আলু চাষে বাড়ছে খরচ, চড়া দামে কিনতে হচ্ছে সার-বীজ

মো: রাশেদুজ্জামান
মো: রাশেদুজ্জামান মো: রাশেদুজ্জামান জয়পুরহাট
প্রকাশিত: ০৭:০২ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০২২

আলু রোপণ মৌসুমের শুরুতেই ন্যায্য মূল্যে পটাশ সার ও আলুবীজ মিলছে না জয়পুরহাটে। চাহিদার কারণেই প্রতি বস্তা পটাশ ও মানসম্মত আলুবীজ বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষকরা। বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় বছরের পর বছর কৃষকরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ।

এদিকে, চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে বলে দাবি কৃষি বিভাগের। কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে কোথাও সার ও বীজের দাম বেশি নেওয়া হলে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস জেলা কৃষি কর্মকর্তার।

jagonews24

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম আলু উৎপাদনকারী জেলা জয়পুরহাটে এবার সাড়ে ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আলুচাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এর বিপরীতে এবার আলুবীজের চাহিদা রয়েছে ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু মানসম্মত বীজ আলুর জন্য জয়পুরহাট বিএডিসি থেকে কোনো বরাদ্দ না দিয়ে আঞ্চলিক কার্যালয় বগুড়া থেকে দেওয়া হয় এ জেলার বীজ আলুর বরাদ্দ। ফলে মানসম্মত আলুবীজের দাম বেশ চড়া।

এদিকে, চলতি মাসে ১ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন পটাশসহ জেলায় সারের মোট বরাদ্দ মিলেছে ৫ হাজার ৯৮ মেট্রিক টন। চাহিদানুযায়ী বিশেষ করে পটাশ সারের যথেষ্ট সরবরাহ না থাকায় সুযোগ বুঝে দোকানিরা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছেন বলে অভিযোগ করেন আলুচাষিরা। পণ্য বিক্রির রশিদ সরবরাহের নিয়ম থাকলেও বেশি দামে বিক্রি করায় কোনো কৃষককে রশিদ দেওয়া হয় না। মৌসুম শুরুর মুহূর্তে প্রয়োজনের স্বার্থে বাধ্য হয়ে বেশি দামে সার ও আলুবীজ সংগ্রহ করছেন কৃষকরা।

jagonews24

জয়পুরহাট সদর উপজেলার কোমড়গ্রামের জবাদুল ইসলাম জানান, তিনি এবার ১০ বিঘা জমিতে অ্যাস্টেরিক জাতের আলু রোপণ করবেন। ১ হাজার ৬০০ টাকার আলুর বীজ বস্তাপ্রতি কিনতে হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকায়।

জয়পুরহাট সদর উপজেলার ধারকী কোমড়গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, জমি প্রস্তুত করার পরে পটাশ সারের প্রয়োজন বেশি হয়, কারণ এই সার আলুর শিকড় গজাতে সাহায্য করে। এক বস্তা পটাশ সারের সঙ্গে দুই অথবা তিন বস্তা অন্যান্য সার জোর করে দিচ্ছে না হলে ৪০০-৫০০ টাকা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।

jagonews24

ক্ষেতলাল উপজেলার হিন্দা গ্রামের জাহিদুল ইসলাম বলেন, ছয় বিঘা জমিতে আলু লাগিয়েছি। বস্তাপ্রতি সার কিনতে গিয়ে ইউরিয়ায় ১০০ টাকা, পটাশে ৫০০ টাকা ও ফসফেটে ২৫০ টাকা বেশি গুনতে হচ্ছে।

কালাই উপজেলার সরাইল গ্রামের রওনুকুল ইসলাম বলেন, মানসম্মত আলুবীজের নির্ধারিত মূল্য এক হাজার ৬০০ টাকা হলেও তা কিনতে হচ্ছে ২ হাজার ২০০ টাকা করে।

পাঁচবিবি উপজেলার শিরট্রি গ্রামের কৃষক হেলাল মণ্ডল বলেন, সার ব্যবসায়ীরা রসিদে লেখেন সরকারি মূল্যে আর আলাদা স্লিপে বিক্রি মূল্য। কৃষকরা যেন ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। আলু উৎপাদন করতে গত বারের চেয়ে এবার বিঘাপ্রতি ছয় থেকে সাত হাজার টাকা বেশি খরচ হলেও আলু বিক্রি করার সময় দাম পাওয়া যায় না। আলু রোপণ মৌসুমে বাজার মনিটরিংসহ সরকারের দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন।

jagonews24

তবে সংকট নেই দাবি করে পাঁচবিবির বিসিআইসি অনুমোদিত সার ডিলার রাজেশ কুমার গুপ্ত বলেন, পটাশ সারসহ অন্যান্য সার যথেষ্ট পরিমাণে আছে, কোনো ঘাটতি নেই। তবে ভালো ফলনের আশায় বেশি করে জমিতে পটাশ সার প্রয়োগ করছেন কৃষকরা। এজন্য তারা বেশি করে পটাশ সার চাচ্ছেন যা আমরা দিতে পারছি না।

জয়পুরহাট সদরের প্রথম শ্রেণির আলুবীজ ডিলার গোলাম রব্বানী বলেন, সামগ্রিকভাবে আলু বীজের কোনো সংকট নেই। তবে নির্দিষ্ট কিছু কোম্পানির বীজের সংকট রয়েছে।

jagonews24

জয়পুরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ মজিবুর রহমান বলেন, এবার প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে আলু রোপণে সব জাত মিলিয়ে প্রায় ৪৪ হাজার মেট্রিক টন বীজের চাহিদার বিপরীতে পর্যাপ্ত মজুত রয়েছে। এছাড়া অধিকাংশ কৃষকই স্থানীয় পর্যায়ে বীজ সংরক্ষণ করেছেন। আর চলতি মাসে টিএসপিসহ অন্যান্য সার মিলে মোট বরাদ্দ মিলেছে পাঁচ হাজার ৯৮ মেট্রিক টন। ডিসেম্বর মাসে আরও পাওয়া যাবে।

পটাশ সার ও আলুবীজ সংকটসহ মূল্য বৃদ্ধির অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন, বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে। অভিযোগ পাওয়া মাত্র কঠোর ব্যবস্থার নেওয়া হবে।

এমআরআর/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।