আশ্রয়ণের ঘর পেয়েও থাকেন ভাড়া বাসায়
ফরিদা বেগম (৫৫)। গাইবান্ধা সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের সুরেরভিটা গ্রামে থাকতেন। এখন থাকেন ইউনিয়নের হরিণসিংহা আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১১২ নম্বর ঘরে। তবে ঘরটি ফরিদার নামে বরাদ্দ নেই। একই ইউনিয়নের টাটা রহিমের বাড়ি এলাকার বাসিন্দা মজিদা-জবিয়াল দম্পতি এ ঘরের মালিক। সপ্তাহ দুয়েক আগে তিন সন্তানের জননী ফরিদাকে ঢাকা থেকে ডেকে এনে ওখানে থাকতে দেন মজিদা-জবিয়াল দম্পতি। পরে আকার ইঙ্গিতে টাকা দাবি করলে তা না দেওয়ায় সপ্তাহখানেক না যেতেই ফরিদাকে ঘর ছেড়ে দিতে বলেন তারা।
ফরিদা বেগম বলেন, মজিদা সম্পর্কে ভাতিজি হয়। আমি ঢাকায় বাসাবাড়িতে কাজ করতাম। ফোন দিয়ে ডেকে এনে আমাকে বলে, ‘হামার তো সবই আছে, তোমার তো কিছুই নাই। হামরা একটা ঘর পাছি, তুমি এটি আসি থাকো। কামের ব্যবস্থা হামরাই করি দেমো। তিনদিন না যাইতেই ঘর থাকি বাইর করি দিয়া দরজায় তালা দেয় মজিদা। তারা বলে ওমুকে ট্যাকা চাছে ৮০ হাজার। হামাক আর কয় না তুমি নেও। পরে আশপাশের সবাই বলে কয়ে ঘরের তালা খুলি দিছে।’
সাংবাদিকের উপস্থিতিতে গাঢাকা দেয় মজিদা-জবিয়াল। তবে তাদের নানা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী সরকার জাগো নিউজকে বলেন, জবিয়ালের বউ (মজিদা) যে কি উদ্দেশ্যে ফরিদাকে ঢাকা থেকে নিয়ে আসলো তা বুঝতেছি না। একজনের জমি জায়গা সব আছে, চাষাবাদও করে। তার এখানে ঘর পাওয়ার কোনো যুক্তিই আসে না। এটা মেনে নেওয়ার মতো নয়।
এ অবস্থা শুধু মজিদা-জবিয়াল দম্পতির নয়। একই অবস্থা ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের রফিকুল, সাইদ ও সম্পা-লাভলু দম্পতিরও। তারা কেউই থাকেন না এই ঘরগুলোতে।
ফরিদা বেগম, সম্পা বেগম ও স্বপ্না রানী-ছবি জাগো নিউজ
সম্পা বেগম জাগো নিউজকে বলেন, নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্টে কাজ করি। আশ্রয়ণের ঘরে মাঝে মধ্যে যাই। আমার মাকে ওই ঘরে থাকতে বলেছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়া এক নারী বলেন, এখানে অনেক ঘরে তালা মারা থাকে। মাঝে মাঝে দু-একটা ঘর খুলে দেখে আবার তালা মেরে চলে যায়। কী নাম কোথায় থাকে কেউ জানে না।
সদর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়নের চৌদ্দগৌরিসিং গ্রামের আরেক আশ্রয়ণ প্রকল্প। ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পাওয়া রাম বাবুরও একই অবস্থা। থাকেন জেলা শহরে।
রাম বাবুর স্ত্রী স্বপ্না রানী বলেন, শহরে ভাড়া বাসায় থাকি। ছোট এক মেয়েসহ বিয়ের উপযোগী দুই মেয়েকে নিয়ে খুব সমস্যায় আছি। মেয়েরা শহরে লেখাপড়া করে। আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে শহর দূরে হয়, তাই শহরে থাকি। আশ্রয়ণের ঘরে মাঝে মধ্যে যাই।
সেলিনা বেগমের ছেলে শান্ত- ছবি জাগো নিউজ
একই অবস্থা শম্ভু, জুথিকা, চন্দন, মদন কুমার ও সেলিনা বেগমেরও। তারাও কেউ থাকেন না চৌদ্দগৌরিসিং আশ্রয়ণের ঘরে। শহরের টাবুপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকেন সেলিনা বেগম। কথা হয় তার ছেলে হারুন অর-রশিদ শান্তর সঙ্গে।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, মা দর্জির কাজ করেন। আড়াই তিন বছর হলো এখানে আছি। আশ্রয়ণের ঘরে গেলে কাস্টমার থাকবে না। তাই এখানে থাকি। ওখানে মাঝে মধ্যে গিয়ে থাকি।
চৌদ্দগৌরিসিং গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসরত বাবলু মিয়া (৪৫), নয়া মিয়া (৫৫) ও মূসা মিয়া (৩৮)। তারা জাগো নিউজকে বলেন, প্রকল্পে ঘর অনেকেই দখলে রেখেছে। তবে কেউ থাকে না। প্রায় এক বছরের বেশি সময় ধরে এখানে বসবাস করছি। ঘর দখল নেওয়া অনেকেই মাঝে মধ্যে এসে দেখে যান, কিন্তু থাকেন না।
আশ্রয়ণের ঘর পেয়েও থাকেন না অনেকে-ছবি জাগো নিউজ
এ বিষয়ে বোয়ালী ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আক্কাস আলী ইলিয়াস জাগো নিউজকে বলেন, আমাদের শুধু দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ঘর পেয়েও যদি কেউ না থাকে তাহলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানো হবে।
গাইবান্ধা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শরীফুল আলম বলেন, ঘর দখলে রেখেছেন, কিন্তু থাকেন না এমন অভিযোগ আমাদের কাছে নেই। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এমন থাকলে ঘরের মালিকানা বাতিল করা হবে।
জেলা প্রশাসক অলিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বরাদ্দকৃত ঘরে সবারই থাকার কথা। যদি কেউ না থাকে তার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। কেউ কাজের সন্ধানে বিভিন্ন যায়গায় যেতে পারে। এরপরও যাচাই বাছাই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। যদি বরাদ্দ পাওয়ার পরও ঘরে না থাকে সেক্ষেত্রে বিকল্প ব্যবস্থা রয়েছে।
এএইচ/এসএইচএস/জেআইএম