সরকারি পর্যটনকেন্দ্র না থাকায় পিছিয়ে সাতক্ষীরা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ০৫:৪৩ পিএম, ০১ ডিসেম্বর ২০২২
কোনো সরকারি পর্যটন কেন্দ্র নেই সাতক্ষীরায়-ছবি জাগো নিউজ

অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাগর পাড়ের শেষ জেলা সাতক্ষীরা। সুন্দরবনের কোলে অবস্থিত এ জেলাটিতে রয়েছে পর্যটনের অফুরন্ত সম্ভাবনা। তবে এই জেলায় এখনো সরকারিভাবে কোনো হোটেল মোটেল বা পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়নি।

সরাসরি সড়কপথে সুন্দরবনে আসা যায় একমাত্র সাতক্ষীরা থেকে। অথচ সুন্দরবনে কয়েকটি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র ছাড়া কোনো আবাসিক পর্যটনকেন্দ্র নেই। কিছু এলাকায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে বিনোদনকেন্দ্র ও পিকনিক স্পট। এছাড়া ভোমরা স্থলবন্দরসহ জেলায় রয়েছে মোট ৭৭টি ঐতিহাসিক স্থাপনা। এখানকার নয়নাভিরাম দৃশ্য পর্যটক আকর্ষণে ভূমিকা রাখতে পারে। তবে সুন্দরবনসহ এখানকার বেশিরভাগ পর্যটনকেন্দ্রে রাতযাপনের জন্য নেই আবাসিক কোনো ব্যবস্থা।

সরকারি পর্যটনকেন্দ্র না থাকায় পিছিয়ে সাতক্ষীরা

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারিভাবে পর্যটনকেন্দ্র, আবাসিক হোটেল-মোটেল নির্মাণসহ ও বিদ্যমান সংকট দূর করে পর্যটনবান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারলে দেশের পর্যটন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে সাতক্ষীরা জেলা।

সরকারি পর্যটনকেন্দ্র না থাকায় পিছিয়ে সাতক্ষীরা

সুন্দরবন ভ্রমণের সবচেয়ে নিরাপদ রুট সাতক্ষীরা। শুধু সুন্দরবন নয়। সাতক্ষীরা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়েছে ঐতিহাসিক নানা স্থাপনার জন্য। এসব স্থাপনার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ঈশ্বরীপুরের পাঁচ গম্বুজবিশিষ্ট ঐতিহাসিক শাহী মসজিদ। কালীগঞ্জে মোগল আমলে নির্মিত প্রবাজপুর শাহী মসজিদ, যশোরেশ্বরী কালীমন্দির, জমিদার রায় বাহাদুর হরিচরণ রায় চৌধুরীর বাড়ি, মন্দির ও নহবতখানা, রাজা প্রতাপাদিত্যর জাহাজঘাটা নৌদুর্গ, রাজকীয় হাম্মামখানাসহ নানা ঐতিহাসিক স্থাপনা।

অন্যদিকে, পর্যটক টানতে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সাতক্ষীরা দেবহাটা উপজেলার ইছামতির পাড়ে গড়ে তোলা হয়েছে রূপসি ম্যানগ্রোভ পর্যটনকেন্দ্রসহ ছয়টি ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র। এছাড়া জেলায় বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে তোলা হয়েছে ‘মোজাফফর গার্ডেন’ নামে একটি বিনোদনকেন্দ্র।

সরকারি পর্যটনকেন্দ্র না থাকায় পিছিয়ে সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নুর খান বাবুল জাগো নিউজকে বলেন, ‘সাতক্ষীরার পর্যটন সম্ভাবনা অসীম। তবে, এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে সরকারিভাবে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা সাতক্ষীরার পর্যটন সম্ভাবনাকে ম্লান করে দিচ্ছে। এছাড়া সড়কপথে সুন্দরবন দর্শনের একমাত্র পথ সাতক্ষীরা হলেও কর্তৃপক্ষের অবহেলায় সাতক্ষীরা রেঞ্জের ফরেস্ট স্টেশনগুলো থেকে এখনও বনে রাতযাপনের পাস দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়নি। পাস নিতে যেতে হয় খুলনায়।’

তিনি বলেন, সাতক্ষীরা পর্যটনকেন্দ্রগুলোর প্রচার প্রচারণা কম। রয়েছে খাবার ও আবাসিক সমস্যা। সড়কপথ ছাড়া অন্য কোনো যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় অনেকে এদিকে ঘুরতে আসতে চান না। সাতক্ষীরার পর্যটন খাত এগিয়ে নিতে হলে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় সরকারিভাবে পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণ করতে হবে।

সরকারি পর্যটনকেন্দ্র না থাকায় পিছিয়ে সাতক্ষীরা

জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ জাগো নিউজকে বলেন, শুধু বাংলাদেশি পর্যটক নন, সীমান্ত জেলা হওয়ায় ভারতীয়দের কাছেও গুরুত্ব বাড়ছে সাতক্ষীরা জেলার। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই। সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য আধুনিক নৌযান নেই। বন বিভাগের কড়াকড়ি ও রাজস্ব বৃদ্ধির কারণে এখন অনেকেই সুন্দরবন ভ্রমণে আসতে চান না।

তিনি বলেন, সাতক্ষীরায় পর্যটন শিল্পের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে কখনই সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এখনও সাতক্ষীরা জেলার কোনো স্থানকে সরকারিভাবে পর্যটন এলাকা ঘোষণা করা হয়নি।

সরকারি পর্যটনকেন্দ্র না থাকায় পিছিয়ে সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মো. হুমায়ুন কবির জাগো নিউজকে বলেন, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সুন্দরবনের পাশে নির্মিত আকাশনীলা ইকোট্যুরিজম সেন্টারটি বর্তমানে পর্যটকদের কাছে বেশ জনপ্রিয় স্থান। এছাড়া জেলায় ছয়টি উপজেলায় ইকোট্যুরিজম কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে। এছাড়া জেলার পর্যটন খাত সমৃদ্ধ করতে জেলা ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে ‘সাতক্ষীরার আকর্ষণ, সড়কপথে সুন্দরবন’ নামে।

তিনি বলেন, জেলার পর্যটন খাতের উন্নয়নের জন্য সড়ক নির্মাণ, পর্যটনকেন্দ্র নির্মাণের জন্য এরই মধ্যে বেশকিছু প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে এ খাতে উন্নয়নকাজ শুরু হবে।

এসএইচএস/জেআইএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।