বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর

কর্মহীন হওয়ার শঙ্কায় পাথরনির্ভর ১০ হাজার শ্রমিক

সফিকুল আলম
সফিকুল আলম সফিকুল আলম , জেলা প্রতিনিধি পঞ্চগড়
প্রকাশিত: ০৬:৩৩ পিএম, ১৭ নভেম্বর ২০২২

ডলার সংকটে চাহিদা মতো এলসি দিতে না পারায় পাথর আমদানিতে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে। এতে দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় এ স্থলবন্দরে ১০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হওয়ার শঙ্কায় রয়েছে। আগের এলসিতে পাথরসহ অন্যান্য পণ্য সীমিত আকারে আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে। তবে পাথরনির্ভর এ বন্দরে পর্যাপ্ত আমদানি না হওয়ায় চলছে এক ধরনের স্থবিরতা।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরটি অবস্থানগত কারণে গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে ভারত, নেপাল ও ভুটান বেশ কাছে। বাংলাবান্ধা থেকে ভারতের শিলিগুড়ি শহরের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার এবং নেপালের কাকভিটার দূরত্ব মাত্র ৬১ কিলোমিটার। এছাড়া ভুটানের জয়গা সীমান্তের দূরত্ব মাত্র ৬৮ কিলোমিটার।

jagonews24

চতুর্দেশীয় এই অঞ্চলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রসারে ভৌগোলিক গুরুত্ব বিবেচনায় ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর বাংলাবান্ধা-ফুলবাড়ী বন্দর দিয়ে উভয় দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য শুরু হয়। ২০১১ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের পাশাপাশি নেপালের সঙ্গেও শুরু হয় আমদানি-রপ্তানি। এরপর পাথরসহ আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে যুক্ত হয় ভুটান। তবে অন্য পণ্যের তুলনায় ভারত ও ভুটান থেকে পাথর আমদানি হয় সবচেয়ে বেশি। এক সময় এ বন্দর দিয়ে ভারত ও ভুটান থেকেই প্রতিদিন গড়ে আট হাজার টন পাথর আমদানি হতো। শুধু পাথর আমদানির কারণেই স্থলবন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্য জমে ওঠে। পাথরের কারণে এখানে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। বর্তমানে বন্দরের কুলি শ্রমিক, লোড-আনলোড শ্রমিক, পাথর ভাঙা শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ ২০ হাজারের বেশি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে পাথর আমদানির সঙ্গে জড়িত।

jagonews24

বন্দর ও স্থানীয় সূত্র জানায়, স্থলবন্দর দিয়ে চাল, গম, ভুসি, ভুট্টাসহ খাদ্য ও জরুরি পণ্য আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু চলমান ডলার সংকটের কারণে জরুরি পণ্য ছাড়া অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের জন্য প্রায় একমাস ধরে পাথর আমদানির এলসি কোন ব্যাংকে খোলা হচ্ছে না। এখন যা আসছে তা আগে করা এলসির পাথর। এসব শেষ হলে কবে নাগাদ নতুন এলসির পাথর আমদানি হবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এতে কর্মহীনতার আতঙ্কে রয়েছেন স্থলবন্দরের শ্রমিকসহ ব্যাবসায়ীরা।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের লোড আনলোড শ্রমিক আবদুল জব্বার বলেন, ভারত ও ভুটান থেকে আসা পাথর দিয়েই বন্দর জমজমাট থাকতো। এখন আগের মতো পাথর আসে না। ফলে কাজের অপেক্ষায় সারাদিন বসে থাকি। যে পরিমাণ পাথর আসে তা লোড আনলোডে সব শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না। আমরা চাই অন্য মালামালের সঙ্গে আগের মতো পাথর আমদানি হোক। তা না হলে ১০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে যাবো।

jagonews24

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক মো. নাসিমুল হাসান নাসিম বলেন, এ বন্দর দিয়ে ভারত, নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্য হয়। প্রায় মাসখানেক আগে থেকে ব্যাংকে এলসি না হওয়ায় স্থলবন্দরের ৫০০ শ্রমিক এবং এর বাইরে আরও ১০ হাজার শ্রমিক প্রায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে। এভাবে চললে শুধু শ্রমিক নয়, আমদানি-রপ্তানিকারক, ব্যবসায়ীসহ সবাই কর্মহীন হয়ে পড়বো। এই সমস্যা সমাধানে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের আমদানি রপ্তানিকারক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদরত ই খোদা মিলন বলেন, বাংলাবান্ধা একটি চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর এবং আমদানিকৃত পণ্যের মধ্যে ৯০ শতাংশ পাথর। আমদানি করা পাথরকে কেন্দ্র করে এখানে ১০ হাজারের মতো মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। বর্তমানে ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাংকে এলসি খুলতে পারছেন না। এজন্য পাথর আমদানি প্রায় বন্ধ। ফলে ১০ হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়েছেন।

বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর লিমিটেডের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (পোর্ট ইনচার্জ) আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমদানি-রপ্তানি স্বাভাবিক রয়েছে। আগের করা এলসির মাধ্যমে নিয়মিত পাথর আমদানি হচ্ছে। তবে ডলার সংকটের কারণে জরুরি পণ্য ছাড়া কম গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের এলসি বন্ধ রয়েছে। এ সংকট দ্রুত কেটে যাবে বলে মনে করি।

এএইচ/এমএস

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।