অর্থাভাবে সুযোগ হয়নি প্রাইভেট পড়ার
টিউশনি করা দুই যমজ বোন পেল ‘গোল্ডেন এ প্লাস’
একসঙ্গে জন্ম, একসঙ্গে বেড়ে ওঠা। প্রাথমিক, মাধ্যমিকে পড়েছে একই প্রতিষ্ঠানে। দুই পরীক্ষাতে দুজনের ফলাফলও একই। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম বাবা দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগী। টিউশনি করে কোনোরকম সংসার চালাচ্ছেন মা।
তবুও লেখাপড়া থেকে একচুল পিছু হটেনি কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ধুবইল গ্রামের হাজীপাড়ার আশরাফুল ইসলামের মেয়ে সামিয়া খাতুন ও সাদিয়া খাতুন নামের যমজ দুই বোন। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে বেড়ে ওঠা এই দুই বোন নিজেরা টিউশনি করে পড়ালেখার খরচ মিটিয়ে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পেয়েছে ‘গোল্ডেন এ প্লাস’।
দুজনই মিরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। যমজ এই দুই বোনের এমন সাফল্যে খুশি সহপাঠী, পরিবার, গ্রামবাসীসহ স্কুলের শিক্ষকরা। সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের সামিয়া-সাদিয়ার পাশে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
প্রতিবেশী সোনিয়া খাতুন বলেন, ‘সামিয়া ও সাদিয়া যমজ দুই বোন। তাদের বাবা আশরাফুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে বাড়িতেই থাকেন। বাড়ির আশপাশের ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট পড়িয়ে এবং পৈতৃক সূত্রে পাওয়া স্বামীর সামান্য মাঠের জমি লিজ দিয়ে কোনোরকম সংসার চালাচ্ছেন এই দুই বোনের মা।’
আরেক প্রতিবেশী শামিম বলেন, অর্থের অভাবে সামিয়া-সাদিয়া কখনো প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়তে পারেনি। বরং তারা নিজেরা প্রাইভেট পড়িয়ে লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছে। এ অবস্থাতেও তারা গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে। তাদের উচ্চশিক্ষার জন্য সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।
অনুভূতি জানতে চাইলে সামিয়া ও সাদিয়া বলে, ‘বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মায়ের সহযোগিতায় আমরা ভালো ফলাফল করতে সক্ষম হয়েছি। এজন্য আমরা সবার কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা যেন আরও ভালো ফলাফল করে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারি, সেজন্য সবার কাছে দোয়া চাই।’
সামিয়া ও সাদিয়ার মা আসমা খাতুন বলেন, তিন মেয়েকে নিয়েই আমার সংসার। বড় মেয়ে নির্জনা আক্তার শননও ছিল মেধাবী। এসএসসিতে সে এ প্লাস পেয়ে বর্তমানে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে। চরম প্রতিকূলতার মধ্যেও নিজেদের প্রচেষ্টায় মেয়েদের এমন সাফল্যে আমি দারুণ খুশি। মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে সরকারসহ সমাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে মিরপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাশিদা বানু বলেন, অভাবের সংসারে বেড়ে ওঠা যমজ দুই বোন সামিয়া-সাদিয়ার এমন সাফল্যে অভিভূত স্কুলের শিক্ষকরা। তাদের উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি।
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল কাদের বলেন, সামিয়া ও সাদিয়ার জন্য শুভ কামনা। তাদের মেধা বিকাশে সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে আসবে, এমনটাই প্রত্যাশা করি।
আল মামুন সাগর/এসআর/এএসএম