটের সংকট যাচ্ছে না। এতে বেড়াতে আসা পর্যটকরা পড়েন বেকায়দায়। এছাড়া শ্রীমঙ্গল শহরের রাস্তাঘাটের বেহাল অবস্থা। সাধারণ যাত্রীদের যাতায়াতে অনেক কষ্ট হয়।
পর্যটনসেবা সংস্থার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সেলিম আহমদ জাগো নিউজকে বলেন, পাঁচতারা হোটেল ও রিসোর্ট বাড়ালে পর্যটন জেলা মৌলভীবাজারের পর্যটন খাত উন্নত হবে না। তার আগে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা ট্যুরিজ স্পটগুলো সংরক্ষণ ও আকর্ষণীয় করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিতে হবে। নতুবা এক সময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য হারাবে পর্যটন জেলা মৌলভীবাজার।
পর্যটকবান্ধব জেলা প্রশাসক মীর নাগিদ আহসান বলেন, স্থানীয় উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। আমরা সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেব। পর্যটকদের নিরাপত্তা দিতে আমরা বদ্ধপরিকর।
তিনি পর্যটন সেবাদানকারী সংস্থার প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, লোকেশন গাইড জোরদার করতে হবে। রিসোর্টের মান বুঝে ভাড়া নিতে হবে। ট্রেন থেকে নেমেই যাতে ভ্রমণপিপাসুরা গাইডের সহযোগিতা নিয়ে সহজে ভ্রমণ করতে পারেন। ব্যবস্থাপকদের আরও যত্নশীল হতে হবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষার জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এসএইচএস/জেআইএম